পরে ক্রেমলিন ঘোষণা দেয়, কিয়েভ দখলের ইচ্ছা তাদের নেই। রুশ বাহিনী ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণ অংশে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় পূর্ণ মনোযোগ দেবে। এর পরই কিয়েভ সফরে যান যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসসহ বিশ্বনেতারা।
ইতিমধ্যে ইউক্রেনে হাজারো মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যুদ্ধে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লাখো ইউক্রেনীয়। দেশটির অনেক এলাকা রুশ বাহিনীর দখলে গেছে। তবে তিন মাসের যুদ্ধে রাশিয়া কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জন করতে পারেনি বলেও মনে করছেন অনেকে।
প্রশংসা কুড়িয়েছে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী একটি সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতিরোধ লড়াই। তারা সাহায্যও পেয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো থেকে। তবে রাশিয়াও দমে যায়নি। এখনো ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণ অংশে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় জোর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
তিন মাসের লড়াইয়ে এ পর্যন্ত ইউক্রেনের ৬০ লাখের বেশি মানুষ দেশ ছেড়ে উদ্বাস্তু হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। তাদের অনেকেই পোল্যান্ডসহ প্রতিবেশী দেশগুলোয় আশ্রয় নিয়েছে। অনেকে ইউরোপের অন্যান্য দেশে গেছে। চলমান যুদ্ধে ইউক্রেনকে অস্ত্র–অর্থসহ সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো।
পাশাপাশি একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মস্কোকে বিশ্ব থেকে কার্যত একঘরে করার কৌশল নিয়েছে তারা।
যুদ্ধের তিন মাসের শেষের দিকে এসে ইউক্রেনকে দ্রুত রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করার আহ্বান জানিয়েছে পশ্চিমারা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন ও ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাহি এ আহ্বান জানিয়েছেন। সেখানে চুক্তির আওতায় ইউক্রেনের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে রুশ সেনাদের দখল করা এলাকাগুলো ছেড়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এদিকে, চলমান লড়াইয়ে চলতি সপ্তাহে ইউক্রেনের দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলীয় বন্দরনগরী মারিউপোল দখলে নেওয়ার কথা জানিয়েছে রাশিয়া। সেই সঙ্গে পূর্বাঞ্চলের দনবাস এলাকাটি দখলে নিয়ে অধিকৃত ক্রিমিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত করতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রুশ বাহিনী।
এর মধ্যেই জাতিসংঘের মহাসচিবের সফরকালে কিয়েভে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, পূর্বাঞ্চলের একটি গ্রামে বিদ্যালয় ভবনে বোমা হামলায় ৬০ জনকে হত্যা, রেলস্টেশনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে অন্তত ৫২ জনকে হত্যার ঘটনায় ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে রুশ বাহিনী। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলেছেন। এ অপরাধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়েছে একজন রুশ সেনার।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মেজর জেনারেল ইগর কোনাস্কহেনকভ আজ রোববার জানান, ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে হামলা অব্যাহত রয়েছে। দনবাসের ১৩টি জায়গায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ইউক্রেনের সেনাবহর ও অস্ত্রের ক্ষতিসাধন করা হয়েছে। দক্ষিণের মাইকোলাইভ অঞ্চলে একটি ভ্রাম্যমাণ অ্যান্টি–ড্রোনব্যবস্থায় রকেট হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। এসময় তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত রুশ বাহিনী ইউক্রেনের ১৭৪টি যুদ্ধবিমান, ১২৫টি হেলিকপ্টার, ৯৭৭টি অন্যান্য আকাশযান, ৩১৭টি বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা, ৩ হাজার ১৯৮টি ট্যাংক ও অন্যান্য যুদ্ধযান, ৪০৮টি রকেট লঞ্চার ধ্বংস করেছে।
এদিকে পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদা বরেছেন, ইউক্রেনীয়দের নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেদের নির্ধারণ করার অধিকার রয়েছে। গতকাল শনিবার ইউক্রেনের পার্লামেন্টে দেশটির আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে ভাষণ দেন আন্দ্রেজ দুদা। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ হামলা শুরুর পর তিনি প্রথম বিদেশি রাষ্ট্রনেতা, যিনি ইউক্রেনের পার্লামেন্টে ভাষণ দিলেন। এর আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ একাধিক দেশের পার্লামেন্টে বক্তব্য দিয়েছিলেন।
ইউক্রেন থেকে সেনা প্রত্যাহারে জন্য মস্কোর প্রতি আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াতে আহ্বান জানিয়ে দেশটির পার্লামেন্টে দেওয়া বক্তব্যে আন্দ্রেজ দুদা বলেন, যদি অর্থনৈতিক কারণ কিংবা রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার কারণে ইউক্রেনীয়দের আত্মত্যাগ করতে হয়, নিজেদের ভূখণ্ড হারাতে হয়, তবে তা শুধু ইউক্রেনের মানুষের জন্য নয়, বরং পশ্চিমাদের জন্যও বিশাল আঘাত। এই দুঃসময়ে পোল্যান্ড ইউক্রেনের পাশে আছে। দেশটির ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হতে সমর্থন দেবে পোল্যান্ড।
যুদ্ধের তিন মাসের শেষের দিকে এসে ইউক্রেনকে দ্রুত রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করার আহ্বান জানিয়েছে পশ্চিমারা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন ও ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাহি এ আহ্বান জানিয়েছেন। সেখানে চুক্তির আওতায় ইউক্রেনের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে রুশ সেনাদের দখল করা এলাকাগুলো ছেড়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ শর্তে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে যেতে রাজি নয় ইউক্রেন। রুশ সেনারা ইউক্রেনের মাটিতে থাকতে দিয়ে কোনো চুক্তি করবে না তারা।
রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে এখনো সাত লাখ ইউক্রেনীয় সেনা লড়াই করছেন বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তবে যুদ্ধের মধ্যেও আলোচনার কথাবার্তা থেমে নেই। গতকাল জেলেনস্কি যুদ্ধের কূটনৈতিক সমাধানের কথা বলেছিলেন।