যুদ্ধ আরো কঠিন আরো গভীর, ফরহাদ মজহার; প্রথম প্রকাশ শ্রাবণ ১৪২১, আগস্ট ২০১৪। আগামী প্রকাশনী ,ঢাকা। পৃষ্টা ২০৭; মূল্য:৪০০/=
প্রগতিশীলতার নামে ফ্যাসিবাদ বা প্রকট প্রতিক্রিয়াশীলতা নতুন কিছু নয়। মূল কথা হচ্ছে ‘প্রগতি’, ‘জাতীয়তাবাদ’, ‘ধর্ম নিরপেক্ষতা’র নামে কী ধরণের রাষ্ট্র, বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসন আমরা চাইছি ও গড়ে তুলছি। মূলকথা হচ্ছে নিপীড়নের, হত্যাযজ্ঞের আর মানবাধিকার লংঘন ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংগঠনের যে মেশিন তৈরি করা হচ্ছে সেই মেশিন আমরা নিজেরাই তৈরি করে দিচ্ছি কিনা — যাকে আমরা ‘দেশ’, স্বাধীনতা’, ‘রাষ্ট্র’ ইত্যাদি বলে থাকি।
যারা নিজেদের মত প্রকাশের অধিকার চায়, কিন্তু বিরুদ্ধ মত দমন ও নিপীড়নে উৎফুল্ল হয়, আর যাই হোক তাদের প্রগতিবাদী বলা যায় না। বাংলাদেশের বর্তমান ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তুলবার পেছনে এদের অবদান সরাসরি। এই কারণে আমরা যাদের ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ বা ‘ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী’ বলে জানি, তাদের মূল প্রবণতা ফ্যাসিবাদের দিকে, তাদের রাজনীতির পরিণতি হচ্ছে মানবাধিকার হরণকারী আইন বহির্ভূত হত্যা ও গুম খুনে পারঙ্গম রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলা। তাদের কর্মফল হচ্ছে রাষ্ট্রের শেকলে তাদের নিজেদের আটকা পড়া। আজ তারাই দাবি করছে ব্লগার হত্যায় সরকারের প্রশ্রয় আছে !
বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা প্রধানত ইসলামবিরোধী। জালিমের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে মজলুম জনগোষ্ঠি ধর্মকে নতুন করে ব্যাখ্যা করে, নিজেদের নতুন বয়ান হাজির করে। দেশকালপাত্রভেদে ধর্মের স্থির, শ্বাশ্বত, অপরিবর্তনীয়, চিরায়্ত একাট্টা একরকম ব্যাখ্যা নাই। কখনই ছিল না। ইসলাম ডাকনামে নানান বয়ান, নানান ব্যাখ্যা, নানান বিশ্বাস জারি রয়েছে। ফলে ধর্মসহ যে কোন মতাদর্শের বিচার বিদ্যমান রাজনীতিতে সেই বয়ানধারীদের বাস্তব ভূমিকা দিয়েই আমাদের বুঝতে হবে। প্রগতিবাদীরা সেটা করে না। তারা একাট্টা ইসলামের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, একাত্তরের ঘটনার অপরাধ অনৈতিহাসিক ভাবে নির্বিচারে একাট্টা ইসলাম ধর্মের ওপর চাপায়। নিরীহ ধর্মপ্রাণ মানুষের বিশ্বাসকে তারা দায়ী করে। শুধু তাই নয়, সাধারণ মানুষের বিশ্বাস ও মর্যাদাকে তারা ক্রমাগত আহত করে। মানুষকে অপমান করে। তার ফল হচ্ছে নিজেদের ক্ষমতাসীনদের হাতের পুতুলে পরিণত করা, পরিণতি এখনকার শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, বর্তমান ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থা।
এই ধারার সঙ্গে এই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের লড়াই অনিবার্য। বাংলাদেশের পরাশক্তি ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই মানে বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই। অতএব তা অনিবার্য ভাবেই বিভক্ত ও বিভাজিত জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে গণশক্তি নির্মাণ ছাড়া পরিচালনা অসম্ভব। সে লড়াইয়ে সত্যিকারের মুক্তবুদ্ধি, মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক প্রগতিবাদী যেমন শামিল থাকবেন, তেমনি ইনসাফ কায়েমের ঝাণ্ডা নিয়ে জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমকে ঐক্যবদ্ধ করবার ধর্মপ্রাণ মানুষও হাজির থাকবেন।
যারা ইসলাম ও ইসলামপন্থী জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদের তরফে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে ও সেই যুদ্ধ চালিয়ে যাবার কৌশল হিসাবে ক্রমাগত ধর্মের নামে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে প্রগতির নামে মুক্তবুদ্ধির নামে জনগণকে বিভক্ত করছে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই আবশ্যিক হয়ে উঠেছে। তারা বাংলাদেশকে সিরিয়া, লিবিয়া ও আফগানিস্তানের মতো সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক যুদ্ধের ময়দানে পরিণত করতে চায়। এর পালটা দরকার ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনগণের ঐক্য ও সংহতি। যেন দ্রুত সকলের মত প্রকাশের অধিকারসহ ধর্মপ্রাণ ও ধর্ম নিরপেক্ষ প্রতিটি নাগরিকের নাগরিক ও মানবিক অধিকার আমরা নিশ্চিত করতে পারি। যেন আর কোন দীপন খুন না হয়, আর কোন তরুণ তার বিশ্বাসের কারনে ইসলামি জঙ্গী বলে গুম না হয়ে যায়, যার লাশটিও খুঁজে পাওয়া যায় না, আর যেন কারো পেট ফুটা লাশ নদিতে ভেসে না ওঠে…। যেন আমরা বুঝি আমাদের প্রতিটি সন্তানের জীবন রক্ষা আমাদের সকলের জন্য ফরজ হয়ে গিয়েছে।
বাংলাদেশে ২০১৫ সালে যে পরিস্থিতি আমরা এখন দেখছি সেই পরিস্থিতি অনিবার্য ভাবেই ঘটতে যাচ্ছে সেটা বহু আগে অনুমান করেই বলা হয়েছিল ‘যুদ্ধ আরো কঠিন, আরো গভীর’। হানাহানি, হত্যা ও সংঘাতের যে চিত্র এখন ফুটে উঠেছে তা এই বইটিতে বহু আগেই আন্দাজ করা হয়েছিল। ফলে যারা বর্তমান পরিস্থিতিতে অবাক হচ্ছেন, তাদের বিস্ময় দেখেই বরং আমাদের অবাক হবার কথা।
পড়ুন …।
সূচিপত্র
- কোথায় যাচ্ছি আমরা?।
- জনগণের গণতান্ত্রিক ঐক্য গড়ে উঠুক।
- প্রস্থানপথ নাই, অতএব পদলেহন…।
- মুক্তিযুদ্ধের সেনানায়ক ওসমানী: ‘উর্দি ছেড়ে আসুন…’।
- কূটনৈতিক তৎপরতা ও আন্তর্জাতিক বিধিবিধান।
- দখলদারদের বিরুদ্ধে ঐক্য চাই, ফাঁদে পা দেবেন না।
- যুদ্ধ আরো কঠিন আরো গভীর ।
- চিটিংবাজি।
- ইলেকশন কমিশন নির্বাচন চায় না।
- কেউ যেন নিজের দায় এড়িয়ে যেতে না পারে।
- রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে প্রশ্ন।
- শুধু নির্বাচন কমিশন নয়, খোদ উপদেষ্টা সরকারই সংবিধান লঙ্ঘনকারী।
- সংলাপ (?) নির্বাচন (?) ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ।
- সোজা আঙুলে ঘি ওঠে না।
- কে জাগে? কেউ কি জেগে আছে?
- কাণ্ডজ্ঞান ও রাজনীতি।
- উপজেলা অধ্যাদেশ ২০০৮, তা তা থৈ থৈ তা তা থৈ থৈ…।
- আমা গিয়েছে ছালা যাবার জোগাড়…।
- বেলুন টেপাটিপি ডকট্রিন।
- ছাড়া পাওয়া না পাওয়া…।
- যে বাড়ি পাহারা দেয় সে বাড়ির মালিক না।
- খালেদা কোন দিকে যাবেন?।
- স্বাস্থ্যসেবাকে ব্যবসায়ে পরিণত করবার ‘নীতি’: ক্ষমতাসীনদের কারবার।
- টুকরো খবরের টুকরো বিশ্লেষণ।
- গায়ের জোর।
- রাজনীতির গুমোট।
- এ যুদ্ধাবস্থা কেন?।
- সার্বভৌমত্ব বনাম নির্বাচন।
- বিচারপতি, তোমার বিচার করবে যারা…।
- ক্ষমতাসীনরা আরো দশ-বারো বছর ক্ষমতায় থাকলে দোষ কি!।
- বাংলাদেশের রাজনীতি এখন বঙ্গোপসাগরে।
- জরুরি অবস্থা উঠে গেল।