রাজনীতির গতি-প্রকৃতির খোঁজ রাখেন খালেদা

রাজনীতির গতি-প্রকৃতির খোঁজ রাখেন খালেদাখালেদা জিয়া

 আর ২৮ দিন পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচন বর্জন করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনে রাজপথে বিএনপি। ‘কিংস পার্টি’ গড়ার চেষ্টায় ভাঙনের মুখ থেকে রক্ষা পেলেও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে দলটি। এ পরিস্থিতিতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কেমন আছেন? দেশ ও দল নিয়ে কি কোনো ভাবনা রয়েছে তাঁর? কোনো দিকনির্দেশনা দেওয়ার অবস্থায় কি রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী? নাকি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে দলীয় ও সমমনা দলের নেতাদের সিদ্ধান্তই ‘সব’? এ ধরনের নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গন ও সচেতন মহলে।

জানা গেছে, গত ২৬ অক্টোবর সফল অস্ত্রোপচারের পর থেকে কিছুটা ভালো আছেন খালেদা জিয়া। তাঁর ফুসফুসে পানি ও পাকস্থলীতে রক্তক্ষরণ বন্ধে ‘টিপস’ করতে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেন বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। এতে তাঁর আগের সংকটাপন্ন অবস্থা থেকে কিছুটা স্বস্তিকর পরিস্থিতি হয়েছে। তবে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতার কারণে এখনও রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। হাসপাতালে টেলিভিশন, পত্রপত্রিকা ও আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের রাজনীতির গতি-প্রকৃতির খোঁজখবর নেন খালেদা জিয়া। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর চলমান আন্দোলন সঠিক পথে এগোচ্ছে বলে মনে করেন এবং সফলতার ব্যাপারেও তিনি আশাবাদী।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপির আন্দোলন সম্পর্কে কোনো দিকনির্দেশনা দেন না শর্ত সাপেক্ষে জামিনে মুক্ত খালেদা জিয়া। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি ও সমমনা দলগুলোর সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আস্থা রয়েছে তাঁর। যতটুকু সম্ভব দেশ-বিদেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে তিনি কোনো সিদ্ধান্ত বা দিকনির্দেশনা দেওয়ার পর্যায়ে নেই।

তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন হাসপাতালে অবস্থান করে সার্বিক চিকিৎসা ব্যবস্থা সমন্বয় করছেন।

অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ সমকালকে বলেন, অস্ত্রোপচারের পর খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অনেকটা উন্নতি হয়েছে। বর্তমানে তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলা যায়। মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন তিনি। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে তাঁর সার্বিক চিকিৎসার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।

জানা গেছে, খালেদা জিয়াকে দেখভালের জন্য তাঁর ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি বিদেশ থেকে চলে এসেছেন। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে সার্বক্ষণিক থেকে দেখভাল করছেন। প্রতিদিন সকালে বাসা থেকে খাবার তৈরি করে এনে খালেদা জিয়াকে খাওয়ান। একই সঙ্গে ভাইবোনসহ আত্মীয়স্বজন মাঝেমধ্যে হাসপাতালে যান খালেদা জিয়ার পছন্দের খাবার নিয়ে। বিশেষ করে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ও বড় বোন সেলিমা ইসলাম দেখতে যান বেশি।

সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া চিকিৎসা নেওয়ার ফাঁকে ফাঁকে টেলিভিশন দেখেন। পত্রপত্রিকা পড়েন। উপস্থিত আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথাবার্তা বলে সময় কাটান। এ সময় তিনি দেশ-বিদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানাতে চান। তবে নিজ থেকে কোনো মন্তব্য করেন না।

সূত্র আরও জানায়, লন্ডন থেকে ছেলে ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রায় প্রতিদিন টেলিফোন করে খোঁজখবর নেন। একই সঙ্গে তাঁর স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান চিকিৎসা ব্যবস্থার খোঁজখবর নেন এবং পরামর্শ দেন। চিকিৎসকদের সঙ্গে সার্বিক বিষয়ে মতবিনিময় করেন তিনি। এ ছাড়া মাঝেমধ্যে তারেক রহমানের মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমান এবং কোকোর দুই মেয়ে জাহিয়া রহমান ও জাফিয়া রহমানের সঙ্গেও টেলিফোনে কথা বলেন খালেদা জিয়া।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সমকালকে বলেন, উনি (খালেদা জিয়া) এখনও কার্যত বন্দি। দেশের মানুষের প্রিয় নেত্রীকে সরকার অত্যাচার-নির্যাতন করছে। অস্ত্রোপচারের পর একটি রোগ থেকে কিছুটা উন্নতি হলেও অন্যান্য রোগে ভুগছেন তিনি। সামগ্রিকভাবে এখনও অসুস্থ সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত বিদেশে নেওয়া প্রয়োজন।

গত ৯ আগস্ট থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধায়নে তাঁর চিকিৎসা চলছে। তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। অস্ত্রোপচারের আগের আড়াই মাসে তাঁকে কয়েক দফা সিসিইউতে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাঁর পেটে পানি জমা হওয়ায় সিসিইউতে নিয়ে পানি অপসারণ করতে হয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে তাঁর শারীরিক দুর্বলতা প্রবল হয়ে ওঠে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। লিভার সিরোসিসের কারণে ফুসফুসে পানি জমা ও রক্তক্ষরণ বন্ধে ট্রান্সজুগলার ইন্ট্রাহেপাটিক পোরটোসিসটেমিক সান্ট (টিপস) পদ্ধতি স্থাপন করে মার্কিন চিকিৎসক দল। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হলেন হামিদ আহমেদ আবদুর রব, জেমস পিটার অ্যাডাম হ্যামিলটন ও ক্রিসটোস স্যাভাস জর্জিয়াডেস। তাদের মধ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রফেসর ডা. হামিদ রব জনস হপকিন্সের কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট প্রোগ্রামের পরিচালক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। সহযোগী অধ্যাপক জেমস পিটার হ্যামিলটন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের পরিচালক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ।

দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়া ২০২০ সালের ২৫ মার্চ শর্ত সাপেক্ষে সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্ত হন। তাঁকে বিদেশে নেওয়ার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে একাধিকবার সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে। তাতে সায় না দিয়ে সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, যে শর্তে খালেদা জিয়াকে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়েছে, তাতে এখন তাঁকে বিদেশে যেতে দেওয়ার আইনি সুযোগ নেই। বিদেশে যেতে চাইলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে গিয়ে আদালতে আবেদন করতে হবে অথবা রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।

সূত্র : সমকাল