রাজনীতিকীকরণই সাংবাদিকদের অধিকারহীনতার উৎস

logo

স্টাফ রিপোর্টার

৬ মে ২০২৫, মঙ্গলবার

mzamin

facebook sharing button

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসনামলে সংবাদমাধ্যমে যে ধরনের রাজনীতিকীকরণ হয়েছে, সেটিই মূলত সাংবাদিকদের অধিকারহীনতার উৎস। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ঘটা হত্যা, গুম, খুনের জন্য সম্মতি উৎপাদনের যন্ত্র হিসেবে গণমাধ্যমকে ব্যবহার করা হয়েছে। এই যে মানুষকে হত্যা করা, নির্বিচারে গুম, খুন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা এসব ঘটনা ঘটানোর জন্য সম্মতি উৎপাদনের জন্য গণমাধ্যমকে দরকার ছিল এবং গণমাধ্যম তৈরি করা হয়েছিল এই উদ্দেশ্যে।

গতকাল বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট আয়োজিত ‘ফ্যাসিবাদী শাসনে সাংবাদিক হত্যা-নিপীড়ন’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের হলরুমে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আব্দুল্লাহ।

মাহফুজ আলম বলেন, বিনা নোটিশে হুট করে কোনো সাংবাদিককে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়ার সুযোগ নেই। তিনজন সাংবাদিক চাকরিচ্যুত হয়েছেন, আমরা এর বিরোধিতা করি। সরকার চায় না কোনো সাংবাদিক চাকরিচ্যুত হোক। চাকরিচ্যুত করতে হলে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে, নোটিশ দিয়ে করতে হবে। একটি মানুষের জীবিকার উপর আঘাত আসে, আমরা এমন কিছুর বিরোধিতা করি।
তিনি বলেন, দীপ্ত টিভি কোনো নোটিশ পাঠায়নি কাউকে, এমন ভাবে টেলিভিশনটি সংবাদ প্রচার বন্ধ করে দিয়েছিল, সারা দুনিয়ায় নিউজ হলো, যেন মনে হলো সরকার বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু সরকার তো বন্ধ করেনি। এটা হঠকারিতা। এটা কোনো ভালো লক্ষণ নয়। সরকারের নীতিমালা হলো কোনো কিছু বন্ধ করা হবে না। তবে সংবাদমাধ্যম কোনো দলের হয়ে কাজ করেছে কিনা- সেটা খতিয়ে দেখা হবে।
মাহফুজ আলম বলেন, সরকারকে প্রশ্ন করতে হবে, সরকারকে প্রশ্ন করলে সরকার দায়িত্বশীল হয়। তবে প্রশ্ন আর প্রোপাগান্ডা ভিন্ন ইস্যু। কয়েকটি পত্রিকা এখনো জুলাই অভ্যুত্থান লেখে না, তারা লেখে জুলাই আন্দোলন, তারা বলে না জুলাই অভ্যুত্থানের সরকার, তারা বলে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের সরকার। এর মানে দাঁড়ায়, এখানে দুই হাজার মানুষ শহীদ হয়নি। একটা চক্রান্ত হয়েছিল, সেখানে হাসিনাকে উৎখাত করা হয়েছে। সংবাদমাধ্যম এটা করতে পারে না। এসব সংবাদমাধ্যম বন্ধ করা হয়নি উল্লেখ করে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনাদের চোখের সামনে ঘটেছে সবকিছু। গণমাধ্যম এত বড় অভ্যুত্থানকে কেবল আন্দোলন নামে চালিয়ে দিচ্ছে, এটা খুবই হতাশা আর দুঃখজনক। এসব গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা লেখেন, জনগণ আপনাদের দেখে নিবে, শহীদ পরিবার আপনাদের দেখে নেবে।

তিনি বলেন, কোনো সংবাদ মাধ্যমে আজ পর্যন্ত আঘাত করতে দেয়া হয়নি, আর সামনেও হতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ ভয়ঙ্কর’-স্মৃতিতে সব সময় এটা লালন করতে হবে। স্মৃতিতে না থাকলে এই কালো অধ্যায় মানুষ ভুলে যাবে। শেখ মুজিব আর শেখ হাসিনার শাসনামল কোনো কালের সঙ্গেই মিলে না।’ আওয়ামী লীগের আমলে যে গণমাধ্যমগুলোর লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল এগুলোর তদন্ত করে দেখা হবে বলে জানান তথ্য উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, আজকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পলাতক, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পালিয়ে থাকার জন্য শেখ হাসিনা দায়ী। শেখ হাসিনা ছিল শেখ পরিবারের সর্বশেষ লোক, যিনি পালিয়ে গেছেন। এর আগে শেখ পরিবারের সবাই পালিয়েছে।

সেমিনারে দৈনিক যায়যায়দিনের সম্পাদক শফিক রেহমান, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, দৈনিক সংগ্রামের সাবেক সম্পাদক আবুল আসাদ, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ, তথ্য ও সমপ্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা, বিএফইউজে’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, সহ-সভাপতি খায়রুল বাশার, প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ, দৈনিক নয়া দিগন্তের নির্বাহী সম্পাদক মাসুমুর রহমান খলিলি ও শীর্ষ নিউজের সম্পাদক একরামুল হক বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ দুইজন সাংবাদিকের  একজনের মা ও অন্যজনের স্ত্রী স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সময়ে নির্যাতনে নিহত সাংবাদিকের পরিবার ও নিপীড়নের শিকার কয়েকজন সাংবাদিকও তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা দেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here