দুই অর্থবছরের ২০ মাসের রপ্তানি হিসাব থেকে ২৩ বিলিয়ন ডলার উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ওপর দায় চাপিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকারকে দেওয়া এক চিঠিতে এই তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বড় এই ঘাটতির ফলে দেশের বিভিন্ন আর্থিক পরিসংখ্যান ওলট–পালট হয়ে পড়েছে। রপ্তানি কমে যাওয়ায় চলতি হিসাব উদ্বৃত্ত থেকে ঘাটতিতে পড়েছে। আর রপ্তানির বিপরীতে প্রত্যাবাসিত অর্থ আসার লক্ষ্য কমে যাওয়ায় আর্থিক হিসাব ঘাটতি থেকে উদ্বৃত্তে ফিরে গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই চিঠি সরকারের অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
ওই চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, এক সভায় এনবিআরের প্রতিনিধি সরবরাহকৃত রপ্তানির ডেটাসেটে একাধিকবার রপ্তানির হিসাব থাকার বিষয়টি ইতিমধ্যে তাদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক রপ্তানি আয়ের তথ্য–উপাত্ত তফসিলি ব্যাংকগুলোর শাখা থেকে সংগ্রহ করে থাকে। ফলে সেই তথ্য–উপাত্তের সঙ্গে প্রকৃত রপ্তানির তেমন পার্থক্য থাকে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংগ্রহ এবং ইপিবি কর্তৃক প্রকাশিত রপ্তানিসংক্রান্ত তথ্যে পার্থক্য থাকার কারণগুলোকে চিহ্নিত করে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বলেছে, একই রপ্তানি তথ্য এবং পণ্যের এইচএস কোড একাধিকবার ইনপুট দেওয়া হয়েছে। পণ্যের কাটিং, মেকিং এবং ট্রিমিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু তৈরির মাশুল পাওয়ার কথা, কিন্তু ইপিবি কাপড়সহ সব যন্ত্রাংশের হিসাব করেছে। ইপিবি অনেক সময় নমুনা পণ্যের দামও ইনপুট দিয়েছে, অথচ নমুনা পণ্যের কোনো দাম হিসাবে আসার কথা নয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল থেকে দেশের অভ্যন্তরে বিক্রয়কে রপ্তানি হিসবে এবং এসব পণ্য আবার বিদেশে রপ্তানির সময় হিসাব করা হয়েছে। সাধারণত পণ্য রপ্তানির সময় রপ্তানির প্রাথমিক ঋণপত্র মূল্য থেকে কিছুটা কম হয়ে থাকে, যা ইপিবি সমন্বয় করে না। এ ছাড়া স্টকলট, ডিসকাউন্ট এবং কমিশনের কারণে ক্ষয়ক্ষতি ইপিবি কর্তৃক সমন্বয় করা হয় না।
এই চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের সব ব্যাংক, ইপিবি, এনবিআরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আমদানি ব্যয়, রপ্তানি আয়, অদৃশ্য ব্যয়, অদৃশ্য আয়, রেমিট্যান্সের তথ্য মাসিক ভিত্তিতে সংগ্রহ করে লেনদেন ভারসাম্যের বিবরণী প্রস্তুত করে থাকে। সাম্প্রতিক কালে রপ্তানির বিপরীতে প্রত্যাবাসিত অর্থ আসা কমে যাওয়ায় ট্রেড ক্রেডিট উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা মূলত রপ্তানি (শিপমেন্ট) ও প্রকৃত রপ্তানি আয়ের ব্যবধানের কারণে হয়ে থাকে।
চিঠিতে বলা হয়, আর্থিক হিসাবে প্রকৃত ট্রেড ক্রেডিট বলতে রপ্তানি (শিপমেন্ট) ও রপ্তানি আয়ের পার্থক্য এবং আমদানি (শিপমেন্ট) ও আমদানি ব্যয়ের পার্থক্যের যোগফল বোঝানো হয়ে থাকে।
এতে আরও বলা হয়, দেশের রপ্তানি (শিপমেন্ট) তথ্য–উপাত্ত এনবিআর প্রতি মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইপিবির কাছে পাঠায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দেশের রপ্তানি (শিপমেন্ট) তথ্য/উপাত্ত ইপিবি প্রকাশ করে থাকে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, সংশোধিত ডেটাসেট ব্যবহার করার কারণে লেনদেন ভারসাম্যের বিবরণীতে ট্রেড ক্রেডিটসহ চলতি হিসাব ও আর্থিক হিসাব সংশোধিত হয়েছে। তবে এর জন্য সার্বিক লেনদেন ভারসাম্যে কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। কারণ, চলতি হিসাবে থাকা উদ্ধৃত সংশোধিত হয়ে আর্থিক হিসাবে সমন্বয় হয়েছে।
prothom alo