‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া বিএনএম সরকারি মহলের পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত হয়েছে বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা আছে। বিএনপি থেকে বেশ কয়েকজন নেতাকে বের করে এনে নির্বাচনে প্রার্থী করানোর লক্ষ্য নিয়ে দলটি সক্রিয় বলেও প্রচার রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত তেমন কিছু দৃশ্যমান হয়নি। এর মধ্যেই বিএনএমের এমন আলিশান কার্যালয় ও এর ভাড়ার বিষয়টি আলোচনা তৈরি করেছে।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন পেতে গত বছরের অক্টোবরে আবেদন করেছিল বিএনএম। তখন ইসির তালিকায় বিএনএমের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা ছিল পুরানা পল্টনের একটি ভবনে। চলতি বছরের এপ্রিলে মহাখালীতে বিমানবন্দর সড়কের পাশে কার্যালয় স্থানান্তর করে বিএনএম।
নিবন্ধন পাওয়ার তিন মাসের মাথায় এই দলে দ্বন্দ্বের আভাস পাওয়া যায়। নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ১৬ নভেম্বর গুলশানে এক নেতার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে বিএনএমের কাউন্সিল হয়। তাতে আগের ৩১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্রীয় ও জাতীয় স্থায়ী কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। মহাখালীর কার্যালয় বন্ধ করে গুলশানে নতুন কার্যালয়ও নেওয়া হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশান ২ নম্বরে অবস্থিত নতুন কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় আড়াই হাজার বর্গফুটের কার্যালয় গোছগাছের কাজ চলছে। বেশ কয়েকজন শ্রমিক কাজ করছেন। কেউ দরজা রং করছেন, কাচের দরজা দিয়ে চেয়ারম্যান-মহাসচিবের বসার কক্ষ তৈরি ও বোর্ড দিয়ে ‘ফলস সিলিং’ তৈরির কাজ হচ্ছে।
গুলশান ২ নম্বরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বিএনএমের কার্যালয়ের আশপাশে একাধিক পাঁচ তারকা হোটেল রয়েছে। এই এলাকায় বাণিজ্যিক স্থাপনার ভাড়াও বেশ চড়া। বিএনএমের নেতারা এই কার্যালয়ের ভাড়ার বিষয়ে কিছু বলতে চাননি। তবে যে ভবনে কার্যালয়, সেখানকার একটি সূত্র জানায়, কার্যালয়টির জায়গায় আগে একটি মানবসম্পদ রপ্তানি প্রতিষ্ঠানের অফিস ছিল। জায়গাটির ভাড়া ছিল দুই লাখ টাকা।
কার্যালয়ের জায়গার মালিক মারফত আলী নামের এক ব্যক্তি। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কত টাকায় ভাড়া দিয়েছি, তা ওই দলের নেতাদের কাছ থেকে শোনেন। এই বিষয়ে আমি কোনো বক্তব্য দেব না।’
গতকাল দুপুরে কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন বিএনএমের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর। তিনি বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য। কার্যালয়ের প্রসঙ্গে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আগের কার্যালয়টি ছোট ছিল। দল বড় হচ্ছে, নির্বাচনী কার্যক্রমের জন্যও বড় জায়গার প্রয়োজন ছিল। দলের সদস্যরাই কার্যালয়ের ভাড়া পরিশোধ করছেন। অনেকে অনুদানও দিচ্ছেন।
নাজমুল হুদার জায়গায় তৃণমূলের ‘আশ্রয়’
আরেক নতুন নিবন্ধিত দল তৃণমূল বিএনপির বর্তমান কার্যালয় রাজধানীর পল্টনে মেহেরবা প্লাজার ১৬ তলায়। কার্যালয়ে প্রবেশের দুটি দরজা। একটিতে ছোট করে তৃণমূল বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় লেখা। তবে এই দরজার ওপরের দিকে ‘চ্যান্সারি ল ক্রনিকলস’-এর সাইনবোর্ড টানানো। আরেক দরজার ওপরের দিকে ‘বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা’র সাইনবোর্ড টানানো।
দলটির ভাইস চেয়ারপারসন সালাম মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, এই জায়গা নাজমুল হুদার কেনা। এটাকে এখন দলের স্থায়ী কার্যালয় বলা যায়। ভাড়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এখানে অন্য আইনজীবীদের কার্যালয়ও আছে।
তৃণমূল বিএনপির নেতারা জানান, এই কার্যালয়ের জায়গাটি দলের প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল হুদার। তাঁর মেয়ে ও বর্তমানে দলটির নির্বাহী চেয়ারপারসন অন্তরা সেলিমা হুদা জায়গাটি দলকে ব্যবহার করতে দিয়েছেন। এর জন্য দলের কাছ থেকে কোনো ভাড়া নিচ্ছেন না। নির্বাচন সামনে রেখে এই কার্যালয় থেকে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
প্রথম আলো