বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য স্থায়ীভাবে আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে চাই। আরও যেসব বিষয় সংস্কার করা প্রয়োজন, এসব সংস্কারকাজ দ্রুত সম্পন্ন করে একটি নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। এ জন্য একটা যৌক্তিক সময় বর্তমান সরকার নিতে পারে।’
আজ শুক্রবার বিকেলে গাজীপুরের কাপাসিয়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে বিএনপি নেতা প্রয়াত হান্নান শাহর অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। হান্নান শাহ স্মৃতি সংসদ এর আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যৌক্তিক সময় মানে এই না যে তারা অনেক বেশি সময় নিয়ে নেবে। যত দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করা যাবে, ততই দেশের মঙ্গল হবে। সুতরাং, দ্রুত সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে একটি নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করে নির্বাচিত সংসদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার তাদের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য একটা একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছিল। তারা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছিল। গণতন্ত্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। নির্বাচন বলতে কিছুই ছিল না। জাতীয় সংসদ নির্বাচন বলুন, উপজেলা নির্বাচন বলুন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বলুন, কোনোটাই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় নাই।
‘তারা ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য প্রশাসনযন্ত্রকে, পুলিশকে ব্যবহার করেছে। তারা জোর করে ক্ষমতা দখল করে রেখেছিল। এই ক্ষমতাকে ধরে রাখার জন্য তারা প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সবকিছুকে কুক্ষিগত করে রেখেছিল।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটি কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সংসদ গঠন করতে হবে। সেই সংসদের অধীনে দেশ পরিচালিত হবে।’
তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক সব মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘আমাদের নেতা তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে বিদেশে নির্বাসনে রাখা হয়েছে। তাকে এখনো আমরা দেশে ফিরিয়ে আনতে পারিনি। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা সকল মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে এবং তাকে সসম্মানে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সারা দেশের জেলা, উপজেলাসহ সব স্থানে আমাদের নেতা–কর্মীদের নামে যত মিথ্যা হয়রানিমূলক রাজনৈতিক মামলা দায়ের করা হয়েছে, সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। এটা আমাদের দাবি। এটা এ দেশের জনগণের দাবি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে কষ্ট হয়, দুঃখ হয়। গত ১৬ বছরে আমাদের এক হাজার নেতা–কর্মীকে গুম করা হয়েছে, হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। লক্ষ লক্ষ নেতা–কর্মীকে মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা দেওয়া হয়েছে। আমাদের নেতা–কর্মীরা বাড়িতে থাকতে পারেনি।’
তিনি বলেন, হান্নান শাহ সৈনিক ছিলেন, কিন্তু মনে প্রাণে ছিলেন গণতন্ত্রী। তিনি অত্যন্ত সৎ, দেশ প্রেমিক রাজনীতিবিদ ছিলেন। এ পর্যায়ে মির্জা ফখরুল ব্রিগেডিয়ার (অব.) হান্নান শাহের সঙ্গে তাঁর কারাগার জীবনের স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘কারাগারে হান্নান শাহের সঙ্গে আমার অনেক দিন থাকতে হয়েছিল। আমাদের প্রথমে রাখা হয়েছিল কেরানীগঞ্জের কারাগারে। সেখানকার পরিবেশ বর্ণনা করার মতো নয়। একটি কক্ষে গাদাগাদি করে থাকতে হতো। রাতে ঘুমাতে পারতাম না। ইঁদুর আমাদের ঘরের মেঝেতে দৌড়াদৌড়ি করত। পরে হান্নান শাহ বললেন, “চলেন আমরা এখান থেকে কাশিমপুর কারাগারে স্থানান্তরের জন্য বলি। পরে জেলারকে বলার পর তারা আমাদের কাশিমপুর কারাগারে স্থানান্তর করে দিয়েছিল।”’
কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমানের সঞ্চালনায় ও গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএনপির সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাতক কামরুজ্জামান রতন, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহমেদ টিটু, সহস্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ওমর ফারুক সাফিন, গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকার, হান্নান শাহর ছেলে গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নান ও গাজীপুর জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা শেফাউল হক প্রমুখ।
এর আগে বিএনপি মহাসচিব ও কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতৃবৃন্দ কাপাসিয়ার ঘাগটিয়া এলাকায় হান্নান শাহর গ্রামের বাড়িতে তাঁর কবর জিয়ারত করেন।
ajker patrika