শেখ আবদুল হাই বাচ্চু। ফাইল ছবিরাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির অন্যতম হোতা ও ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চু যেকোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আদালতে অভিযোগ দাখিল করার পরপরই তাঁর বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়েছে।
সংস্থাটির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র আজকের পত্রিকাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, অভিযোগপত্র দাখিলের পর বাচ্চুকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছেন দুদক কর্মকর্তারা। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সংস্থাও এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছে। যেকোনো সময় যেকোনো সংস্থার কর্মকর্তার হাতে গ্রেপ্তার হতে পারেন বেসিক ব্যাংকের সাবেক এই চেয়ারম্যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাচ্চুকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন এমন তথ্য বিভ্রান্তিকর। দেশে আছেন বলেই আমরা তাঁর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি।’
অপর একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, গত মে থেকে দুই দফা বাচ্চু দেশের বাইরে অবস্থান করেছেন। এর মধ্যে ৪ মে দুবাই থেকে ফিরেছেন। এরপর একবার কানাডায় গিয়েছেন। ৮ জুন সেখান থেকে ফেরেন বাচ্চু। ১২ জুন বেসিক ব্যাংকের ২ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা আত্মসাতের ৫৯ মামলার ৫৮টিতে আসামি করে চার্জশিট দেয় দুদক। সেদিন থেকেই বাচ্চুর অবস্থান নিয়ে শুরু হয় নানা জল্পনা।
কেউ কেউ বলেছেন, চার্জশিট দেওয়ার আগেই দেশ থেকে পালিয়েছেন সাবেক এই সংসদ সদস্য। তবে দুদকের গোয়েন্দা ইউনিট ও তদন্তকারী কর্মকর্তাদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে বাচ্চু দেশেই আছেন এবং ঢাকায় কোথাও অবস্থান করছেন। এসব তথ্য নিশ্চিত হয়ে সংস্থাটি থেকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে গত ১৫ জুন চিঠি দেওয়া হয়েছে। পুলিশের বিশেষ শাখায় ইতিমধ্যেই চিঠিটি পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক সচিব মাহবুব হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বেসিক ব্যাংক ইস্যুতে দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তারা কাজ করছেন। ইতিমধ্যে আদালতে চার্জশিট দাখিল হয়েছে।’
১২ জুন ব্যাপক আলোচিত বেসিক ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের ৫৯টি মামলায় অভিযোগপত্র দেয় দুদক। অনিয়মের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা সত্ত্বেও দীর্ঘ আট বছরের তদন্ত কার্যক্রমে বাচ্চুকে আসামি করতে পারেনি সংস্থাটি। তবে বর্তমান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর নেতৃত্বাধীন কমিশনের আমলে তদন্তে বেরিয়ে আসে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যানের নাম। অভিযোগপত্রে বাচ্চুসহ ৪৬ ব্যাংক কর্মকর্তা ও ১০১ গ্রাহককে আসামি করা হয়।
দুদকের তথ্যমতে, দুদক ২০১৩ সালে বেসিক ব্যাংকের অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করে। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে ২ হাজার ৩৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ২০১৫ সালের ২১,২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর ৫৬টি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় ১২০ জনকে আসামি করা হয়। পরে ২০১৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আরও ৩টি মামলা দায়ের করা হয়। সব মিলিয়ে বেসিক ব্যাংক টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ৫৯টি মামলা করে দুদক।