বুয়েটের সাম্প্রতিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধের আন্দোলনের দাবীতে আবারও সেই মেরুকরণের রাজনীতিই সামনে আসলো। এইটা থেকে বের হওয়া মনে হয় খুবই কঠিন কিন্তু জরুরী একটা কাজ।
ইন্টারেস্টিংলি এই আন্দোলন নতুন-পুরানা অনেকগুলা বিষয় সামনে আনে এই মুহুর্তেও দুনিয়া জুড়ে ঘটতেছে এমন কতগুলা ইস্যু নিয়াও ভাবায়, ফলে এইটা একটা কেইস স্টাডি হইতে পারে, পলিটিক্যাল বিশ্লেষকদের জন্য। একটা ভার্সান শোনা যায় যে -‘বহু আগে থেকেই বুয়েট এন্টি-স্টুডেন্ট পলিটিক্সের ধারণাতে বিলং করে। এইটা বুয়েটের কন্টেক্সটে নতুন কিছু না।’ কিন্তু বুয়েটের এই রাজনীতি হইতে দূরে থাকার টেন্ডেসিকে উন্নাসিক এপলিটিক্যাল বা ‘আই হেইট পলিটিক্স” এটিচ্যুড হিসাবে রিড করারও একটা প্রবণতা দেখা যায়। এইটা ঠিক না বেঠিক সেই আলাপ ভিন্ন, সেই আলাপ আজকের না। এই মুহূর্তে বুয়েট ক্যাম্পাসে সাধারণ স্টুডেন্টরা ছাত্র-রাজনীতি চালুর বিরুদ্ধে যে আন্দোলন গড়ে তুলছেন গড়পড়তা সেটাকে কিভাবে দেখা হচ্ছে- সেই আলাপ। এইখানেও কোন মেরুকরণের রাজনীতি এবং রিপ্রেজেন্টেশন আছে কি নাই?
পুরা দুনিয়ায় বহুদিন ধরে আরও একটা মেরুকরণ চলে, মুসলিম বনাম নন-মুসলিম। যেইটা খুবই জন্মসূত্রীয় প্রোফাইল কেন্দ্রিক-কে কোন রিলিজিয়নের আন্ডারে সেইটা শুধু কাভার করে। এর বাইরের অন্য জিনিস কমই দেখে। মুসলিমদের যুদ্ধবাজ, আধিপত্যবাদী, এন্টি-উইম্যান আর যৌনতাবাদী হিসাবে রিপ্রেজেন্ট করার পলিটিক্স বহুত পুরানা পলিটিক্স, সম্ভবত বিশ শতকের সবচে বেশিবার উচ্চারিত পলিটিক্স। ফলে, এইটা এখন মাস মিডিয়ার মাধ্যমে মাস পিপল একভাবে জানে। এই মিডিয়ারও ২ রকম রোল আছে। দেখা দরকার, কে কোন রোল প্লে করতেছে। রিসেন্টলি আল-জাজিরার সম্প্রচার নিষিদ্ধ করছে ইজরায়েল। কেন? আল-জাজিরা কি করতো?
আর ওয়েস্টার্ন বাকি মিডিয়ার ম্যাক্সিমামগুলা কি করতেছে?
যা করতেছে, তা কি অন্যান্য নন-মুসলিম টেরোরিস্ট এক্টিভিটিগুলার ক্ষেত্রে দেখা যায়? হামাসের ক্ষেত্রে বা সাদ্দামের সময়ে ইরাকের ক্ষেত্রে অথবা আফগানিস্তান তালিবানদের ক্ষেত্রে রোলগুলা কি থাকে? এখন এই কথাগুলা বললে যদি আন্দাজ কইরা নেয়া হয় যে- অথর হিসাবে আমি সাদ্দাম, হামাস অথবা তালিবানদের সাপোর্টার- তাইলে আসলে কোনকিছু চিন্তা না করেই যে ব্লাক & হোয়াইট পলিটিক্সে পা দেয়া হয়, সেখানে কোন রাজনীতির দিকে ইশারা পাওয়া যায়? মোটামুটি কমনসেন্স আছে এমন কেউ এখন আর এই ট্যাগিং কাউরে করে না। কিন্তু বুয়েটের আন্দোলনের ঘটনার প্রেক্ষিতে আমরা দেখি – বুয়েটে ছাত্রলীগ কিংবা ছাত্ররাজনীতি চালু না থাকার মানেই হইল ক্যাম্পাসে শিবির সক্রিয় হয়ে উঠা- এই গড়পড়তা আলাপ। এইখানে ছাত্র-রাজনীতির ডেফিনিশন কি?! এই ন্যারেটিভে্র উৎপাদকরা বরাবর আওয়ামীবিরোধী (সরকারবিরোধী শুধু না কিন্তু!) কোনপ্রকার এক্টিভিজম বা আন্দোলন গইড়া উঠতে থাকলেই তারে ‘রাজাকার/শিবির’ ইত্যাদি ট্যাগিং দেয়া শুরু করে, পিছনে কে বা কারা তা ‘খতিয়ে দেখা’র চেষ্টা চালায়। এইবারও এই “শিবির-ভীতি” লক্ষ্য করা গেলো! প্রশাসন থেকেও এমনকি এই ইংগিত পাওয়া গেলো। ছাত্রলীগ বনাম শিবির, এর বাইরে যেন আর কিছু নাই। এই বাইনারি, এই মেরুকরণ ভিন্ন যেন আর কোন জগত নাই!
বারে বারে বলে তৈরি করা রিপ্রেজেন্টেশনের এই পলিটিক্স এতোই পুরানা, ঐতিহাসিক ন্যারেটিভ তৈরিতে এতোই শক্তিশালী যে, ক্রিয়েটেড বাস্তবতা ও রি-ক্রিয়েটেড ট্রুথকে ভাংগতে বার বার তাই পাল্টা যুক্তি দিতে হয়, ঘটনাবলীর বিস্তারিত ব্যাখা দিতে হয়। তাও ক্ষমতার বয়ানের তলে তা চাপা পইড়া যায়। কারণ, প্রাথমিকভাবে আমাদের মস্তিষ্ক যেকোন জেনেরিক বা জেনারালাইজড তথ্য-উপাত্তজাত টেক্সট নির্ভর (ধরা যাক নাম্বার বা পারসেন্টেজ বা সিংগেল লাইনের একটা স্ট্যাট্মেন্ট) এবং কোন না কোন বাইনারিতে পৌঁছায়া আমরা ডিসিশনে চইলা আসতে চাই দ্রুত, হয় সাপোর্ট করি নয় ঘৃণা করি- কিছু একটা। কিন্তু একইসাথে সতর্কবার্তা এই, এইগুলা কোনটাই ঠিক একক কোন “ষড়যন্ত্র” না, এই আচরণগুলার উৎস অবশ্যই ঐতিহাসিক এবং ইতিহাসের পরিক্রমা ধইরাই দেখতে হবে নাইলে মিসিং লিংক থাইকা যাবে প্রচুর।
ওয়েস্টার্ন ডমিন্যান্ট মিডিয়ায় এইবার ফিলিস্তিনের উপরে এযাবতকালের সবচে ভয়ংকর যুদ্ধে একমাত্র ইজরায়েলের ক্রুয়েল জায়ানিজমের এগেন্সটে যা একটু তথ্য পাইছি আমরা। তাও সেইটা আমেরিকার সাধারণ জনগনের মধ্যেই এইবার এন্টি-ওয়ার এবং এন্টি-জায়ানিজম মনোভাব গড়ে উঠছে বলে। এই প্রথম আমেরিকা এবং ইউরোপের সাধারণ মানুষ, লক্ষ লক্ষ সাধারণ হোয়াইট অরিজিন এবং অতি অবশ্যই মাইগ্র্যান্ট পিপল, মুসলিম/নন-মুসলিম সবাই ইজরায়েলের বীভৎস জেনোসাইডের বিরূদ্ধে আওয়াজ তুলছে। ভরা মজলিশে চুপ করায়া দিছে হিলারি ক্লিনটনরে। অর্থাৎ, ডমিন্যান্ট ওয়েস্টার্ন মিডিয়ার একচক্ষু সংবাদ পরিবেশন আর কাজ করতেছে না। সাধারণ মানুষ আর খাইতেছে না এইগুলা।
অথচ, ডমিন্যান্ট মেইন্সট্রিম ওয়েস্টার্ন মিডিয়ায় চায়নার উইঘুরের মুসলিমদের উপরে অত্যাচারের খবর কম পাই আমরা, ইন্ডিয়ার ক্রুয়েল ফ্যানাটিক হিন্দুদের অত্যাচারের খবর কম আসে। দলিত হিন্দুরাও যে অত্যাচারের শিকার। রেইপের ঘটনা আকছার হয় বাংলাদেশে কিন্তু মাদ্রাসার হুজুর কতৃক রেইপ আপনের ব্লাডরে হল্কায় বেশি। কাশ্মীর-দিল্লীর মুসলিমরা যখন অত্যাচারিত হইতে হইতে আওয়াজ তোলে একমাত্র তখন আপনি শুনতে পাবেন সেই আওয়াজ।
আর এর বাইরে….? নাই। কোন তথ্য-প্রমাণ, আওয়াজ কিচ্ছু না। ফলে আপনার আমার ইমোশনও সেইভাবে তড়পায় না।
bangla outlook