মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সংঘাত থামছে না। গতকাল রোববার দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্ত এলাকা থেকে। সীমান্তের কাছে হেলিকপ্টারও উড়তে দেখা গেছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এ তথ্য জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন, এর আগের দিন শনিবার সীমান্তের ওপার থেকে অন্তত পাঁচটি মর্টার শেল ও বন্দুকের গুলি বাংলাদেশ সীমান্তে এসে পড়ার খবর পাওয়া গেছে।
রাখাইনের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। সেখানকার পরিস্থিতি উত্তরণের মাধ্যমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আলোচনা শুরুর জন্য তিনি চীনের রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ জানিয়েছেন।
চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি কোনো সময় ভালো ছিল না। কখনো একটু ভালো হয়, আবার কখনো একটু খারাপ হয়। এ পরিস্থিতি সব সময় ছিল। আমরা আশা করি, এ পরিস্থিতি সব সময় থাকবে না। আমরা অতি দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে পারব। এটা নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে আলোচনা হয়েছে (চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে)। আমরা চীনের সহযোগিতা কামনা করেছি।’
চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাখাইনের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও প্রত্যাবাসন নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমরা এটাও জানি, প্রত্যাবাসন এখন কিছুটা সমস্যার মুখে পড়েছে। রাখাইনে সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির সংঘাত বন্ধ করে অস্ত্রবিরতির জন্য আমরা মধ্যস্থতা করছি। রাখাইনে অস্ত্রবিরতি প্রতিষ্ঠা হলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আবার আলোচনার পথ সুগম হবে।’
সীমান্ত পরিস্থিতি
রাখাইনের বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান গতকাল কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার মিয়ানমার সীমান্ত পরিদর্শন করেছেন। গণমাধ্যমে পাঠানো বিজিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, তিনি বিজিবির কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের (৩৪ বিজিবি) অধীন উখিয়ার পালংখালী বিওপি এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু বিওপি ও ঘুমধুম সীমান্ত এলাকা এবং টেকনাফ ব্যাটালিয়নের (২ বিজিবি) অধীন হোয়াইক্যং বিওপি ও তৎসংলগ্ন সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি মিয়ানমার সীমান্তে উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সদস্যদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন।
টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী প্রথম আলোকে জানান, গত শনিবার ও রোববার টেকনাফের হোয়াইক্যং উলুবনিয়া সীমান্তের ওপার থেকে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। এ ঘটনায় সীমান্তের কাছে বসবাসকারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
এই জনপ্রতিনিধি আরও জানান, গত শনিবার উলুবনিয়া গ্রামের নুরুল ইসলামের বসতঘরে একটি গুলি এসে পড়ে। একই দিন ওই গ্রামের সীমান্তবর্তী জমিতে এসে পড়েছে মর্টার শেল। দিনে ও রাতে থেমে থেমে সীমান্তের ওপারে রাখাইন এলাকা থেকে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। গতকাল দুপুরে হোয়াইক্যং উলুবনিয়া ও উত্তর পাড়া সীমান্তের ওপারে কয়েকটি হেলিকপ্টার উড়তেও দেখা গেছে।
সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির শব্দ শোনার কথা জানিয়েছেন উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিনও। তিনি বলেন, গতকাল দুপুরে দিকে দুটি হেলিকপ্টার থেকে বোমা ছুড়তে দেখা গেছে। এতে স্থানীয় লোকজন ভয়ে চিংড়িঘেরে ও চাষের জমিতে যেতে পারছেন না।
কোনো রোহিঙ্গা প্রবেশ করেনি
জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস গতকাল ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেছেন, রাখাইনে দুই পক্ষের লড়াইয়ের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো রোহিঙ্গা সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেনি।
রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে জাতিসংঘ কোনো অনুরোধ জানিয়েছে কি না জানতে চাইলে গোয়েন লুইস বলেন, এ ধরনের কোনো অনুরোধ জানানো হয়নি।
গোয়েন লুইস গতকাল সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর দপ্তরে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এরপর তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
প্রথম আলো