আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে নৌকার ভরাডুবির কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখা যায়, বোয়ালমারী উপজেলা ফরিদপুর-১ সংসদীয় এলাকাভুক্ত। এই অঞ্চল বরাবরই আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ও ২০০৫-এর উপনির্বাচন ছাড়া ১৯৯১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে এই আসনে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় সূত্র থেকে জানা যায়, তৃণমূল থেকে প্রার্থীদের সুপারিশ করে জেলা আওয়ামী লীগের মাধ্যমে কেন্দ্রে পাঠিয়েছিল উপজেলা আওয়ামী লীগ। প্রতিটি ইউনিয়নের ক্ষেত্রে ছয় থেকে সাতজন করে প্রার্থী বাছাই করে ১০টি ইউনিয়নের জন্য মোট ৬৫ জন নেতা-কর্মীর নাম সুপারিশ করে কেন্দ্রে পাঠানো হয়। দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর দেখা যায়, প্রতিটি ইউনিয়নের তালিকার ১, ২ নম্বর বাদ দিয়ে ৩ কিংবা ৪ নম্বরে থাকা ব্যক্তিকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এভাবে যোগ্য প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হন।
মনোনয়নবঞ্চিত আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে ১৬ জন বিদ্রোহী প্রার্থী হন। শেষের দিকে বিদ্রোহী প্রার্থীদের দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও, তত দিনে সময় অনেক পার হয়ে যায়। এ ছাড়া দিনে নৌকার পক্ষে কাজ করলেও উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অনেক নেতা গোপনে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের অন্তত সাতজন নেতা-কর্মী প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের কাদা-ছোড়াছুড়ির কারণে যোগ্য প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। নৌকার ভরাডুবির জন্য আওয়ামী লীগের নেতারাই দায়ী। এ ছাড়া বোয়ালমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক সাংসদ আবদুর রহমানের জেদাজেদির কারণেও প্রার্থী বাছাই সঠিক হয়নি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পীকুল মীরদাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রতিটি ইউনিয়নে একাধিক প্রার্থীর নাম সুপারিশ করে কেন্দ্রে পাঠালেও এলাকায় কোন প্রার্থীর কেমন অবস্থান, তা জানিয়েছি। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে আমাদের সেসব বিষয় আমলে নেওয়া হয়নি। প্রার্থীরা দুর্বল ছিলেন। অনেক প্রার্থীকে মনোনয়ন পাওয়ার পর মাঠে নামতে দেখা গেছে। অথচ সম্ভাব্য চেয়ারম্যান মনোনয়নপ্রত্যাশীরা দুই থেকে তিন বছর ধরে এলাকায় নিজেদের ভিত পোক্ত করে নিয়েছিলেন।’ তিনি বলেন, ‘হাবাজাবা প্রার্থী হইলে তো ফল হাবাজাবাই হবে।’
দলের প্রার্থীর হেরে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুর-১ (বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা, মধুখালী) আসনের সাবেক সাংসদ ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, বাস্তবতা হলো, নৌকার প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ সম্মিলিতভাবে কাজ করেনি। অভ্যন্তরীণ কোন্দল, দলাদলি ও নিজেদের পছন্দ-অপছন্দ কাজ করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের। পাশাপাশি এলাকার রাজনৈতিক মেরুকরণ ও গোষ্ঠীস্বার্থও এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। দল ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে প্রার্থীদের হারার প্রশ্নই উঠত না।
‘প্রার্থী নির্বাচন হাবাজাবা হয়েছে’, এমন অভিযোগের বিষয়ে আবদুর রহমান বলেন, তৃণমূল থেকে যে সুপারিশ করা হয়েছে, তার ভিত্তিতেই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। প্রার্থী ভালো হননি, এটা একটা অজুহাত।