মুক্তিযুদ্ধে তেলিয়াপাড়া সামরিক সন্মেলনের গুরুত্ব।

[জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার পর তেলিয়াপাড়া সামরিক সম্মেলন ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এর উপর সংক্ষেপে লিখেছেন মেজর সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক, পিএসসি (অব:)। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের উপর অনেক পডকাস্ট তৈরি করেছেন, আরও বেশ কিছু করবেন। তিনি তেলিয়াপাড়া সম্মেলন সম্বন্ধে বিস্তারিত লিখছেন। তিনি বাংলাদেশ ফ্রিডম এন্ড ডেমোক্র্যাসি ফোরাম (বিএফডিএফ) এর সদস্য। নীচে তার লেখাটি দেখুনঃ]

তেলিয়াপাড়া বাংলোয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম বৈঠক

মুক্তিযুদ্ধে তেলিয়াপাড়া সামরিক সন্মেলনের গুরুত্ব। 
মেজর সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক, পিএসসি (অব:)
তেলিয়াপাড়া সামরিক সন্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ৪ এপ্রিল ১৯৭১। সিলেট এবং হবিগন্জ জেলার মাঝামাঝি ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের অতি নিকটে; মাধবপুর উপজেলায় তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ম্যানেজার বাংলোতে মুক্তিযুদ্ধের খুবই প্রারম্ভিক সময়ে এই সন্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এটি ছিল মুক্তি যুদ্ধের রূপরেখা বা মহাকৌশল তৈরির রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, আন্তর্জাতিক এবং সামরিক সন্মেলন। এই সন্মেলনে মুক্তি যুদ্ধের কমান্ড কাঠামো গঠন বিশেষ করে কর্ণেল এম এ জি ওসমানিকে মুক্তি যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক নির্ধারণ করা হয়; প্রাথমিক ভাবে সারা বাংলার রণাঙ্গনকে চারটি সেক্টরে ভাগ করে সেক্টরের কমান্ড প্রদান করা হয়।
এই সন্মেলনের সমন্বয় ও ব্যবস্থাপনা করেন মেজর খালেদ মোশাররফ তাঁর ৪ ইস্ট বেঙ্গলের ঘাঁটিতে এবং সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করেন তিনি নিজে। খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে ৪ ইস্ট বেঙ্গল ২৭ তারিখ বিদ্রোহ করার পর ব্রাহ্মণবাড়ীয়া থেকে তেলিয়া পাড়ায় ৩১ মার্চ স্থানান্তরিত হয়ে প্রতিরক্ষা ঘাঁটি গড়ে তুলেন। মেজর কে এম শফিউল্লার নেতৃত্বে ২ ইস্ট বেঙ্গল ২ এপ্রিলের মধ্যে কিশোরগঞ্জ হতে তেলিয়াপাড়ায় এসে প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন। দুটি ব্যাটালিয়ান এই এলাকায় সিলেট, আশুগঞ্জ , সরাইল এবং হবিগঞ্জে খন্ড খন্ড দল মোতায়েন করে নিরাপত্তা জোরদার করে। মেজর খালেদ মোশারফ ভারতে প্রবেশ করে বি এস এফ আন্চলিক কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার পান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় করেন। সীমান্তে চলার পথে হঠাৎ সাক্ষাৎ হয় কর্ণেল এম এ জি ওসমানির সাথে। সম্ভবত মার্চের শেষ সপ্তাহ কিংবা এপ্রিলের ১/২ তারিখের মধ্যে কোন এক দিনে। তাৎক্ষণিক ভাবে খালেদ মোশারফ ওসমানিকে সন্মেলনে যোগদানের জন্য মৌখিক দাওয়াত করেন। তিনি সন্মেলনে যোগ দিতে রাজি হন। চার তারিখের সন্মেলনে মেজর জিয়াকে দাওয়াতের পরামর্শ দেন ব্রিগেডিয়ার পান্ডে। ব্রিগেডিয়ার পান্ডে মেজর জিয়ার অবস্থান জানতেন, কারণ দু এক দিন পূর্বেই মেজর জিয়া ব্রিগেডিয়ার পান্ডের সাথে রামগড় সীমান্তে সাক্ষাৎ করে ভারতের সার্বিক সহযোগিতা চান।
চার তারিখের সন্মেলনে ১০ জন সেনা অফিসার যোগ দেন। ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার এসডিও কাজী রকিবউদ্দিন এবং ভারতের ত্রিপুরার ডি এম সাইগল যোগ দেন। ভারতের ত্রিপুরা সীমান্ত আন্চলিক কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার পান্ডে যোগদান করেন। বাংলাদেশের তিন জন অবসর প্রাপ্ত সেনা অফিসার এবং সাতজন চাকুরিরত অফিসার যোগ দেন। কর্ণেল এম এ জি ওসমানী ( অব:), লে: কর্ণের এম এ রব ( অব:), মেজর নুরুজ্জামান (অব:)। চাকুরিরত ছিলেনন: সিনিয়ার মোস্ট অফিসার মেজর জিয়াউর রহমান, মেজর কে এম শফিউল্লাহ, মেজর খালেদ মোশারফ, মেজর শাফায়াত জামিল, মেজর শিশু , মেজর মইনুল হোসেন এবং ২ লে: ইব্রাহীম । প্রথম সিদ্ধান্ত- কর্ণেল এম এ জি ওসমানী (অব) মুক্তি যুদ্ধের সর্বাধিনায়কেক দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দুই। তিনি ভারতে তাজউদ্দিন আহমদের সাথে সমন্বয় করবেন এবং দ্রুত ভারতের সার্বিক সহযোগিতার ব্যবস্থা করার সমন্বয় করবেন। আপাতত চারটি সেক্টরে সারা বাংলার রণাঙ্গনে কমান্ড দায়িত্ব দেয়া হয়। মেজর জিয়া প্রথম সেক্টর চট্টগ্রাম , পার্বত্য চট্টগ্রাম ফেনী নদী পর্যন্ত দায়িত্ব পান। ইউনিট গুলোর বর্তমান অবস্থানের ভিত্তিতে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এই সন্মেলনের পর দু/ তিন দিন পরেই কর্ণেল ওসমানী আগরতলায় তাজউদ্দিন আহমদকে তেলিয়াপাড়া সন্মেলনের বিস্তরিত বিষয় অবহিত করেন। তাজউদ্দিন আহমদ এই সন্মেলনের বিষয় জেনে দারুণ আনন্দিত হন এবং এই সন্মেলনকে লাইট হাউস হিসেবে মূল্যায়ন করেন। এই সন্মেলনের আলোচনার প্রেক্ষিতে দ্রুত ১১ এপ্রিল সিলিগুরি রেডিও স্টেশনে ভাষণ দেন। সেই ভাষণে তাজউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশের রণাঙ্গনে পাঁচটি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রশংসা করে যুদ্ধের বর্ণনা দেন। তিনি আরও বলেন মেজর জিয়া ২৬ তারিখ স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামকে স্ট্যালিন গ্রাডে রূপান্তরিত করেন। তেলিয়াপাড়া সন্মেলন মুক্তিযুদ্ধের সূচনা লগ্নে জাতীয় ও আন্তার্জাতিক ভাবে বিশেষ করে ভারতের সাথে সমন্বয় সহ রাজনৈতিক , কূটনৈতিক এবং সামরিক রূপরেখা প্রণয়নে অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা রাখে । এই সন্মেলনে কর্ণেল এম এ জি ওসমানী একটি অস্ত্র আকাশে তাক করে এক রাউন্ড গুলি ছুঁড়েন। সেই বুলেটের যে মনুমেন্ট তৈরী হয় তা আজও তেলিয়া পাড়ায় সোভা পাচ্ছে। যুদ্ধের কমান্ড কাউন্সিলের যে ভাস্কর্য তৈরী হয়েছিল যা এখন অযত্নে আছে। গবেষকদের ধারণা তেলিয়াপাড়া চা বাগানটিতে একটি মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা করে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে জাতির জন্য সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। মুক্তিযুদ্ধের এই অসাধারণ দিনটিকে জাতীয় জীবনে গুরূত্বের সাথে উদযাপন করা প্রয়োজন।

তেলিয়াপাড়া স্মৃতিসৌধ – উইকিপিডিয়া

Maj Syed Abu Bakar Siddique, psc (Retd)
[Syed Abu Bakar Siddique is a human rights defender and political analyst. He has worked in the Bangladesh Army for 24 years, between 1983 to 2007, when he retired as a Major. He is a founding member and Vice President of G9 in Bangladesh. He has worked as a United Nations Peacekeeper in East Timor between 1999 and 2000. Currently, Mr. Siddique does a podcast on the Bangladesh Liberation War. Mr. Siddique completed his defense studies in the Staff College of Bangladesh, has a Master of Defense Studies from National University in Bangladesh and an MBA from the Royal Roads University in Canada. He writes on human rights and international security matters and has been living in the UK for many years.] 
The above was presented by:

The Bangladesh Freedom and Democracy Forum (BFDF): Free Bangladesh of hegemonism and authoritarianism, and establish a patriotic and democratic government