স্টাফ রিপোর্টার
১১ ডিসেম্বর ২০২২, রবিবার
বিএনপি’র কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গতকাল রাজধানীতে দিনব্যাপী সতর্ক অবস্থানে ছিল আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সকাল থেকে তারা বিভিন্ন এলাকার অলিগলিতে স্লোগান দিয়ে ছোট ছোট মিছিল ও সমাবেশ করেন। মাঝে মাঝে মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দিতে দেখা যায়। দুপুরে বিভিন্ন জায়গায় নেতাকর্মীদের জন্য খিচুড়ি রান্না করা হয়। বিএনপি’র বিরুদ্ধে স্লোগান, মিছিল আর বক্তব্যে সরগরম ছিল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে রাজপথে সক্রিয় থাকার এই কর্মসূচিতে দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। ঢাকার বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোয় দলটির নেতাকর্মীরা উপস্থিত হয়ে সতর্ক অবস্থান নেন। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট থেকে মিছিল নিয়ে আসেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আলাদা আলাদা অবস্থান নিয়ে স্লোগান ও সমাবেশ করেন।
বিজ্ঞাপন
এ সময় কেন্দ্রীয় নেতাদের কয়েকজনও কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। উপস্থিত আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, জনগণের জানমাল রক্ষা করতে পাড়া-মহল্লায় পাহারাদার হিসেবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন নেত্রী। আমরা সেই কাজটি করছি।
আওয়ামী লীগের হাজার হাজার কর্মী পাহারাদারের কাজ করছে। বিকাল পর্যন্ত দুষ্ট লোকদের সভা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকবো। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী বলেন, বিএনপিকে রাজপথে মোকাবিলা করতে নেতাকর্মীরা ‘স্ট্যান্ড বাই’ (সদা প্রস্তুত) রয়েছে। প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ডে আমাদের নেতাকর্মীরা সকাল থেকে মাঠে আছেন। ডিসেম্বর মাসজুড়ে তারা রাজপথে থাকবে। যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের নেতৃত্বে সংগঠনটির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মিছিল নিয়ে আসেন। সেখানে দুই হাজার লোকের দুপুরের খাবারের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া ঢাকার বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডে যুবলীগের নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থানে ছিল। মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, বিএনপি-জামায়াত নাকি ১০ই ডিসেম্বর ঢাকা দখল করে নেবে, শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটাবে।
আমরা তাদের মোকাবিলায় সব থানা ও ওয়ার্ডে সতর্ক আছি। যেখানেই এই সন্ত্রাসীদের দেখা যাবে, সেখানেই প্রতিহত করা হবে। এদিকে মোহাম্মদপুর, ঢাকা উদ্যান চৌরাস্তা, চন্দ্রিমা উদ্যানের প্রবেশ মুখ, বসিলা তিন রাস্তার মোড়, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড, শিয়া মসজিদ মোড়, তাজমহল রোড, মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেট, আসাদগেট, মানিক মিয়া এভিনিউ, আড়ং, ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর মোড়, কলাবাগান মোড়, ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর, ফার্মগেট, গ্রীন রোড মোড়, পান্থপথ মোড়, বাংলামোটর, শাহবাগ এবং মগবাজার মোড়সহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সর্বত্র আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বসে আছেন। সকাল থেকে রাজধানীর পল্টন ও মতিঝিল এলাকায় ৬-৭টি মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দিতে দেখা গেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিনসহ ১০-১৫ জনকে।
এ ছাড়া উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের জনপদ ময়মনসিংহ ও সিলেটের মানুষের রাজধানীতে প্রবেশের অন্যতম পথ ডেমরায় সুলতানা কামাল সেতুর শেষপ্রান্তে সতর্ক অবস্থায় দেখা গেছে ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম মাসুদ ও সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজলসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের। যাত্রাবাড়ী মোড়ে অবস্থান নেন এফ এম শরীফুল ইসলাম ও হারুনুর রশীদ মুন্নার নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে গাবতলীতে যুবলীগের মিছিল ও অবস্থান চোখে পড়েছে। এতে নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান খান নিখিল। গাবতলীর প্রবেশমুখে বিজয় মঞ্চ তৈরি করে ঢাকা মহানগর উত্তর যুব মহিলা লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি সাবিনা আক্তার তুহিনের নেতৃত্বে মিছিল ও অবস্থান করতে দেখা যায়। সাবেক এই এমপি মানবজমিনের কাছে দাবি করেন তার নেতৃত্বে ১২ হাজার কর্মীবাহিনী সকাল থেকে এসব এলাকায় সতর্ক অবস্থান নেন। পুরো ডিসেম্বর জুড়ে বিজয় মঞ্চকেন্দ্রিক নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করা হবে বলে তিনি জানান। এদিকে টিএসসি ও মধুর ক্যান্টিনসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন এরিয়ায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পৃথক পৃথক অবস্থান চোখে পড়েছে।