সপ্তম এডওয়ার্ড তখন প্রিন্স অব ওয়েলস। ক্রিকেটের প্রতি ভালোই ঝোঁক ছিল তাঁর। ইংল্যান্ডের অপেশাদার ক্রিকেটারদের ক্লাব ‘আই জিনগারি’র হয়ে ১৮৬৬ সালের ১৭ জুলাই একটি ম্যাচ খেলতে নামেন রানি ভিক্টোরিয়ার বড় ছেলে। বেরসিক ভাগ্য তাঁকে কোনো রান করতে দেয়নি। চার্লস রাইটের বলে আউট হন রানের খাতা খোলার আগেই।
ইংল্যান্ডের ভবিষ্যৎ রাজার এমন পারফরম্যান্স নিয়ে রসিকতার সুযোগ সংবাদমাধ্যম ছাড়বে কেন! সমসাময়িক এক সংবাদমাধ্যম লিখল, তিনি হাঁসের ডিম (ডাকস এগ) নিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন। ০ আর হাঁসের ডিম দেখতে প্রায় একই কি না, তাই! তখন থেকেই ক্রিকেটে প্রচলিত হয় ‘ডাক’ কথাটা—কোনো ব্যাটসম্যান ০ রানে আউট হলে বলা হয় ‘ডাক’ মেরেছেন। তা, এ বছর কোন দল ‘ডাক’ মারায় এগিয়ে?
বাংলাদেশ। এ বছর বাংলাদেশের আর কোনো ম্যাচ নেই। তিন সংস্করণ মিলিয়ে মোট ৬৬ বার শূন্য রানে আউট হয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। বাংলাদেশের এই ‘অনাকাক্ষিত’ শীর্ষস্থান কেড়ে নিতে পারে শুধু ইংল্যান্ড। অ্যাশেজ চলছে, আপাতত ৬০টি ‘ডাক’ নিয়ে দুইয়ে ইংল্যান্ড। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫০ ‘ডাক’ নিয়ে তিনে। ৪৭ ‘ডাক’ নিয়ে চারে ভারত।
শীর্ষ এই চার দলের মধ্যে বাংলাদেশ আরও একটি জায়গায় এগিয়ে। তবে সেটি মোটেও স্বস্তিদায়ক নয়। ইংল্যান্ডের ২৫ খেলোয়াড়, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ২৮ ও ভারতের ২৪ খেলোয়াড় মিলে নিজ নিজ দলের হয়ে এ বছর অতগুলো ‘ডাক’ মেরেছেন।
বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা এ তালিকায় প্রত্যেকে গড়ে দুটির বেশি ‘ডাক’ মেরেছেন—২৬ খেলোয়াড় মিলে ৬৬ ডাক। খেলোয়াড়প্রতি গড়ে ২.৫৩ বার শূন্য রানে আউট হয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ইংল্যান্ডের ক্ষেত্রে তা খেলোয়াড়প্রতি ২.৪, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্ষেত্রে ১.৭৮ ও ভারতের ক্ষেত্রে ১.৯৫। অর্থাৎ এ বছর একাধিকবার শূন্য রানে আউট হওয়ায় বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা অন্য যেকোনো দলের চেয়ে এগিয়ে।
১৪ খেলোয়াড়ের কাছ থেকে ২১ শূন্য নিয়ে বেশ পিছিয়ে অস্ট্রেলিয়া। খেলোয়াড়প্রতি ডাক মারার হার ১.৫।
টেস্ট খেলুড়ে দেশের মধ্যে এ বছর সবচেয়ে স্বস্তিতে আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ড—১১ জন আফগান খেলোয়াড় মাত্র ১৪ বার শূন্য রানে আউট হয়েছেন। ওদিকে ৭ খেলোয়াড় ১৩ বার শূন্যে রানে আউট হওয়ায় সবার পেছনে আয়ারল্যান্ড।
টি–টোয়েন্টি ও ওয়ানডেতে আলাদাভাবেও বাংলাদেশ শীর্ষ স্থান এড়াতে পারেনি। টি–টোয়েন্টিতে ১৫ ম্যাচে ২৯ বার ব্যাটসম্যানদের শূন্য রানে ফিরতে দেখেছে বাংলাদেশ। টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের তিন ধাপ পর রয়েছে নিউজিল্যান্ড (১৭)। বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মাঝে তিনটি দেশ যথাক্রমে—নাইজেরিয়া (২২), স্কটল্যান্ড (২১) ও সিয়েরা লিওন (১৮)।
ওয়ানডেতে বাংলাদেশের শূন্য সংখ্যা ১৪টি। এরপর যথাক্রমে ১২, ১১ ও ১০ ডাক নিয়ে পাপুয়া নিউগিনি, শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
টেস্টে অবশ্য এ তালিকায় স্বস্তিতে আছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ড ও ভারত সে স্বস্তিটা দিয়েছে বাংলাদেশকে। ইংল্যান্ডের ১৯ খেলোয়াড় মিলে ৪৮ বার শূন্য রানে আউট হয়েছেন। ভারতের যে সংখ্যা ৩৪। ৭ টেস্ট খেলেই বাংলাদেশের ১৪ ব্যাটসম্যান ২৩ বার শূন্য রানে আউট হয়েছেন।
টপ অর্ডার নিয়ে বাংলাদেশের সমস্যা নতুন না। প্রথম তিন ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে ধারাবাহিকভাবে রান না পাওয়ার সমস্যায় ভুগছে বাংলাদেশ। তার ছাপ রয়েছে এ বছরের পরিসংখ্যানেও। তিন সংস্করণ মিলিয়ে প্রথম তিন ব্যাটসম্যানের কোনো রান না করে ফেরার ঘটনায় শীর্ষে ইংল্যান্ড—৩৯ ম্যাচে ২৪ বার। ২৩ বার টপ অর্ডারের সদস্যদের খালি হাতে ফিরতে দেখেছে বাংলাদেশ।
টি–টোয়েন্টিতে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে শুধু নাইজেরিয়া ও সিয়েরা লিওন (৯ শূন্য)। এরপরই আছে বাংলাদেশ—৮। তবে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের টপ অর্ডারকে কোনো দল টেক্কা দিতে পারেনি। এ সংস্করণে বাংলাদেশের টপ অর্ডারে ৬ খেলোয়াড় শূন্য রানে ফিরেছেন। শ্রীলঙ্কা এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গী।
টেস্টে অবশ্য ইংল্যান্ডকে দেখে টপ অর্ডারের পিঠ চাপড়ে দিতে পারে বাংলাদেশ। ইংলিশ টপ অর্ডারের ৭ খেলোয়াড় মিলে ১৮ বারই কোনো রান করার ‘ঝামেলা’য় যাননি। অ্যাশেজের বাকি তিন ইনিংসে সে সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা আছে। এ বছর আর কোনো টেস্ট খেলবে না বাংলাদেশ। তাই সংখ্যাটা ৯–এ আটকে থাকবে।