২৯ জানুয়ারী ২০২৩
নিজস্ব প্রতিনিধি
আওয়ামী প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল মিডিয়ার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন। তবে বর্তমানে বাংলাদেশে যে আওয়ামী প্রচার মাধ্যম ছাড়া আর কোন মিডিয়া নেই সেটা তিনি বলেননি। তিনি শুধু বলেছেন, মিডিয়া না থাকলে ডিজাস্টার হয়ে যাবে। রাষ্ট্রই বিনষ্ট হয়ে যাবে। মিডিয়া ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশে কি এখন কোন মিডিয়া আছে? মিডিয়ার নামে আওয়ামী তাবেদার ও দলদাস সাংবাদিকতার যে প্রচারণা চলছে এগুলোকে কি মিডিয়া বলা যাবে?
ভিন্নমত ও আওয়ামী দু:শাসনের চিত্র তুলে ধরার ফলে আমার দেশ-এর গলাটিপে ধরা হয়েছে। সম্পাদককে রিমাণ্ডে নিয়ে নিপীড়ন করা হয়েছে। আওয়ামী প্রধান নির্বাচন কমিশনার যখন মিডিয়া নিয়ে বয়ান দিলেন তখন কি এই বিষয়টি উপলব্ধিতে এসেছিল? তিনি কি ভেবেছেন, আমার দেশ, চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টেলিভিশন ও ইসলামিক টেলিভিশন কেন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে?
রোববার (২৯শে জানুয়ারী) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশন বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি-আরএফইডির নতুন কমিটির দায়িত্বগ্রহণ ও পুরাতন কমিটির দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে মিডিয়া নিয়ে কথা বলেন আওয়ামী প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
তিনি বলেন, মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে খুব একটা বেশি কথা বলার প্রয়োজন পড়ে না। আমরা যদি মিডিয়াকে দেশ থেকে ছয় মাসের জন্য একেবারেই ব্ল্যাকআউট করে দিতে পারি, তাহলে কিন্তু ডিজাস্টার হয়ে যাবে। রাষ্ট্রই বিনষ্ট হয়ে যাবে। মিডিয়া ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি করে। মিডিয়া সবাইকে চাপে রাখে। মিডিয়ার কারণে আমরা কিন্তু চাপে থাকি। কী বলতে কী বলে ফেলি। কোনটা বলতে হবে, কোনটি গোপন রাখতে হবে। কারণ মিডিয়া তো সব প্রচার করে দেবে।
তিনি বলেন, এখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে যোগদানের পর থেকে মিডিয়ার ভূমিকাটা অত্যন্ত কাছ থেকে দেখার আমার সুযোগ হয়েছে। আমরা এমনিও মিডিয়ার সঙ্গে পরিচিত। কারণ ঘুম থেকে উঠেই আমরা পত্রিকা পড়ি। মিডিয়া আমাদের জ্ঞান, মেধা ও দায়িত্ববোধকে জাগ্রত করে। আমরা শুধু বই পড়েই জ্ঞান অর্জন করি তা নয়- যোগ করেন সিইসি।
কাজী হাবিবুল আউয়াল গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা বস্তুনিষ্ঠভাবে সংবাদ সংগ্রহ করবেন, পরিবেশন করবেন। আমাদের মধ্যে যদি কোনো বিচ্যুতি ঘটে এবং সেটি যদি আপনাদের দৃষ্টিতে চলে আসে। সেটি কেন প্রচার করবেন না। আমার বিচ্যুতি ঘটবে কেন? সেগুলো আপনারা করবেন। আপনারা সেটি করেন বলেই ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য অনেকটা তৈরি হয়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, সামনে সাধারণ নির্বাচন আসছে। এ নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রবল আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে রাজনৈতিক কারণে, ঐতিহাসিক কারণে। সেই নির্বাচনটা ঘনিয়ে আসছে। এখানে আপনাদের ভূমিকা যদি বস্তুনিষ্ঠ হয়, তাহলে সবার মধ্যে ইতিবাচক হয়। নির্বাচনে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মিডিয়ার কারণে তারাও সচেতন থাকেন। এমনকি যারা শক্তিমান তারাও মিডিয়ার ভূমিকাকে মূল্যায়ন করেন, যদি তারা বিবেকবান হন।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান বলেন, আপনারা (সাংবাদিক) যা ইচ্ছা লিখতে পারেন। কারণ আপনারা আপনাদের কাজের জন্য নিজেদের কাছে নিজেরা দায়বদ্ধ।
নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেন, নির্বাচনে সাংবাদিকদের বড় ভূমিকা রয়েছে। আপনারা কমিশনের গঠনমূলক সমালোচনা করবেন। পাশাপাশি কমিশনের কার্যক্রম ইতিবাচকভাবে তুলেও ধরবেন। তবে নির্বাচনের ওপর জনগণের নেতিবাচক ধারণা তৈরি না হয়, সেই বিষয়ে সতর্ক থাকবেন।
অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলমসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আরএফইডির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।