রাজধানীতে বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিএনপির গণমিছিলে মানুষের ঢল: শেখ হাসিনার পদত্যাগই একমাত্র দাবি বিএনপির : মির্জা ফখরুল

 আমার দেশ

 ১১ আগস্ট ২০২৩

রাজধানীতে বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিএনপির গণমিছিলে মানুষের ঢল

রাজধানীতে বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিএনপির গণমিছিলে মানুষের ঢল

নিজস্ব প্রতিনিধি

এবার নির্বাচন নিয়ে কোনো খেলা খেলতে দেওয়া হবে না উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এবারের লড়াই জীবনপণ লড়াই। এবারের আন্দোলনে সরকারের পতন করা হবে। মানে মানে সরে না গেলে রাজপথেই সরকার পতন ঘটানো হবে।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগই একমাত্র দাবি বিএনপির। এ দাবির আওয়াজ গণভবন, বঙ্গভবনে পৌঁছাতে হবে।

শুক্রবার (১১ই আগস্ট) সরকারের পদত্যাগসহ গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা দাবিতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির গণমিছিলের আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

রাজধানীতে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে এই গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

বিকেল পৌনে চারটায় উত্তর বাড্ডা এলাকায় সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে থেকে একটি গণমিছিল শুরু করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। মিছিলটি মালিবাগ গিয়ে শেষ হওয়ার হয়। আরেকটি গণমিছিল শুরু হয় বিকেল পৌনে চারটায় কমলাপুর স্টেডিয়ামের সামনে থেকে। এটিও মালিবাগে গিয়ে শেষ হয়।

রাজধানীর বাড্ডায় সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে গণমিছিলে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সেখানে মিছিলপূর্ব সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন করে পার পেতে চায় আওয়ামী লীগ। দেশের জনগণ কি সেটা হতে দিবে? এসময় নেতাকর্মীরা বলেন, না। শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই নির্বাচন কমিশন ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।

বিচার বিভাগ ব্যবহার করে বিএনপি নেতাকর্মীদের জেল দেওয়া হচ্ছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, যত নির্যাতন, গুলি, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করুক আন্দোলন থামানো যাবে না। জনগণ এবার তাদের দাবি আদায় করবে।

নির্বাচন কমিশন বাতিল এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে তিনি বলেন, সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না।

তিনি আরও বলেন, দেশের ১৮ কোটি মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। তারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে তাদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করবে। এবারের লড়াই জীবনপণ লড়াই। একটাই দাবি, দাবি কী? তখন তিনি নেতাকর্মীদের সঙ্গে বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগ।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই আওয়ামী লীগ সরকার আমাদের সব অর্জন ধ্বংস করে দিয়েছে। আমাদের বিচারব্যবস্থা শেষ করে দিয়েছে। বিচার বিভাগের মধ্য দিয়ে আমাদেরকে জেলে ঢুকিয়ে দেয়। তাতে কি আন্দোলন থেমে গেছে। থামানো কি যায়? না।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশের ১৮ কোটি মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। তারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে তাদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করবে। কোনোভাবেই আমাদের আটকানো যাবে না।

সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি বলেন, না হলে আমাদের নেতাও বলেছেন ফয়সালা হবে রাজপথে। এবারের লড়াই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে লড়াই, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার লড়াই।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান। এসময় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, আতাউর রহমান ঢালী, জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া, ফরহাদ হালিম ডোনার, যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ।

আরও উপস্থিত ছিলেন- খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আহমেদ তালুকদার, আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল, সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, শিশু বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন প্রমুখ।

এদিকে, রাজধানীর কমলাপুর স্টেডিয়ামে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির গণমিছিল শুরুর আগে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন হতে দেওয়া যাবে না।

তিনি বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকার আমাদের শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করার অধিকারও কেড়ে নিয়েছে। পেটোয়া পুলিশ বাহিনী দিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করছে। তারা সরাসরি গুলি করছে। এই স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটাতে হবে।

মির্জা আব্বাস বলেন, এই নির্বাচন কমিশন আমরা মানি না। এরা নিশিরাতের ভোটের সরকার গঠন করেছে। তারা অন্যায় আইন আদেশ মানছে। আপনাদের নির্বাচন করার সাংবিধানিক অধিকার নেই। নিরপেক্ষ সরকারের অধীন ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, গত ১৫ বছর ধরে লড়াই করছি। অনেক সাথীকে হারিয়েছি। অনেক গুম, পঙ্গু এবং অনেক নারী নির্যাতিত হয়েছেন। অনেকের জেল হয়েছে এবং এখনো জেল খাটছে। এই অবস্থায় একটা ফ্যাসিবাদি সরকারকে ক্ষমতায় রাখা দেশের জন্য ক্ষতি। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের বিদায় করতে হবে। তিনি বলেন, মৃত্যু হয় হবে কিন্তু এই সরকারকে বিদায় করতে হবে। আর যারা বাধা দিবে তাদের সেই বাধা ভাঙতে হবে। আর আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। সুতরাং যারা অশান্তি সৃষ্টি করবে তাদের দাঁত ভাঙা জবাব দিতে হবে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, আমরা রাজপথে আছি। রাজপথে থাকবো। এই সরকার বিদায় না করা পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাবো না। আর আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন হতে পারে না। সুতরাং এই সরকারকে বিদায় নিতে হবে। নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ ইসির অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক মো. আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও তানভীর আহমেদ রবিন, লিটন মাহমুদের যৌথ পরিচালনায় গণমিছিলে অংশগ্রহণ করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, বরকত উল্লাহ বুলু, ডা. জাহিদ হোসেন, জয়নুল আবেদীন, আহমেদ আযম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, মনিরুল হক চৌধুরী, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, মীর সরফত আলী সপু, কাজী আবুল বাশার, শিরিন সুলতানা, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, মো. হারুন অর রশিদ, সেলিমুজ্জামান সেলিম, আব্দুল খালেক, আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, হাবিবুর রশিদ হাবিব, গাজীপুর জেলার ফজলুল হক মিলন, ঢাকা জেলার খন্দকার আবু আশফাক, নিপুণ রায় চৌধুরী, মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক আনম সাইফুল ইসলাম, শিবচর উপজেলার ইয়াজ্জেম হোসেন রোমান, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, তাঁতী দলের আবুল কালাম।

এর আগে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির গণমিছিল কেন্দ্র করে জড়ো হন দলটির নেতাকর্মীরা। এ সময় কারো কারো হাতে ছাতা দেখা যায়।

গণমিছিল উপলক্ষে বেলা ১টা থেকে ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে বিএনপি ও দলটির অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মী আসতে শুরু করেন বাড্ডা ও কমলাপুরে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মী বাড়তে থাকে। বিভিন্ন ইউনিট ও অঙ্গ-সংগঠনের ব্যানারে নেতাকর্মীরা আসেন দলে দলে। এসময় সরকার বিরোধী বিভিন্ন স্লোগানে গণমিছিল প্রাঙ্গণ মুখরিত করেন তোলেন তারা।