মানুষ জিজ্ঞেস করে, স্যার, আর কত দিন: মির্জা ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমি আপনাদের খুব সরাসরি উত্তর দিতে চাই, আমরা অবশ্যই বের হতে পারব। আমি বিশ্বাস করি, পরিবর্তন হবেই। হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে মানুষকে জেগে উঠতে হবে। কারণ, এ দেশের মানুষ কখনোই পরাজয় বরণ করেনি। মানুষ যখন জেগে উঠেছে, তখন কিন্তু তাদের (ক্ষমতাসীনদের) পরাজয় বরণ করতে হয়েছে।’

দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে হতাশাজনক উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরীর কৃতিত্ব ওই জায়গায় যে এই দুঃসময়ের মধ্যেও তিনি হতোদ্যম হননি। তিনি তাঁর কাজ করে চলেছেন, এখানেই তাঁর বিজয়। আমি এই মানুষদের, গুণীজনদের ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি, কারণ তাঁরা এখনো আমাদের আশার আলো দেখান।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমার খুব কষ্ট হয় যখন দেখি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা বোন, গ্রামের মা-বোনেরা ধর্ষিত হয়। তখন আমি দেখি না যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটা প্রতিবাদ মিছিল বেরিয়ে আসে। যখন টিপাইমুখে বাঁধ তৈরি করতে যায়, সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবাদ করে কোনো মিছিল হয় না। গণতন্ত্রকে যখন ধ্বংস করা হয়, ছাত্রকে যখন পিটিয়ে রক্ত ঝরানো হয়, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো প্রতিবাদ মিছিল বের হয় না। এটা দুঃখের কথা।’

বিএনপির এই নেতা ব্যক্তিগত কষ্টের কথা জানিয়ে বলেন, ‘আমরা এমন একটা সমাজে, এমন একটা পৃথিবীতে বাস করছি, যেখানে আমরা যে মূলবোধগুলোকে সৃষ্টি করেছিলাম, যে আকাঙ্ক্ষার স্বপ্ন দেখছিলাম, এখন মনে হয় সেগুলোর কোনো মূল্যই নেই।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘আগে যখন আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী হেঁটে যেতেন, তখন তাঁর ছাত্ররা দেখে মাথা নত করত যে একজন পণ্ডিত মানুষ হেঁটে যাচ্ছেন। আমাদের সময় ড. আবু মাহমুদ ছিলেন অর্থনীতির এবং আরও যাঁরা শিক্ষক ছিলেন, আমরা তাঁদের দিকে সরাসরি তাকাতেও পারতাম না। কিন্তু এখন যখন দেখি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের দিকে, যখন দেখি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের দিকে, তাঁদের কথা যখন শুনি, তখন লজ্জাই হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘গত ৫০ বছরে এমন একটা শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করলাম, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরকে দেখে আমাদের লজ্জা হয়। ব্যবস্থাটা এমন একটা জায়গায় চলে গেছে।’

এর আগের বক্তা ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্নার বক্তব্যের উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মান্না সাহেব বলেছেন, শিক্ষায় বরাদ্দ নেই। বরাদ্দ তো এখন শিক্ষায় দেওয়ার কথা না। দেবে তো মেগা প্রজেক্টগুলোতে। যেগুলোতে আপনার কমিশন পাওয়া যাবে, প্রচুর আয় হবে।’

বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক মনসুর মুসার সভাপতিত্বে ও কবি আবদুল হাই শিকদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরীও বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, সংবর্ধনা গ্রন্থে তাঁকে নিয়ে তাঁর বন্ধু, সহকর্মী ও ছাত্রছাত্রীরা যে অনুভূতি প্রকাশ করেছে, তা দেখে তিনি আনন্দিত। এর মধ্য দিয়ে তিনি নিজেকে নতুন করে চিনেছেন।

প্রকাশনা অনুষ্ঠানে ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহ–উপাচার্য ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুর রহমান সিদ্দিকী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেজাউল করিম, অধ্যাপক জাহিদুল ইসলাম, অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, অধ্যাপক খলিলুর রহমান, আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরীর সহধর্মিণী লাকি নাসরিন প্রমুখ বক্তব্য দেন।