মন্ত্রী-এমপি সমর্থিত প্রার্থীর দাপট

মন্ত্রী-এমপি সমর্থিত প্রার্থীর দাপট.উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার না করতে আওয়ামী লীগ নির্দেশ দিলেও তা মানেননি অধিকাংশ এমপি। আগামীকাল বুধবার প্রথম ধাপে যে ১৪০ উপজেলায় নির্বাচন হবে, অধিকাংশে রয়েছেন এমপি সমর্থিত প্রার্থী। বিরোধী দলহীন নিরুত্তাপ নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজন ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বীর ওপর দাপট দেখাচ্ছেন। এতে ভোটের দিন সংঘাতের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

 

বিএনপিসহ সব বিরোধী দল উপজেলার ভোটও বর্জন করেছে। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে আওয়ামী লীগ এবার দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দেয়নি। দলটির সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশ আসে মন্ত্রী-এমপির স্বজন প্রার্থী হতে পারবেন না। পরে নমনীয় হয়ে স্বজনের ব্যাখ্যায় বলা হয়– মন্ত্রী ও এমপির স্ত্রী-সন্তানরা ভোট করতে পারবেন না। নির্বাচন প্রভাবমুক্ত রাখতে নির্দেশ ছিল– এমপিরা কোনো প্রার্থীর পক্ষ নেবেন না; কিন্তু তা হয়নি।

প্রায় প্রতি উপজেলাতেই চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে স্থানীয় এমপির সমর্থিত প্রার্থী রয়েছেন। এমপির বিরোধী বলয়ের প্রার্থীও রয়েছেন। দু’পক্ষই ক্ষমতাসীন দলের হওয়ায় সংঘাতের শঙ্কা তৈরি করেছে। যেমনটা হয়েছিল গত ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন ঘিরে।

আবার কিছু উপজেলায় এমপিবিরোধী দুর্বল হওয়ায় সেখানে নির্বাচন অনেকটাই আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়েছে। প্রথম ধাপে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও নোয়াখালীর হাতিয়া, ফেনীর পরশুরাম, বাগেরহাট সদর, মুন্সীগঞ্জ সদর ও মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় ভোট হবে না। এ পাঁচ উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা ‘ডামি প্রার্থী’ সরে যাওয়ার পর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। জয়ীরা স্থানীয় এমপির সমর্থিত হিসেবে পরিচিত। হাতিয়ায় স্থানীয় এমপি মোহাম্মদ আলীর ছেলে আশিক আলী বিনা ভোটে জয়ী হয়েছেন। ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ ছিলেন তাঁর মা আয়েশা আলী, যিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। শিবচরে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক সেলিম মিয়ার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন তাঁর স্ত্রী ফাহিমা আক্তার।

গতকাল সোমবার রাতে স্থগিত করা হয়েছে নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। তাই প্রথম ধাপে ১৫০ উপজেলায় নির্বাচনের তপশিল হলেও শেষ পর্যন্ত ভোট হবে ১৪০টিতে। এর তিনটিতে চেয়ারম্যান পদে ভোট হবে না প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ায়। একই কারণে পাঁচটি করে উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট হবে না। মোট আট চেয়ারম্যান, ১০ জন করে ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিনা ভোটে জয়ী হয়েছেন। তপশিল ঘোষণা হলেও ছয় উপজেলায় ভোট হচ্ছে না মামলা, মৃত্যুজনিত কারণ এবং ধাপ পরিবর্তনে।

নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদ নির্বাচন স্থগিত
কুমিল্লা ও নাঙ্গলকোট প্রতিনিধি জানান, ভোটের এক দিন আগে স্থগিত করা হয়েছে নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। গতকাল রাত ১১টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুনীর হোসাইন খান। ইসির উপসচিব (নির্বাচন পরিচালনা-২) আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ছালেহা বেগম মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণার জন্য হাইকোর্টে রিট করেন। গত ২৫ এপ্রিল হাইকোর্ট মনোনয়নপত্রটি বৈধ প্রার্থীর তালিকায় অন্তর্ভুক্তি এবং প্রতীক বরাদ্দের জন্য আদেশ দেন। পরে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে ইসি আপিল করে। ৬ মে এ বিষয়ে আদালত কোনো আদেশ দেননি। তাই পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ৮ মে অনুষ্ঠেয় নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদে সব পদের নির্বাচন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

টিকতে পারছেন না এমপির স্বজনের প্রতিদ্বন্দ্বীরা
বগুড়া ব্যুরো জানিয়েছে, জেলার ১২ উপজেলার মধ্যে প্রথম ধাপে যে তিনটিতে বুধবার ভোট হবে, সেখানে এমপির স্বজনের প্রতিদ্বন্দ্বীরা চাপে রয়েছেন। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস মিলেছে।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, পরিস্থিতি অনুকূলে নিতে নানা কৌশল নিচ্ছেন এমপিরা। তাদের স্বজনের ‘হুমকি’তে সারিয়াকান্দির দুই প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে গেছেন। একই কারণে সোনাতলায় এমপির ভাইয়ের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে অভিযোগ করেছেন। আর গাবতলীর ৯৮ কেন্দ্রকেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
বগুড়া-১ আসনের অন্তর্ভুক্ত সারিয়াকান্দিতে বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রেজাউল করিম মন্টুর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন স্থানীয় এমপি সাহাদারা মান্নানের ছেলে শাখাওয়াত হোসেনসহ চারজন। সোনাতলায় এমপির ছোট ভাই মিহাদুজ্জামান লিটন প্রার্থী হয়েছেন। তিনি বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী দলটির প্রস্তাবিত কমিটির সহসভাপতি জাকির হোসেন।

রেজাউল করিম মন্টু ও জাকির হোসেনের অভিযোগ, ভোটে প্রভাব বিস্তার করছেন এমপি। দলের নেতাদের হুমকি দিচ্ছেন তাদের পক্ষে কাজ করতে। সারিয়াকান্দিতে দুই প্রার্থী আবদুস সালাম ও আশিক আহম্মেদ ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে নির্বাচন থেকে সরে গেছেন।

সারিয়াকান্দির ইউএনও তৌহিদুর রহমান বলেন, কিছু ভোটার মৌখিকভাবে অভিযোগ করছেন তাদের নাকি এমপির স্বজন হুমকি দিচ্ছে। তাদের আশ্বস্ত করেছি, নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবেন।
সোনাতলার মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে এমপির ভাই লিটনের বিরোধ পুরোনো। মেয়রের বিরুদ্ধে দুটি মামলার বাদী লিটন। তবে এবার লিটনের পক্ষে ভোটের মাঠে নেমেছেন জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন, মামলার ঘানি টানতে টানতে হাঁপিয়ে উঠেছি। তাই মামলা প্রত্যাহারের আশ্বাসে লিটনের পক্ষে প্রচারে নেমেছি; হুমকি-ধমকিতে নয়।

মিনহাদুজ্জামান লিটন বলেন, আমার বোন এমপি। তাই নির্বাচনের কাজে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ নেই। ভোট হয়ে গেলে যোগাযোগ করব। এমপি সাহাদারা মান্নান বলেন, প্রভাব বিস্তারের প্রশ্নই আসে না। আমি ঢাকায় আছি।

এমপির সমর্থিতরা মাঠে সবল
নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ জানান, ফুলপুরে চেয়ারম্যান পদে পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান স্থানীয় এমপি শরীফ আহমেদের ‘স্থানীয় প্রতিনিধি’ হিসেবে পরিচিত। এমপির প্রভাবে হাবিবুর রহমান ভোটের মাঠ নিজের দখলে রেখেছেন বলে অভিযোগ প্রতিদ্বন্দ্বীদের।

বর্তমান চেয়ারম্যান ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আতাউল করিম রাসেল বলেন, ভোটে অনিয়ম করতে নানা পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে। এজেন্ট না দিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে।
দলের নির্দেশ উপেক্ষা করে প্রার্থী হয়ে বিএনপি থেকে বহিষ্কার হওয়া এমরান হাসান বলেন, নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। পদে পদে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।

ময়মনসিংহ-১ আসনের এমপি মাহমুদুল হক সায়েম তাঁর নির্বাচনী এলাকা হালুয়াঘাটে আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি নাজিম উদ্দিন ও ধোবাউড়ায় উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ডা. আসাদুজ্জামান আকন্দ সাগরকে সমর্থন দিচ্ছেন। এমপি বলয়ের নেতাকর্মী এ দুই প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামায় অন্য প্রার্থীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। কেন্দ্রেও এর প্রভাব পড়ার শঙ্কা করছেন প্রার্থীরা।

বিএনপি থেকে বহিষ্কার হওয়া প্রার্থী আবদুল হামিদ খান হালুয়াঘাটে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন। তিনি অভিযোগ করেন, এমপি একজন প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছেন। ভোটেও প্রভাব খাটাচ্ছেন।
আরেক প্রার্থী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কামরুজ্জামান বলেন, এমপি নিজে রাতের বেলায় বিভিন্ন বাজারে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে বলছেন। লিফলেটও বিতরণ করেছেন। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে জানিয়েছি, পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ধোবাউড়া উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ডেভিড রানা চিসিমও নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ করেছেন এমপির বিরুদ্ধে।

নেত্রকোনার দুর্গাপুর ও কলমাকান্দায় এমপি মোস্তাক আহমেদ রুহী চেয়ারম্যান পদে দুই প্রার্থীকে সমর্থন দিচ্ছেন। কলমাকান্দায় এরই মধ্যে সংঘর্ষও হয়েছে এমপি সমর্থিত ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মধ্যে।

রাজশাহীতে এমপি ফারুকের প্রভাব
রাজশাহী ব্যুরো জানিয়েছে, যে দুই উপজেলায় ভোট হবে, তাতে তানোর ও গোদাগাড়ী উপজেলা নিয়ে গঠিত রাজশাহী-১ আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে প্রভাব বিস্তার করেছেন বলে প্রতিদ্বন্দ্বীরা অভিযোগ করেছেন। তানোরে বর্তমান চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশীদ ময়না এমপির ভাতিজা। চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, এমপি ময়নার পক্ষ নিয়ে প্রভাব খাটাচ্ছেন। আমার কর্মী ও সমর্থকদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। তারা কেন্দ্র দখল করতে চায়। এসব ঘটনা উল্লেখ করে নির্বাচন অফিসে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তবে কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না।

তবে নির্বাচনের মাঠে এমপির প্রভাব অস্বীকার করে ময়না বলেন, এমপির সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকতেই পারে। আমার নিজস্ব সমর্থন এলাকায় রয়েছে। তাতেই জয়ী হব।

গোদাগাড়ীর চেয়ারম্যান প্রার্থী রবিউল আলম ও বেলাল উদ্দিন সোহেলের অভিযোগ, বর্তমান চেয়ারম্যান ও প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম এমপি ফারুক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ। এমপি তাঁকেই জেতাতে কাজ করছেন।
আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী গোদাগাড়ী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি রবিউল আলম বলেন, নিরপেক্ষ ভোট হবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। জাহাঙ্গীর এমপির নাম করে ভোট চাচ্ছেন। এসব কারণে ভোট নিয়ে মানুষের আগ্রহ নেই।

সিরাজগঞ্জে মাঠে নেমেছেন এমপি
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, কাজীপুরে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন তিন আওয়ামী লীগ নেতা। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের এমপি তানভীর শাকিল জয় প্রচার চালাচ্ছেন খলিলুর রহমান সিরাজীর পক্ষে। এমপির সমর্থিত প্রার্থী দুই প্রতিদ্বন্দ্বী আশরাফুল আলম ও আবুল কালাম আজাদকে ভোটের মাঠে বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নির্বাচন কমিশন খলিলকে দুবার শোকজ করেছে।

সদর উপজেলায় এমপি জান্নাত আরা হেনরী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক রিয়াজ উদ্দিনের পক্ষ নিয়েছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রাশেদ ইউসুফ জুয়েল আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন। বেলকুচির এমপি আবদুল মমিন মণ্ডল সমর্থন দিয়েছেন তাঁর প্রতিষ্ঠান মণ্ডল গ্রুপের কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম সরকারকে। অন্যদিকে, সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস এবং তাঁর পরিবার ও স্বজন সমর্থন দিয়েছেন আরেক প্রার্থী বদিউজ্জামান ওরফে বদি ফকিরকে। এমপির সমর্থনে আমিনুল ইসলাম দাপটের সঙ্গে প্রচার চালাচ্ছেন। থানা ঘেরাও করে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে পুলিশের সামনে পিটিয়েছে তাঁর সমর্থকরা।

চট্টগ্রামের চার উপজেলায় সংঘাতের শঙ্কা
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানিয়েছে, প্রথম ধাপে বিভাগের ৩০ উপজেলায় ভোট হওয়ার কথা ছিল। নোয়াখালীর হাতিয়া ও ফেনীর পরশুরামের সব পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ায় ভোট হবে ২৮ উপজেলায়।

কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিএনপির সদ্য বহিষ্কৃত আহ্বায়ক রমিজ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের চার চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এতে আওয়ামী লীগের ভোট ভাগ হবে। বিএনপি থেকে বহিষ্কার হলেও দলের নেতাকর্মী আমার সঙ্গে। এতে নির্বাচনে জয়ী হওয়া নিয়ে শঙ্কিত আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। তারা কেন্দ্র দখল ও নেতাকর্মীকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে।

সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী বিএনপির সাবেক নেতা মাজহারুল ইসলাম মিঠু। তিনি বলেন, এখানে আওয়ামী লীগের দুই নেতা প্রার্থী। দীর্ঘদিন এ উপজেলায় সুষ্ঠু ভোট হয় না। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের হুমকির কারণে ভোটাররা কেন্দ্রে যাবেন কিনা সন্দেহ আছে।

কক্সবাজারের সদর উপজেলায় সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে। এখানে প্রার্থী হওয়া আওয়ামী লীগের দুই নেতার একজন দলের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান। তিনি কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র। অন্যজন কক্সবাজার পৌরসভার টানা চারবারের মেয়র নুরুল আবছার।

দুই নেতার পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত কক্সবাজার আওয়ামী লীগ। নুরুল আবছারের পক্ষে মাঠে নেমেছেন বর্তমান পৌর মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মাহমুদুল করিমসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর একাংশ। অন্যদিকে মুজিবুর রহমানের পক্ষে মাঠে আছেন কক্সবাজার শহর আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহাম্মদ নজিবুল ইসলামসহ আওয়ামী লীগের আরেকটি অংশ। নেতাকর্মী বিভক্ত হওয়ার সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে।

চেয়ারম্যান প্রার্থী মুজিবুর রহমান বলেন, ‘কে, কাকে সমর্থন দিয়েছেন তা দেখার বিষয় না। আওয়ামী লীগের কয়েকজন ছাড়া সবাই আমার পক্ষে।’
নোয়াখালীর সুবর্ণচরেও আওয়ামী লীগ বিভক্ত। এখানে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন স্থানীয় এমপি মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে আতাহার ইশরাক সাবাব চৌধুরী। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম।

এমপির ভাইকে জেতাতে জালিয়াতির বুদ্ধি
বরিশাল ব্যুরো জানিয়েছে, পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে ভোটারদের কেন্দ্রে না যেতে প্রচার চালাচ্ছে বিএনপি ও জামায়াত। এ উপজেলায় চার প্রার্থীর মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াউল আহসান গাজী ও বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা ফাইয়াজুল কবির তালুকদারের মধ্যে দ্বিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

বাকেরগঞ্জের স্থানীয় এমপি মেজর জেনারেল (অব.) হাফিজ মল্লিকের ভাই আবদুস সালাম মল্লিক ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। সালামকে জয়ী করতে জালিয়াতির কৌশল নিয়ে এমপির উপস্থিতিতে একটি বৈঠকের ভিডিও সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়েছে। বৈঠকে বক্তব্য দেওয়া কসলকাঠি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হককে গতকাল সোমবার দুপুরে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

সিলেটের মাঠে বিএনপির বহিষ্কৃতরা 
সিলেট ব্যুরো জানিয়েছে, প্রথম ধাপে সিলেটের চার উপজেলা, সুনামগঞ্জের দুই, মৌলভীবাজারের তিন ও হবিগঞ্জের দুই উপজেলায় নির্বাচন হবে। প্রায় প্রতিটি উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতার প্রতিদ্বন্দ্বী নিজ দলের সহকর্মী। তবে বিশ্বনাথে বিএনপির পাঁচজন, সুনামগঞ্জের দিরাই ও শাল্লায় দু’জন করে বহিষ্কৃত নেতা প্রার্থী হয়েছেন।
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান এমপি শাহাবউদ্দিন আহমদের ভাগনে শোয়েব আহমদের বিরুদ্ধে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার অভিযোগ করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বীরা।

শরীয়তপুরে এমপির প্রভাব 
শরীয়তপুর প্রতিনিধি জানান, সদর উপজেলা নির্বাচনে এমপির বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ করেছেন তাঁর চাচাতো ভাই বিল্লাল হোসেন দীপু। তিনি অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত অমান্য করে শরীয়তপুর-১ আসনের এমপি ইকবাল হোসেন অপু চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী দিয়েছেন।

ইকবাল হোসেন অপু এমপি অভিযোগের জবাবে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে আমার চাচাতো ভাই দীপু মিয়াকে নির্বাচনে অংশ নিতে নিষেধ করেছিলাম। আমার সমর্থন না পেয়ে তারা এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে।

সিরাজগঞ্জে ৬ প্রিসাইডিং-পোলিং কর্মকর্তা গ্রেপ্তার
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচনের আগেই প্রার্থীর কাছ থেকে উৎকোচ নিয়ে দুরভিসন্ধির অভিযোগে ৬ প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সদর উপজেলার কাঁদাই গ্রামে গার্ডেন প্যালেস রিসোর্টে গোপন সভার ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান গতকাল রাত ১০টায় নিজ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, সদর উপজেলার কাঁদাই গ্রামে গার্ডেন প্যালেস রিসোর্টে গত রোববার রাতে উপজেলা নির্বাচনের এক প্রার্থীর সঙ্গে গোপন বৈঠকে অংশ নিয়ে গোপন অভিসন্ধির অপরাধে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রার্থীর নাম প্রকাশ করার ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক বলেন, পুলিশ সুপার নিজেই তাঁর গোয়েন্দা টিম নিয়ে কাজ করছেন। শিগগির অভিযুক্ত প্রার্থীর নামও প্রকাশ করা হবে।

সমকাল