নির্বাচন কমিশনে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পেয়ে হঠাৎ আলোচনায় আসা তৃণমূল বিএনপি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়া কথা বলছে। দল দুটি মনোনয়ন ফরম বিলি শুরু করলেও নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব, সংকট দেখা দিয়েছে। শুরুতে দল দুটির যাঁরা উদ্যোক্তা ছিলেন তাঁরা এখন আর মূল নেতৃত্বে নেই।
‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া এই দল দুটি সরকারি মহলের পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত হয়েছে বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা আছে। বিএনপি থেকে বেশ কিছু বড় নেতাকে বের করে এনে নির্বাচনে প্রার্থী করানোর লক্ষ্য নিয়ে দল দুটি সক্রিয় বলে প্রচার রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত তেমন কিছু দৃশ্যমান হয়নি।
এর মধ্যে বিএনএম এখন পর্যন্ত দলের চেয়ারম্যান ঠিক করতে পারেনি। নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে দলটিতে দ্বন্দ্বের আভাস মিলছে। গত ১০ আগস্ট বিএনএম নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন পায়। তখন দলের আহ্বায়ক ছিলেন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান আর সদস্যসচিব ছিলেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য মেজর (অব.) মো. হানিফ।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকার গুলশানে এক নেতার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে বিএনএমের কাউন্সিল হয়। তাতে আগের ৩১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্রীয় ও জাতীয় স্থায়ী কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। দলটির মহাসচিব করা হয় মো. শাহ্জাহানকে। তবে চেয়ারম্যান ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের পদসহ অন্যান্য পদ খালি রাখা হয়।
গত সোমবার বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোহাম্মদ আবু জাফরকে বিএনএমে যোগ দেওয়ার পরপরই তাঁকে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তবে দলটির বিলুপ্ত কমিটির নেতারা কোনো এক নেতার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে কাউন্সিল করা ও নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে আপত্তি তুলেছেন। দলটির আগের কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে রাতের আঁধারে নতুন কমিটি করা হয়েছে। গোপন জায়গায় কয়েকজন মিলে বৈঠক করে সেটাকে দলের কাউন্সিল বলা হচ্ছে।
এ বিষয়ে মো. শাহ্জাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরোয়ার হোসেন কেন এভাবে বলছেন, তা বলতে পারব না। তাঁকেসহ আহ্বায়ক কমিটির সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। অধিকাংশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এই সময়ে এসে এসব কথা না বলাই ভালো।’
বিএনএমের কার্যালয় ছিল মহাখালীতে। গত সপ্তাহে সেই কার্যালয় বন্ধ করে গুলশানে নতুন কার্যালয় নেওয়া হয়। তবে সেই কার্যালয়ে এখনো দলের কার্যক্রম শুরু হয়নি৷ দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এস এম আজমল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আজ বুধবার দুপুরের পর দলের নতুন কার্যালয়ে কার্যক্রম শুরু হবে। তিনি দাবি করেন, গতকাল একটি অস্থায়ী কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হয়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত ৯০টি ফরম বিক্রি হয়েছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বিএনএমে যোগ দিতে পারেন বলে সম্প্রতি গুঞ্জন ওঠে। তবে দলের মহাসচিব মো. শাহ্জাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাফিজ উদ্দিন আহমদ সংবাদ সম্মেলন করে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন।’
তৃণমূল বিএনপি
তৃণমূল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা বিএনপির সাবেক মন্ত্রী নাজমুল হুদা। দলটি ‘তৃণমূল বিএনপি’ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন পাওয়ার পরপরই নাজমুল হুদা মারা যান। গত ১৯ সেপ্টেম্বর দলের প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দলটির মূল নেতৃত্বে আনা হয় বিএনপির সাবেক দুই নেতাকে। এর মধ্যে বিএনপি থেকে পদত্যাগকারী (সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান) সমশের মবিন চৌধুরী নতুন দলটির চেয়ারম্যান এবং বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত (দলের চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা) তৈমুর আলম খন্দকার হয়েছেন মহাসচিব। নাজমুল হুদার মেয়ে অন্তরা সেলিমা হুদাকে দেওয়া হয়েছে নির্বাহী চেয়ারপারসনের দায়িত্ব।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, দলের নেতৃত্ব নাজমুল হুদার পরিবারের হাত থেকে সরে যাওয়ার পর অন্তরা হুদার মনোনয়ন নিয়েও চলছে জটিলতা। গত শনিবার দলের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হলেও অন্তরা হুদা গতকাল পর্যন্ত কোনো আসন থেকে মনোনয়ন ফরম তোলেননি।
মনোনয়ন ও দলের নেতৃত্ব নিয়ে কথা বলতে অন্তরা হুদার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি৷
তৃণমূল বিএনপির নির্বাচনী প্রস্তুতির বিষয়ে গত রোববার দুপুরে দলের মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকারের সঙ্গে কথা হয় তাঁর ব্যক্তিগত কার্যালয়ে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রকাশ্যে ইনভাইট (আমন্ত্রণ) করছি, যারা নির্বাচন করতে চায়, তারা আমাদের মনোনয়নপত্র তুলুক। আমাদের দরজা সবার জন্য খোলা। যেকোনো ব্যক্তি আমাদের মার্কা (সোনালি আঁশ) নিয়ে নির্বাচন করতে পারবে। ৩০০ আসনেই আমরা প্রার্থী দেব।’
এরই মধ্যে তৃণমূল বিএনপির মনোনয়ন ফরম তুলেছেন বিএনপি নেতা চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকীর ছেলে চৌধুরী ইরাদ আহমেদ সিদ্দিকী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আলোচিত সংসদ সদস্য প্রয়াত উকিল আবদুস সাত্তারের ছেলে মাইনুল হাসান।
তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন সমশের মবিন চৌধুরী সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ) আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার কোন আসন থেকে লড়বেন, তা এখনো চূড়ান্ত করেননি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে আমার সাংগঠনিক ভিত্তি ভালো। বিএনপি থেকে দুবার রূপগঞ্জে মনোনয়ন পেয়েছিলাম। সদরের সিটি করপোরেশনে মেয়র নির্বাচন করেছি। দলের মহাসচিব হিসেবে দুই আসনেও প্রার্থী হতে পারি।’
গত রোববার রাতে তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকারসহ তিনজনের একটি প্রতিনিধিদল গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এ বিষয়ে তৈমুর আলম খন্দকার গত সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের ডেকেছিল, তাই গিয়েছিলাম। আমরা বলেছি, সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। প্রধানমন্ত্রী আমাদের আশ্বস্ত করেছেন নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু হবে।’
প্রথম আলো