রাস্তায় রাতযাপন, ভোর থেকেই মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে বিএনপি নেতাকর্মীরা, ঢাকার প্রবেশমুখে তল্লাশি-আটক

সরকার পতনের একদফা দাবিতে আজ ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে বিএনপি। দুপুর ২টা থেকে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই মহাসমাবেশ শুরু হবে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই নয়াপল্টনে নেতাকর্মীদের ঢল নেমেছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসে রাজধানীতে অবস্থান করা নেতাকর্মীরা ভোর থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসছেন। তাদের মিছিল, শ্লোগানে মুখরিত হচ্ছে গোটা নয়াপল্টন এলাকা। তাদের হাতে দলীয় ও জাতীয় পতাকা শোভা পাচ্ছে। এরই মধ্যে নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে পল্টন থানা পর্যন্ত কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। মহাসমাবেশকে ঘিরে নয়াপল্টন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এবং এর আশপাশের এলাকায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পাশাপাশি সাদা পোশাকেও বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।

এদিকে এরই মধ্যে প্রস্তুত হয়ে গেছে মঞ্চ। মঞ্চের ব্যানারে লেখা হয়েছে, ‘ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পদত্যাগ, অবৈধ সংসদ বিলুপ্তি, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের গঠন, নির্বাচন কমিশন পুনঃগঠন করে তার অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা, বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দির মুক্তি, মিথ্যা গায়েবী মামলা প্রত্যাহার, ফরমায়েশী সাজা বাতিল, অর্থনীতির মুক্তি, ভোটাধিকার এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার একদফা দাবিতে’ মহাসমাবেশ।
ওদিকে পুলিশি হয়রানির ভয়ে আবাসিক হোটেলে উঠেননি বিএনপির অনেক নেতাকর্মী।

সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে অনেকে বেছে নেন সড়কের ফুটপাত। সড়কে কাগজ বিছিয়ে অনেককে শুয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। শুক্রবার বিকালে ঢাকায় আসা জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থানা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদিকা রাজিয়া সুলতানা বলেন, হোটেল কিংবা স্বজনদের বাসা বাড়িতে না উঠে সোজা নয়াপল্টনে চলে এসেছি। রাতেও এখানে থাকবো। কুমিল্লার লাকসাম থেকে আসা যুবদল নেতা ইমরান হোসেন জানান, ঢাকায় ঘনিষ্ঠ স্বজনদের বাসা না থাকায় এখানেই রাত কাটাবেন। হোটেলে উঠলে পুলিশি তল্লাশি ও গ্রেপ্তারের শঙ্কা থাকে। তাই গ্রেপ্তার এড়াতে নয়া পল্টনে খোলা আকাশকেই বেছে নিয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে আজও রাজধানী ঢাকার প্রবেশ পথগুলোতে পুলিশের তল্লাশি চলছে। শনিবার সকালে সরেজমিন আমিনবাজারে দেখা গেছে, প্রতিটি যাত্রীবাহী বাস থামিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে। পুলিশ সদস্যর পাশাপাশি অসংখ্য সাদা পোশাকের পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার সদস্যরা তল্লাশি কাজে অংশ নিচ্ছেন। আমিনবাজার ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের নিচে বেশ কয়েকজনকে আটক করে রাখা হয়েছে।  আটকদের মধ্য থেকে ৩৪ জনকে গাড়িতে করে সাভার থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মানবজমিনের রিপোর্টার এহসান মাহমুদ।

ওদিকে শনিবার  সকাল থেকে বাবুবাজার ব্রিজের নিচে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে কোতোয়ালি, বংশাল ও চকবাজার থানা পুলিশ। সকাল থেকে এ পর্যন্ত ২০ জনকে পুলিশ হেফাজতে নেয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

বাবুবাজার ব্রিজের নিচে চেকপোস্ট বসিয়ে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ধরে ধরে তল্লাশি করা হচ্ছে। ব্যক্তিগত মোবাইলফোনও চেক করছে পুলিশ।

এর আগে গতকাল রাতে ২০ শর্তে বিএনপিকে নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ের সামনে অনুমতি দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ। গত ১৮ অক্টোবর সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ওই মহাসমাবেশ থেকে পরবর্তী চূড়ান্ত আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

 

মানব জমিন