ঢাকা
বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিষয়গুলো সুরাহার জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এই প্রেক্ষাপটে সংবিধান অনুযায়ী সবার মানবাধিকার সমুন্নত রাখার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ।
শুক্রবার ব্রাসেলসে বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) যৌথ কমিশনের দশম বৈঠকে ইইউর পক্ষ থেকে এমন উদ্বেগ জানানো হয়। বৈঠকে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন ও ইইউর বৈদেশিক সম্পর্ক বিভাগের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পাওলা প্যাম্পোলোনি।
বৈঠকে সুশাসন, গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার, রোহিঙ্গা সমস্যা, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতা, অভিবাসন, জলবায়ু পরিবর্তন, উন্নয়ন সহযোগিতা, শিক্ষা ও আঞ্চলিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে আগামী মাসে ঢাকায় ইইউ-বাংলাদেশ প্রথম রাজনৈতিক সংলাপের অপেক্ষায় উভয়পক্ষ।
শুক্রবার ইইউর ওয়েবসাইটে প্রচারিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতিশীল নাগরিক সমাজকে গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে অভিহিত করে আলোচনায় বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানায় ইইউ। বিশেষ করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে সুনির্দিষ্ট প্রতিবেদন এবং এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের জবাবদিহি নিশ্চিতের ওপর জোর দিয়েছে তারা। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (ডিএসএ) কাঠামোর কারণে অফ ও অনলাইনে নাগরিক মতামতের চর্চা এবং মতপ্রকাশের অধিকার সংকুচিত হওয়া নিয়ে ইইউ উদ্বেগ জানিয়েছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের বাধ্যবাধকতা অনুসরণের পাশাপাশি ডিএসএ যাতে ডিজিটাল অপরাধ দমনবহির্ভূত বিষয়ে যুক্ত না হয়, তার গুরুত্বের বিষয়টিও আলোচনায় উল্লেখ করেছে ইইউ। এ সময় বাংলাদেশ জানিয়েছে, সংবিধান অনুযায়ী সব নাগরিকের মানবাধিকার সুরক্ষায় বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ।
ইইউর ওয়েবসাইটে প্রচারিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যৌথ কমিশনের বৈঠকে দুই পক্ষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি, মানবাধিকার পরিস্থিতি, আইনের শাসন, সুশাসন নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছে। বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচনে বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের অংশগ্রহণের বিষয়ে সরকারের আগ্রহের প্রশংসা করেছে ইইউ।
ইবিএ বা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্যের সর্বোচ্চ সুফলভোগী হিসেবে বাংলাদেশের অব্যাহত সাফল্যের প্রশংসা করা হয়েছে বৈঠকে। আলোচনায় বলা হয়েছে, ইবিএ অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার সুরক্ষার মতো শর্ত যুক্ত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সনদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশ সরকারের জন্য শ্রমমানের অব্যাহত সংস্কার গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের শ্রম খাতের জাতীয় কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করে তার প্রকাশকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন স্বাগত জানিয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এসব কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি নিয়মিতভাবে এর পর্যালোচনা এবং রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকার সংশ্লিষ্ট শ্রম আইন সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর তাগিদ দিয়েছে ইইউ। বাংলাদেশ এ সময় বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পগুলোকে নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব করতে গিয়ে যে বিনিয়োগ হয়েছে, সে প্রসঙ্গটি সামনে এনে পণ্যের ন্যায়সংগত মূল্য নিশ্চিতের ওপর জোর দিয়েছে।