‘যোগ্য প্রার্থী’ খুঁজে পাচ্ছে না বিএনএম ও তৃণমূল বিএনপি

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও তৃণমূল বিএনপি
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও তৃণমূল বিএনপি

 

৩০০ আসনে ভোট করার ঘোষণা দিয়ে এখন ‘যোগ্য প্রার্থী’ খুঁজে পাচ্ছে না নতুন নিবন্ধিত দুই রাজনৈতিক দল তৃণমূল বিএনপি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম)। দল দুটিতে সাবেক সংসদ সদস্যসহ বিএনপি থেকে গুরুত্বপূর্ণ অনেকে যোগ দিতে পারেন বলে যে আলোচনা ছিল, গতকাল পর্যন্ত তা বাস্তবে রূপ পায়নি।

তৃণমূল বিএনপি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য ১৮ নভেম্বর থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে। দলটির দাবি, গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৪২৪ জন মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য রয়েছেন চারজন। তাঁদের দুজন জাতীয় পার্টির, একজন আওয়ামী লীগের ও একজন এলডিপি থেকে নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য। দলটির চেয়ারম্যান বিএনপি থেকে পদত্যাগকারী (সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান) সমশের মবিন চৌধুরী ও মহাসচিব বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত (দলের চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা) তৈমুর আলম খন্দকার। এর বাইরে পরিচিত কোনো রাজনীতিককে এখন পর্যন্ত দলটি টানতে পারেনি।

এদিকে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ‘প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরাম’ নামে আরেকটি দল আত্মপ্রকাশ করে। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) সাবেক ভিপি নাজিম উদ্দিন এবং জিএস আজিম উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন এই দলটির নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন নেই। তাই তারা তৃণমূল বিএনপি থেকে নির্বাচন করবে বলে দলের নেতারা জানিয়েছেন। এর মধ্যে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরামের চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন চট্টগ্রাম-৫ আসনে এবং সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দিন ফেনী-৩ আসনে প্রার্থী হতে তৃণমূল বিএনপি থেকে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য গত মঙ্গলবার থেকে দলের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে বিএনএম। গতকাল পর্যন্ত ২৬০টির মতো মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে বলে জানায় দলটি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন সদ্য যোগ দেওয়া বিএনপির সাবেক চারজন সংসদ সদস্য। তাঁদের মধ্যে শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর দলে যোগ দিয়েই বিএনএমের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হয়েছেন।

বিএনএমের নেতারা এখনো আশা করছেন, বিভিন্ন দল বিশেষ করে বিএনপির অনেক সাবেক সংসদ সদস্য বিএনএম থেকে নির্বাচনে যাবেন। এর মধ্যে বগুড়ার একাধিক সাবেক সংসদ সদস্য যোগদান করতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে।

তবে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর। সময় আছে আর মাত্র ছয় দিন। কিন্তু ২০ নভেম্বর চারজন সাবেক সংসদ সদস্য যোগ দেওয়ার পর গতকাল পর্যন্ত আর কোনো পরিচিতমুখ বিএনএমে যোগ দেননি।

তবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেকের সঙ্গেই আলোচনা-যোগাযোগ হচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যে ৩০ থেকে ৩৫ জন সাবেক সংসদ সদস্য দলে যোগ দেবেন। এর মধ্যে বগুড়ার সাবেক চারজন সংসদ সদস্য বিএনএমে যোগ দেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’ তিনি এই সাবেক সংসদ সদস্যদের নাম বলতে রাজি হননি।

এদিকে রাজনৈতিক মহলে প্রচার ছিল, আজ শনিবার সাবেক সংসদ সদস্যসহ অন্য দলের বেশ কয়েকজন নেতা বিএনএমে যোগদান করবেন। এ উপলক্ষে বড় আয়োজন করারও পরিকল্পনা ছিল। তবে দলের মহাসচিব মো. শাহ্জাহান গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, বড় আয়োজন হচ্ছে না। শনিবার দলীয় কার্যালয়ে ছোট পরিসরে যোগদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

সুপ্রিম পার্টি ও বিএনএফ

নতুন নিবন্ধিত আরেকটি দল বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)। দলটির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমেদ আল মাইজভান্ডারি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি চট্টগ্রাম-২ ও চট্টগ্রাম-৯ আসন থেকে নির্বাচন করতে চান। তাঁর দাবি, বিএসপি চট্টগ্রামের ১৬টি আসনসহ সব আসনে প্রার্থী দেবে।

এ ছাড়া ২০১৪ সালে ঢাকা-১৭ (গুলশান-বারিধারা) আসন থেকে সংসদ সদস্য হয়ে আলোচনায় এসেছিলেন বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) সভাপতি আবুল কালাম আজাদ। তখন বিএনএফ ‘কিংস পার্টি’ নামে পরিচিতি পেয়েছিল। আবুল কালাম আজাদ এবার চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। এবার নতুন একাধিক ‘কিংস পার্টি’ সামনে আসায় বিএনএফের নাম সরকারি মহলে আলোচনায় নেই।

এখনো আশায় বিএনএম

তৃণমূল বিএনপি ও বিএনএম এবার নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন পাওয়ার পর থেকেই ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে আলোচনায় রয়েছে। যদিও দল দুটির নেতাদের দাবি, তারা কারো ইন্ধনে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না।

তবে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের অভিযোগ, সরকারি মহলের পৃষ্ঠপোষকতায় এ ধরনের দল গঠন করে বিরোধী দলগুলোতে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা চলছে। গতকাল বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ভার্চু৵য়াল ব্রিফিংয়ে অভিযোগ করেন, সরকার রাষ্ট্রীয় অর্থ লোপাট করে দলছুটদের দিয়ে নতুন দল বানাচ্ছে।

প্রথম আলো