মার্কিন কর্মকর্তাদের সিরিজ সফর নিয়ে  আলোচনা

মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের একাধিক কর্মকর্তার ঢাকা সফর নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। দ্বাদশ নির্বাচন প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের অবজারভেশন থাকলেও বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাত যুদ্ধে রূপ নেয়া, সীমান্ত পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে ওঠা, ফের রোহিঙ্গাদের  বাস্তুচ্যুতির আশঙ্কা তথা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা নিয়ে আচমকা উদ্বেগ তৈরির প্রেক্ষাপটে ঢাকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে ওয়াশিংটন। এমনটাই বলছে ওয়াকিবহাল কূটনৈতিক সূত্র। এ নিয়ে বিভিন্ন লেভেলে আলোচনা শুরু হয়েছে। যার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে সিরিজ সফরে আগ্রহী মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর  ও জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। সেগুনবাগিচা স্বীকার করেছে যে, চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে সফরগুলো শুরু করতে চায় ওয়াশিংটন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা মানবজমিনের সঙ্গে আলাপে সম্প্রতি বলেন, তবে চলতি মাসে কোন কোন কর্মকর্তা বাংলাদেশ সফর করবেন তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ওয়াশিংটনের একাধিক সূত্র বলছে, দিনক্ষণ সুনির্দিষ্ট অর্থাৎ সফরসূচির অনেক কিছু এখনো চূড়ান্ত না হলেও চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে মার্কিন উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তার ঢাকা সফর করতে পারেন এমন ধারণা দেয়া হয়েছে।

কাছাকাছি সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়া দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তাও সফর করতে পারেন বলে আভাস মিলেছে। তবে দু’টি সফর একসঙ্গে হবে, না আলাদা তা এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের বিষয়টি ঘনিষ্ঠভাবে দেখভালকারী ঢাকার এক কর্মকর্তা বলেন, দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লু’ও বাংলাদেশ সফরে আগ্রহী।

তবে সফরটি কবে তা এখনো জানায়নি ওয়াশিংটন। তার ধারণা, লু’ পাকিস্তান সফর করতে পারেন। সেই সুবাধে হয়তো তিনি বাংলাদেশ ঘুরে যাবেন। এদিকে বহুল আলোচিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে গঠিত নতুন সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে কাজ করার পরিকল্পনা করছে- এমন প্রশ্নে বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তার ওয়াশিংটনে বলেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করার দিকে মনোনিবেশ করছে যুক্তরাষ্ট্র। লক্ষ্য অর্জনে কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর মধ্যে রয়েছে, মুক্তগণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ ও শ্রম সংগঠনগুলোর সঙ্গে কাজ করা এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠনে উদ্বুদ্ধ করা। এগুলো বাংলাদেশকে আরও বেশি গণতান্ত্রিক হতে সাহায্য করবে বলে মনে করে ওয়াশিংটন।

আফরিন আক্তার বলেন, আমরা গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের বিষয়গুলোকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাই। এ সময় বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত দাবি করে আফরিন আক্তার বলেন, আমরা বাংলাদেশের কৃষকদের সঙ্গে কাজ করছি। শ্রমিক সংগঠকদের সঙ্গে কাজ করছি। আমরা সুশীল সমাজের সমস্ত অংশীজনকে নিয়ে কাজ করছি। এটি করার ক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য হলো বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থে নাগরিকদের অধিকার সংরক্ষণ করা, দীর্ঘমেয়াদে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক দৃষ্টিভঙ্গি দেখে সন্তুষ্ট হয়েছেন জানিয়ে মার্কিন উপ-সহকারী মন্ত্রী বলেন, যা সত্যিই অর্থনৈতিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করা, আমাদের দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমরা যা করার চেষ্টা করছি তার অনেক কিছুই প্রতিফলিত করে।

বাংলাদেশ অবশ্যই শান্তিরক্ষায় (পিস মিশন) আমাদের অন্যতম বৃহত্তম অবদানকারী, এবং আমরা সেই প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে পেরে খুবই আনন্দিত। এদিকে গত বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গা সংকট ও মিয়ানমারে চলমান অস্থিরতা নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতকে সতর্ক করেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লু’। ওয়াশিংটনভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘ইউএস ইনস্টিটিউট অব পিস’ (ইউএসআইপি)-এ বক্তব্যে তিনি বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলেন। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে স্টেট ডিপার্টমেন্ট, ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল ও পেন্টাগনের অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ওই আলোচনা হয়। সেখানে তিনি বলেন, মিয়ানমার পরিস্থিতির সহসাই উন্নতি হচ্ছে না। এ কারণে বাংলাদেশ ও ‘সম্ভবত ভারতের জন্যও’ যে শরণার্থী সংকট ও নিরাপত্তা সমস্যা তৈরি হচ্ছে তা সামনে আরও গভীর হতে পারে।

মানবজমিন