ফিরোজ মাহবুব কামাল 13 September 2022
রবীন্দ্রনাথের মুসলিম বিদ্বেষী ও উগ্র হিন্দুত্বের চেতনাটি শুধু শিবাজী-উৎসব কবিতায় সীমিত নয়। সেটির প্রকাশ পেয়েছে তার “বিচার”,“মাসী”,“বন্দীবীর”,“হোলীখেলা” কবিতায় এবং “সমস্যা পুরাণ”,“দুরাশা”,“রীতিমত নভেল” ও “কাবুলিওয়ালা” গল্পে। মুসলিমদের প্রতি রবীন্দ্রনাথের ধারণাটি কীরূপ ছিল সেটি প্রকাশ পায় “রীতিমত নভেল” নামক একটি ছোটগল্পে। তিনি লিখেছেন: “আল্লাহো আকবর শব্দে বনভূমি প্রতিধ্বনিত হয়ে উঠেছে। একদিকে তিন লক্ষ যবন সেনা, অন্য দিকে তিন সহস্র আর্য সৈন্য। … পাঠক, বলিতে পার … কাহার বজ্র মন্ত্রে ‘হর হর বোম বোম’ শব্দে তিন লক্ষ ম্লেচ্ছ কণ্ঠের ‘আল্লাহো আকবর’ ধ্বনি নিমগ্ন হয়ে গেলো। ইনিই সেই ললিত সিংহ। কাঞ্চীর সেনাপতি। ভারত-ইতিহাসের ধ্রুব নক্ষত্র।” রবীন্দ্রনাথের ‘দুরাশা’ গল্পের কাহিনীটি আরো উৎকট মুসলিম বিদ্বেষে পূর্ণ। এখানে তিনি দেখিয়েছেন, একজন মুসলিম নারীর হিন্দু ধর্ম তথা ব্রাহ্মণদের প্রতি কি দুর্নিবার আকর্ষণ এবং এই মুসলিম নারীর ব্রাহ্মণ হওয়ার প্রাণান্তকর প্রচেষ্ঠার চিত্র। রবীন্দ্রনাথে শেষ জীবনে যে মুসলমানির গল্পটি লিখিয়েছিলেন সে গল্পের নায়ক ছিলেন হবি খাঁ। হবি খাঁ’র মধ্যে তিনি উদারতার একটি চিত্র তূল ধরেছেন। তবে সে উদারতার কারণ রূপে দেখিয়েছেন, হবি খাঁ’র মা ছিল হিন্দু অভিজাত রাজপুতিনী। এভাবে তিনি প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন, মুসলিম একক ভাবে মহৎ হতে পারেনা। মহৎ হতে হলে হিন্দু রক্তের মিশ্রন থাকতে হবে। এখানে প্রমাণ মনে রবীন্দ্রনাথের নিরেট বর্ণবাদী মনের।
মুসলিম সমাজের প্রতি রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিভঙ্গির নিখুঁত পরিচয়টি পাওয়া যায়
‘কণ্ঠরোধ’ (ভারতী, বৈশাখ–১৩০৫) নামক প্রবন্ধে। সিডিশন বিল পাস হওয়ার পূর্বদিনে কলকাতা টাউন হলে এই প্রবন্ধটি তিনি পাঠ করেন। এই প্রবন্ধে উগ্র সাম্প্রদায়িকতাবাদী যবন, ম্লেচ্ছদের একটি ক্ষুদ্র দৃষ্টান্ত দিতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ বলেন,“কিছুদিন হইল একদল ইতর শ্রেণীর অবিবেচক মুসলিম কলিকাতার রাজপথে লোষ্ট্র খন্ড হস্তে উপদ্রবের চেষ্টা করিয়াছিল। তাহার মধ্যে বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে, উপদ্রবের লক্ষ্যটা বিশেষরূপে ইংরেজদেরই প্রতি। তাহাদের শাস্তিও যথেষ্ট হইয়াছিল। প্রবাদ আছে, ইটটি মারিলেই পাটকেলটি খাইতে হয়; কিন্তু মূঢ়গণ (মুসলিম) ইটটি মারিয়া পাটকেলের অপেক্ষা অনেক শক্ত শক্ত জিনিস খাইয়াছিল। অপরাধ করিল, দণ্ড পাইল; কিন্তু ব্যাপারটি কি আজ পর্যন্ত স্পষ্ট বুঝা গেল না। এই নিম্নশ্রেণীর মুসলিমগণ সংবাদপত্র পড়েও না, সংবাদপত্রে লেখেও না। একটা ছোট বড়ো কাণ্ড হইয়া গেল অথচ এই মূঢ় (মুসলিম) নির্বাক প্রজা সম্প্রদায়ের মনের কথা কিছুই বোঝা গেল না। ব্যাপারটি রহস্যাবৃত রহিল বলিয়াই সাধারণের নিকট তাহার একটা অযথা এবং কৃত্রিম গৌরব জন্মিল। কৌতূহলী কল্পনা হ্যারিসন রোডের প্রান্ত হইতে আরম্ভ করিয়া তুরস্কের অর্ধচন্দ্র শিখরী রাজপ্রাসাদ পর্যন্ত সম্ভব ও অসম্ভব অনুমানকে শাখা পল্লবায়িত করিয়া চলিল। ব্যাপারটি রহস্যাবৃত রহিল বলিয়াই আতঙ্ক চকিত ইংরেজি কাগজে কেহ বলিল, ইহা কংগ্রেসের সহিত যোগবদ্ধ রাষ্ট্র বিপ্লবের সূচনা; কেহ বলিল মুসলিমদের বস্তিগুলো একেবারে উড়াইয়া পুড়াইয়া দেয়া যাক, কেহ বলিল এমন নিদারুণ বিপৎপাতের সময় তুহিনাবৃত শৈলশিখরের উপর বড়লাট সাহেবের এতটা সুশীতল হইয়া বসিয়া থাকা উচিত হয় না।” এরূপ মুসলিম বিদ্বেষ ও মুসলিম ভীতি নিয়েই হলো নির্ভেজাল রবীন্দ্র চেতনা। মুসলিম এবং ইসলামের বিরুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের মগজ যে কতটা বিষপূর্ণ ছিল সেটি বুঝতে কি এরপরও কিছু বাকি থাকে? রবীন্দ্রনাথের মন যে কতটা ইংরেজ প্রেমে পূর্ণ –উপরুক্ত নিবন্ধে সেটিরও প্রমাণ মেলে। মুসলিমগণ কলকাতার রাস্তায় লাঠি হাতে ইংরেজ শাসকদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেছে –রবীন্দ্রনাথের কাছে সেটিই অপরাধ গণ্য হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ অতি পুলকিত যে, পুলিশ মুসলিমদের দমনে নির্যাতনে নেমেছে। এবং পুলিশের নির্যাতন তার কাছে উচিত পাওনা গণ্য হয়েছে।