যেসব জটিলতায় বন্ধ ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট

নিজস্ব প্রতিবেদক, একাত্তর
 ১৫ জুলাই ২০২৩ 
যেসব জটিলতায় বন্ধ ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট

বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মেয়াদেই বেসরকারি বিমান চলাচল খাতে অন্যতম নির্বাচনী ইশতেহার ছিল বাংলাদেশ বিমানের সরাসরি ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালু করা। কিন্তু সেটি এখনো বাস্তবায়ন করা যায়নি।

কবে নাগাদ হবে তারও দিনক্ষণ বলা যাচ্ছে না। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জানান, নিরাপত্তা ও অন্যান্য ইস্যুতে বাংলাদেশ সবই করেছে। বাকিটা নির্ভর করছে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর। তবে আশাবাদ জানিয়েছেন, তারা অক্টোবরের দিকে এই রুটের ফ্লাইট চালু করতে চান।

দীর্ঘ ১৪ বছর বন্ধ থাকার পর ২০২০ সালে ঢাকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ফ্লাইট পরিচালনার প্রক্রিয়া শুরু করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। করোনার কারণে বেশ কয়েকবার পিছিয়েছে ফ্লাইট চালুর এই উদ্যোগ। অবশেষে স্থবির হওয়া প্রক্রিয়া সম্প্রতি আবারও শুরু হয়।

সে প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা দেখতে গেলো বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় আসে যুক্তরাষ্ট্রের তিন সদস্যের এক প্রতিনিধি দল। এ সময় তারা ফ্লাইট অপারেশন ব্যবস্থা, যাত্রী নিরাপত্তা, বিমানবন্দরের কর্মীদের ডিউটির পদ্ধতি, স্ক্যানিং, গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংসহ সব ধরনের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন।

এর আগে লোকসানের মুখে ২০০৬ সালে ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে ফ্লাইট সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। পরে আবার ফ্লাইট চালুর চেষ্টা করে তারা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফ্লাইটের নিরাপত্তা সংক্রান্ত নানা দুর্বলতা দেখিয়ে সেগুলো সংশোধনের পরামর্শ দেয়। নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করে ২০২০ সালের উইন্টার সিডিউলে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ফ্লাইট পরিচালনার প্রক্রিয়া শুরু করে বিমান।

ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) ইউএসএ’র সেফটি অডিট অনুযায়ী বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিএএবি) বর্তমানে ক্যাটাগরি-টু এর আওতাভুক্ত হবার কারণে নিউইয়র্কে এই মুহূর্তে বিমানের ফ্লাইট পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। সিএএবি কর্তৃপক্ষের ক্যাটাগরি-১এ উন্নীত হবার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম চলমান আছে। এরিমধ্যে এক্ষেত্রে বাধাগুলো কাটিয়ে ওঠা গেছে।

ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাসোসিয়েশনের (এফএএ) ক্যাটাগরি-১ ছাড়পত্র ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে কোনো দেশের এয়ারলাইনস ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারে না। এই ছাড়পত্র না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে নিউইয়র্কের সঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। বিমানের ফ্লাইট চালু করতে এরই মধ্যে ফেডারেল এভিয়েশনের সঙ্গে একটি চুক্তি সই হয়েছে।

তবে বাস্তবতা হলো জেএফকে এয়ারপোর্টে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ বিমান তাদের স্লট খুইয়েছে। এটি ফিরে পেতে কঠিন সব পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সহ অন্যান্য বিষয়ে মার্কিন এভিয়েশন ছাড়পত্র পাওয়া খুব কঠিন। এ নিয়ে কাজ হয়তো হচ্ছে কিন্তু কার্যকারি কিছু হচ্ছে না।

এ নিয়ে প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে একবার নড়াচড়া শুরু হয়। কারণ এই মাসটিতে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণ দিতে আসেন। প্রতিবারই প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়ে আসছেন, দ্রুতই ফ্লাইট চালু হবে। প্রতিবারই প্রবাসীরা বিপুল করতালি দিয়ে ঘোষনাকে স্বাগত জানিয়েছেন।

গত বছরের ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এর সদর দপ্তরে কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমানের সঙ্গে একটি সাক্ষাত অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ঢাকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সরাসরি ফ্লাইট চালুর বিষয়ে আশ্বাস দেন পিটার হাস।

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশের শেষ ফ্লাইটটি আমেরিকার মাটিতে অবতরণ করেছিলো ২০০৬ সালে। ১৯৯৩ সাল থেকে সে সময় অবধি ঢাকা-ব্রাসেলস-নিউইয়র্ক রুটে বিমান চলাচল করতে পারতো। কিন্তু রুটটি বিমানের জন্য লাভজনক ছিলো না। তারপরেও বিমান বহুদিন এ পথে লোকসান দিয়ে হলেও ফ্লাইটটি পরিচালনা করছিলো। পরে লোকসানের মুখে ২০০৬ সালে ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে ফ্লাইট সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয় বিমান।

আরও পড়ুন: উত্তরাঞ্চলে বন্যার অবনতি, বাড়ছে দুর্ভোগ

জানা যায়,২০০৬ সালে যখন বিমানের আমেরিকায় আসা বন্ধ হলো তখন সেখানে বাংলাদেশিদের সংখ্যা ছিলো এক লাখের কিছু বেশি। যার প্রায় অর্ধেক বসবাস করতো নিউইয়র্কের বাইরে। ফলে সে সময়ে অর্থনৈতিক দিক থেকে বিমানের ফ্লাইটগুলোকে লাভজন করা সম্ভব হয়নি। তবে ২০২১ সালে এসে অবস্থার বেশ পরিবর্তন হয়।

দীর্ঘদিন ঢাকা—নিউইয়র্ক রুটে বিমানের ফ্লাইট বন্ধ থাকলেও ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে জাতীয় পতাকাবাহী বিমানের একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সফরে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি চার্টার্ড ফ্লাইটে নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি (জেএফকে) বিমানবন্দরে অবতরণের পর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদান করেন।

বর্তমানে আমেরিকাজুড়ে বসবাসরত বাংলাদেশির সংখ্যা তিন লাখেরও মতো। ২০১৯ সালের হিসেব অনুযায়ী শুধুমাত্র নিউইয়র্কে বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় দু’লাখ। তাই বাংলাদেশ বিমান নিউইয়র্কে ফ্লাইট পরিচালনা করলে তা লোকসান হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

একাত্তর/আরবিএস