‘সরকার যদি বিচারটা করত, তাইলে আমার মেয়ের মতোন আর কোনো মায়ের সন্তানের এমন অবস্থা হতো না। কিন্তু ওই (আওয়ামী লীগ) সরকার বিচার করে নাই। নতুন সরকার কিছুতেই যেন ভারতকে ছাড় না দেয়, আমার ফেলানী হত্যার বিচারটা যেন সুষ্ঠুভাবে করে।’
কিশোরী ফেলানী খাতুন হত্যার বিচার চেয়ে গণজমায়েতে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা জাহানারা বেগম। ফেলানী হত্যার ১৪তম বার্ষিকীতে সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ গণজমায়েতের আয়োজন করে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’।
গণজমায়েতে গান ও কবিতার মাধ্যমে স্মরণ করা হয় কিশোরী ফেলানীকে। এ সময় ফেলানীসহ দেশের নাগরিকদের নির্যাতন ও গুম-খুনের বিচার দাবি করেন তাঁদের স্বজন ও উপস্থিত বক্তারা।
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত হয় ১৪ বছরের ফেলানী। তার লাশ অন্তত পাঁচ ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে ছিল। সেই ছবি দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
গণজমায়েতে উপস্থিত ছিলেন ফেলানীর বাবা নুর ইসলামও। তিনি বলেন, ‘এত দিন আওয়ামী লীগ সরকার আছিল, আমাগো শুধু আশায় আশায় রাখছে। আমার মেয়েকে যারা কাঁটাতারে ঝুলিয়ে মারছে, আমি তাদের বিচার চাই। হত্যাকারীদের শাস্তি চাই।’
গুমের শিকার ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী নাসরিন জাহান নিজের শিশুসন্তানসহ স্বামীর ছবি নিয়ে গণজমায়েতে আসেন। তিনি বলেন, ‘আমার সন্তান এখনো কেন জানে না তার বাবা বেঁচে আছে কি না, এই প্রশ্নের উত্তর বাংলাদেশকে দিতে হবে।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা গণজমায়েতে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা শুধু ফেলানীর নামটাই লিখেছি, আমরা কিন্তু কিশোরী স্বর্ণা দাসকে ভুলে গেছি, লালমনিরহাটের রবিউলকেও ভুলে গেছি।’
গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে কিশোরী স্বর্ণা দাস (১৪) নিহত হয়। এর আগে ২৮ জানুয়ারি লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম আঙ্গরপোতা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হন বাংলাদেশি তরুণ রবিউল ইসলাম।
গণজমায়েতে অধিকারের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, ‘আমাদের সরকার তখন এত নতজানু পররাষ্ট্রনীতি মেনে চলেছিল যে সীমান্তে এত এত হত্যা হয়েছে, কিন্তু তারা টুঁ শব্দটিও করেনি।’
সি আর আবরার বলেন, ‘যাঁরা এই জাতিকে নেতৃত্ব দিতে চান বা দিচ্ছেন, তাঁদের কাছ থেকে আমরা এসব হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সম্পূর্ণ জবাবদিহি আশা করি।’ তিনি বলেন, ‘যে কয়টি সীমান্ত হত্যা হয়েছে, আমাদের জায়গা (বাংলাদেশ) থেকে যেন আমরা যথাযথ তদন্ত করতে পারি, সেগুলো যেন জনগণের সামনে তুলে ধরতে পারি।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন একটা শক্তিশালী দেশ হতে চায়। ফেলানীর ঝুলন্ত লাশ আমাদের আগামী দিনের পথচলার নির্দেশনা দেয়, কীভাবে আমাদের অভ্যন্তরীণ ও বিদেশনীতি তৈরি করতে হবে।’
ফেলানীসহ সব সীমান্ত হত্যার বিচার দাবি করে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, সীমান্তে বিএসএফ সর্বোচ্চ গ্রেপ্তার করতে পারে, কিন্তু কোনোভাবেই হত্যা করতে পারে না।
গণজমায়েতে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তারিকুল ইসলাম প্রমুখ।
prothom alo