প্রাকৃতিক গ্যাসের সংকটের কারণে ২০১৮ সালে প্রথম তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি শুরু করে বাংলাদেশ। ওই বছর ২৫ এপ্রিল প্রথম জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জি। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের সামিট অয়েল অ্যান্ড শিপিং এ ব্যবসায় যুক্ত হয়। ভাসমান টার্মিনাল তথা ফ্লোটিং স্টোরেজ রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিটের (এফএসআরইউ) মাধ্যমে আমদানিকৃত এলএনজি এখনও রিগ্যাসিফাইডের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করছে প্রতিষ্ঠান দুটি।
পেট্রোবাংলার তথ্যমতে, এলএনজি কেনার জন্য কাতারের রাস লাফান লিকুইফাইড ন্যাশনাল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে ২০১৭ সালে এবং ওমানের ওকিউ ট্রেডিংয়ের সঙ্গে ২০১৮ সালে দুটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি সই করে পেট্রোবাংলা। চুক্তি দুটির আওতায় কাতার ১৫ বছর এবং ওমান ১০ বছর বাংলাদেশের কাছে এলএনজি বিক্রি করবে। এর বাইরে এ পর্যন্ত ২২টি কোম্পানি থেকে স্পট মার্কেটে এলএনজি কেনা হয়েছে।
স্পট মার্কেট থেকে কেনা এলএনজির বড় একটা অংশ এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কোম্পানি থেকে। দেশটি থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত চার বছরে ৮৫ হাজার ৩৬৬ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফ) এলএনজি কিনেছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ইআইএ) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। যদিও এলএনজি কেনার আর্থিক মূল্য প্রকাশ করেনি যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রায়ত্ত এ সংস্থাটি।
ইআইএর তথ্যমতে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ প্রথম যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিন হাজার ৪১৯ এমএমসিএফ এলএনজি আমদানি করে। পরের বছর জানুয়ারিতে তিন হাজার ৬৪০ এমএমসিএফ, মে মাসে তিন হাজার ৪০৬ এমএমসিএফ ও জুলাই মাসে তিন হাজার ৬১৪ এমএমসিএফ এলএনজি আমদানি করা হয়। ওই বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলএনজি আমদানির পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৬৬০ এমএমসিএফ। যদিও করোনার কারণে চাহিদা কম থাকায় ওই বছর বাংলাদেশের সার্বিক এলএনজি আমদানির পরিমাণ কম ছিল।
২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা হয় ৩৭ হাজার ৭৩৫ এমএমসিএফ এলএনজি। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে তিন হাজার ১৪৮ এমএমসিএফ, মার্চে তিন হাজার ৫৬৬ এমএমসিএফ, এপ্রিলে ১০ হাজার ২১৯ এমএমসিএফ, মে মাসে ছয় হাজার ৯৪৮ এমএমসিএফ, জুনে তিন হাজার ৪৯৩ এমএমসিএফ, আগস্টে সাত হাজার ৮৫ এমএমসিএফ, সেপ্টেম্বরে তিন হাজার ২৭৬ এমএমসিএফ এলএনজি আমদানি করা হয়। ওই বছরের শেষ দিক থেকে বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম বাড়তে শুরু করে।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছায়। এতে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি অনেকটাই কমিয়ে দেয় বাংলাদেশ। ফলে ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলএনজি আমদানির পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ১২ হাজার ৬৬৩ এমএমসিএফ। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারি মাসে পাঁচ হাজার ৮৯৬ এমএমসিএফ, মার্চে তিন হাজার ৪২১ এমএমসিএফ ও মে মাসে তিন হাজার ৩৪৬ এমএমসিএফ এলএনজি যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনা হয়।
২০২৩ সালে বিশ্ববাজারে আবারও কমতে শুরু করে এলএনজির দাম। এতে স্পট মার্কেট থেকে বাংলাদেশের এলএনজি কেনাও বাড়ানো হয়। এর প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গত বছর এলএনজি আমদানি বেড়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে তিন হাজার ৩৬৯ এমএমসিএফ, মে মাসে তিন হাজার ৫৬১ এমএমসিএফ, জুনে তিন হাজার ৬২৪ এমএমসিএফ, আগস্টে সাত হাজার ৯৫ এমএমসিএফ ও নভেম্বরে তিন হাজার ২৪০ এমএমসিএফ এলএনজি কেনা হয়েছে। সব মিলিয়ে গত বছর ১১ মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের এলএনজি আমদানির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ২০ হাজার ৮৮৯ এমএমসিএফ।
প্রসঙ্গত, স্পট মার্কেট ছাড়াও এলএনজি কেনায় মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করতে যাচ্ছে সরকার। সে অনুযায়ী, ২০২৬ সাল থেকে ২০৪০ সাল পর্যন্ত ১৫ বছর এলএনজি সরবরাহ করবে কোম্পানিটি। এক্সিলারেট এনার্জি বছরে ১০ থেকে ১৫ লাখ টন এলএনজি সরবরাহ করবে। এক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট এলএনজির দাম অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দামের ১৩ দশমিক ৩৫ শতাংশের সঙ্গে শূন্য দশমিক ৩৫ ডলার যোগ করে নির্ধারিত হবে।
sharebiz