ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলায় একটি মন্দিরের প্রতিমায় আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে জড়িত সন্দেহে কয়েকজন নির্মাণ শ্রমিককে মারধর করেছেন স্থানীয় লোকজন। তাতে দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা দুজন সহোদর।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দিবাগত রাত ১টার দিকে একজন এবং রাত আড়াইটার দিকে আরেক শ্রমিক মারা যান।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, পঞ্চপল্লি গ্রামের মন্দিরে প্রতিমার শাড়িটি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। মন্দিরের পাশেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শৌচাগার নির্মাণের কাজে নিয়োজিত ছিলেন কয়েকজন শ্রমিক। এ ঘটনাটি ওই শ্রমিকদের দ্বারা সংঘটিত হতে পারে এমন ধারণার বশবর্তী হয়েই এ হামলার ঘটনা ঘটে।
জেলা প্রশাসক জানান, এ ঘটনার ভেতরে অন্য কোনো রহস্য আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকীকে আহ্বায়ক করে তিন সদসের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে তিন দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
নিহত শ্রমিক আশরাফুল (২১) ও আশাদুল (১৫) আপন দুই ভাই। তাঁরা মধুখালী উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের চোপেরঘাট গ্রামের শাহজাহান খানের ছেলে। আহত অন্য তিনজন ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাঁদের মধ্যে দুজনের নাম জানা গেছে। একজন হলেন মধুখালীর নওয়াপাড়া ইউনিয়নের তারাপুর গ্রামের মো. নান্নু মণ্ডল (২০) ও আরেকজন বোয়ালমারী উপজেলার মো. সিরাজ।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পঞ্চপল্লি গ্রামের কালীমন্দিরের পাশেই পঞ্চপল্লি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওই বিদ্যালয়ের শৌচাগার নির্মাণের জন্য কয়েকজন শ্রমিক সেখানে কাজ করছিলেন। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মন্দিরে আগুনে প্রতিমার কাপড় পুড়ে যায়। স্থানীয় কিছু লোক ছড়িয়ে দেন নির্মাণশ্রমিকেরা অগ্নিসংযোগ করেছেন। এর জের ধরে স্থানীয় লোকজন ওই বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে নিয়ে শ্রমিকদের মারধর করেন।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, পরিস্থিতি অশান্ত হওয়ার খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে যান। রাত দেড়টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর তিনি ফরিদপুর ফিরে আসেন। তিনি বলেন, আহত ওই শ্রমিকদের উদ্ধার করতে গিয়ে এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে পড়েন পুলিশ সদস্যরা। তাঁদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেলও ছোড়েন স্থানীয় ব্যক্তিরা। এ সময় পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে বিক্ষুব্ধ জনতাকে সরিয়ে আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। রাতেই সেখানে দুজনের মৃত্যু হয়।
এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের পাশাপাশি আজ শুক্রবার ফরিদপুর শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও মধুখালীতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে পঞ্চপল্লি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার পরিবেশ থমথমে। এলাকায় পুলিশের উপস্থিতি ছিল। মন্দির ও বিদ্যালয় পাশাপাশি অবস্থিত। বিদ্যালয়ের পাশে পোড়া অবস্থায় পড়ে ছিল নির্মাণসামগ্রী আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত একটি নছিমন।
পঞ্চপল্লি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অনিমা রানী বালা প্রথম আলোকে বলেন, রোজার মাসে বিদ্যালয়ে নির্মাণকাজ শুরু হয়। ঈদের ছুটি শেষে শ্রমিকেরা বাড়ি থেকে ফিরে গত মঙ্গলবার থেকে আবার কাজ শুরু করেন। দীর্ঘদিন ধরে এখানে নির্মাণশ্রমিকেরা কাজ করছেন।
মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেন বলেন, শটগানের ২৩৭টি ফাঁকা গুলি ছুড়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় তিনিসহ ১১ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
এদিকে আজ বিকেল ৫টার দিকে নিহত দুই ভাইয়ের মরদেহ প্রশাসনের উদ্যোগে নওয়াপাড়া ইউনিয়নের চোপেরঘাট গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। এ সময় ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান তালুকদার, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোরশেদ আলমসহ বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। জানাজা শেষে সন্ধ্যা ৬টার দিকে চোপের ঘাট কবরস্থানে দুজনের দাফন সম্পন্ন হয়।
prothom alo