মিথ্যা মামলায় ফরমায়েশি সাজা দিয়ে খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে : ফখরুল

  • অনলাইন প্রতিবেদক
  •  ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২০:২৪
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর – ফাইল ছবি

৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক দিন উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ২০১৮ সালের এই দিনে প্রতিহিংসাপরায়ণ আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ১/১১-এর জরুরি অবস্থায় সরকারের বিরাজনীতিকরণের মিথ্যা মামলায় ফরমায়েশি সাজা দিয়ে অন্যায়ভাবে আটক করে রেখেছে।

বুধবার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ৫ম কারাবন্দী দিবস উপলক্ষে এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, শুধু ফরমায়েশি সাজা দিয়ে তাকে আটক রাখা হয়নি, তার প্রাপ্য জামিনের অধিকার কেড়ে নিয়ে ২৫ মাস অন্যায়ভাবে কারাগারে বন্দী রেখেছিল। বন্দী থাকা অবস্থায় সু-চিকিৎসার অভাবে তার অসুস্থতা আরো তীব্র হয় এবং তার জীবন হুমকির মুখে পড়ে। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে উঠে। এই আন্দোলনকেও দমন করতে সরকার নিষ্ঠুর নির্যাতন চালায়। দেশ-বিদেশে সর্বত্র বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি সোচ্চার হয়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আইনিভাবে বারবার তার জামিনের আবেদন করা হলেও সরকারের হস্তক্ষেপে জামিন দেয়া হয়নি। আইনি লড়াই করতে বিদেশ থেকে আইনজীবী আসতে চাইলেও সরকারের আপত্তির কারণে তাকে আসতে দেয়া হয়নি। পরে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে শর্ত সাপেক্ষে সরকার তার সাজা ৬ মাসের জন্য স্থগিত করে তাকে প্রকারান্তরে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। তার উন্নত, উপযুক্ত সু-চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকরা তাকে বিদেশে উন্নত বিশেষায়িত হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করানোর সুপারিশ করলেও, সরকার তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেয়নি।

তিনি বলেন, এসব ঘটনায় দিবালোকের মতো সত্য প্রমাণিত হয় যে, সরকারের অগণতান্ত্রিক, গণবিরোধী, আইন পরিপন্থী কার্যকলাপ, দুর্নীতি, লুটপাট, ভোটের নামে প্রহসন নির্বিঘ্নে চালিয়ে যেতে ফ্যাসিবাদী সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্যই ফরমায়েশি সাজা দিয়ে, তার সকল আইনি অধিকার কেড়ে নিয়ে তাকে আটক করে রেখেছে। অপরাধ না করেও ফ্যাসিবাদি সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে হেয় প্রতিপন্ন ও জনমতকে বিভ্রান্ত করতে তার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে, প্রোপাগাণ্ডা ছড়াচ্ছে। কিন্তু জনগণ জানেন ও বিশ্বাস করেন তাদের প্রিয় নেত্রী কোনো অপরাধ করেননি। শুধুমাত্র সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বেগম খালেদা জিয়ার ওপর নির্মম, নিষ্ঠুর জুলুম নেমে এসেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়া জনগণের কল্যাণে, অধিকার আদায়ে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নিরন্তরভাবে লড়াই করে চলেছেন। এজন্য জনগণ তাকে ‘দেশনেত্রী’, ‘আপোষহীন নেত্রী’, ‘গণতন্ত্রের মাতা’, বলে অবিহিত করেন। বেগম খালেদা জিয়ার আপোষহীন নেতৃত্বের কারণেই ৯০ দশকে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। একটি সফল গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি, রূপকারও ছিলেন তিনি। স্বৈরাচারের পতনের পর তার হাত ধরেই দেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের নবযাত্রা শুরু হয়েছে। ৯০ পরবর্তী অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে জনগণের বিপুল রায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে তিনি স্বৈরাচারের ধ্বংস স্তূপের ওপর আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের যাত্রা শুরু করেছিলেন। তার নেতৃত্বেই সে সময় বিশ্বে বাংলাদেশ ‘ইমার্জিং টাইগার’ অর্থাৎ উদীয়মান বাঘ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিল। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়েছিল।

মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বন্দী রাখা মানে গণতন্ত্রকে বন্দী রাখা। সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দী রেখে গণতন্ত্রকে বন্দী রেখেছে। বেগম খালেদা জিয়া ও গণতন্ত্র আজ যেন সমার্থক। বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি হলে গণতন্ত্রের মুক্তি হবে। গণতন্ত্রের মুক্তি হলেই বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে। জনগণ আজ গণতন্ত্র পূনরুদ্ধার সংগ্রামে অবতীর্ণ। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, গণতন্ত্র বিরোধী সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি সন্নিবেশিত করে ১০ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ওপর জেল-জুলুম, নির্মম-নির্যাতন হয়েছে, তার অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। আমি সমগ্র দেশবাসীর পক্ষ থেকে সরকারের এই নির্মম নির্যাতনের তীব্র ধিক্কার জানাই। সরকারের অন্যায় চাপ ও অগণতান্ত্রিক কাজের প্রতি মাথানত করেননি, আপোষ করেননি বেগম খালেদা জিয়া। বেগম খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা, রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তিকে জনবিচ্ছিন্ন সরকার ভয় পায়। এজন্যই তার ওপর এত জুলুম নির্যাতন নেমে এসেছে। তিনি বাংলাদেশের মানুষের সাহসের বাতিঘর।

বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন এবং তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানান।