- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০২ জুলাই ২০২০
করোনা চিকিৎসায় বাংলাদেশে বড় ঘাটতির কথা বলা হলেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব মতে রোগীদের ১০ হাজার সাধারণ বেড এবং ১৯৮ টি আইসিইউ বেড খালি আছে। আর ৩৫০টি ভেন্টিলেটর এখনো অব্যবহৃত৷
বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতান জানান, করোনা রোগীদের জন্য সারাদেশে নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে সাধারণ বেড আছে ১৪ হাজার ৭৪৮টি এবং আইসিইউ বেড ৩৮১টি। ওই দিন পর্যন্ত সাধারণ বেডে ভর্তি ছিলেন ৪ হাজার ৮৭৩ জন। খালি ছিল নয় হাজার ৯২৭৫টি। আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন ১৮৩ জন এবং খালি ছিল ১৯৮টি।
কেন বেড, আইসিইউ খালি?
মোট রোগী এবং হাসপাতালে ভর্তি রোগীর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, শতকরা ১৪-১৫ ভাগ করোনা রোগী এখন হাসপাতালে ভর্তি হন। ৮৫ ভাগ করোনা রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন বাসায় থেকে। আর করোনায় আক্রান্ত হয়ে যারা মারা যাচ্ছেন, তাদের ২৩ থেকে ২৫ ভাগ হাসপাতালেই যাননি। ৩০ জুন মোট আক্রান্ত হন তিন হাজার ৬৮২ জন। আর হাসপাতালে ভর্তি হন ৫৪৭ জন। ১ জুলাই মোট আক্রান্ত তিন হাজার ৭৭৫ জন আর হাসপাতালে ভর্তি ৫৩৮ জন।
বিশ্লেষকদের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে সাধারণ বেড ও আইসিউ খালি থাকার কথা বলা হলেও কোন হাসপাতালে খালি আছে তা রোগী বা তার স্বজনরা জানেন না। ফলে তাদের হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরতে হয়। আর এই কারণেই তারা বাসায় চিকিৎসাকে এখন শ্রেয় মনে করছেন। অন্যদিকে বেড বা আইসিইউ খালি থাকলেও তা প্রকাশ করা হয় না। কারণ, ভিআইপিদের জন্য অঘোষিতভাবে কিছু রিজার্ভ রাখা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)’র সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, ‘আমি নিজেও অনেক রোগীর জন্য বেড বা আইসিইউ’র চেষ্টা করে পাইনি। কিন্তু এখন দেখছি বেড খালি পড়ে আছে। এটা শুনে আমি বিস্মিত হলেও অবিশ্বাস করছি না। কারণ এখন মানুষ সচেতন হয়েছেন। ৮০-৮২ ভাগ রোগীই বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সর্বোচ্চ ২০ ভাগের বেশি রোগী হাসপাতালে আর যান না। তবে এটাই একমাত্র কারণ নয়। সমন্বয়হীনতার কারণে বেড বা আইসিইউ খালি থাকলেও মানুষ জানে না। ফলে সে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরছে।’
আর এই বেড বা আইসিইউর হিসাব কাগজে-কলমে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী। তার মতে, এখানে শুভঙ্করের ফাঁকির কয়েকটি বিষয় থাকতে পারে। প্রথমত, বিএসএমএমইউ এবং গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালসহ বেশ কিছু হাসপাতালে তো কয়েকদিন আগেও রোগীই ভর্তি নেয়া হয়নি। দ্বিতীয়ত, বেড থাকার পরও নানা উদ্দেশ্যে সাধারণ রোগীদের ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। তৃতীয়ত, বেড অনুপাতে চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মী আছে কিনা সেটা দেখা দরকার। তিনি বলেন, ‘কোভিড চিকিৎসার সুবিধা না থাকলে তো বেডের হিসাব দিয়ে লাভ নাই।’
চিকিৎসা পরিস্থিতি
আগের চেয়ে করোনা চিকিৎসা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে মনে করেন বিএমএ’র মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী। তবে তিনিও মনে করেন এখন সচেতনতার কারণে অধিকাংশ রোগী আর হাসপাতালে যান না। তারা বাসায় থেকেই চিকিৎসা করান। আর কোভিড হাসপাতালের বাইরেও এখন সরকারি ৫০ টি হাসপাতাল কোভিড-এর চিকিৎসা দিচ্ছে, ফলে কোভিড হাসপাতালে চাপ কমছে। আর যারা একটু স্বচ্ছল, তারা প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন বলে দাবি করেন তিনি।
কিন্তু এত বেড খালি থাকার পরও রোগীদের তা জানতে না পারার বিষয়ে ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, ‘প্রত্যেকদিন কেন্দ্রীয়ভাবে জানাতে হবে কোন হাসপতালে কত বেড, কত আইসিইউ খালি আছে। তাহলে রোগীদের হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরতে হবে না। আর যে-কোনো হাসপাতালে গেলে সেখান থেকেই রোগীকে বলে দিতে পারবে কোন হাসপাতালে বেড খালি আছে, কোথায় যেতে হবে।’
সর্বশেষ করোনা পরিস্থিতি
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন একদিনে সর্বোচ্চ চার হাজার ১৯ জন। এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছেন এক লাখ ৫৩ হাজার ২৭৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মারা গেছেন ৩৮ জন। এ নিয়ে বাংলাদেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো এক হাজার ৯২৬।
সূত্র : ডয়েচে ভেলে