১৪ মে ২০২৩
অলিউল্লাহ নোমান
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে পাকিস্তান সুপ্রিমকোর্টে আদেশকে সাহসী আদেশ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের বুনিয়াদ গড়ে দিতে সহায়তাকারী তথাকথিত বিচারক এম এ মতিন। গত বৃহস্পতিবার (১১ মে ২০২৩) ইমরান খানের গ্রেফতারকে অবৈধ ঘোষণা করেছে দেশটির সুপ্রিমকোর্ট। পুলিশ দফতরে বসা রুদ্ধদ্বার ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের (আদালত) আদেশে ৮ দিনের রিমান্ডে ছিলেন ইমরান খান। গ্রেফতার চ্যালেঞ্জ করে ইমরানের পক্ষ থেকে সুপ্রিমকোর্টে আইনের আশ্রয় নেয়া হয়েছিল। এই আবেদনের শুনানিকালে এক ঘন্টার মধ্যে সুপ্রিমকোর্টে হাজির করতে নির্দেশ দিয়েছিল প্রধান বিচারপতি ওমর আতা বান্দিয়ালের নেতৃত্বে গঠিত ৩ সদস্যের সুপ্রিমকোর্ট বেঞ্চ। নির্ধারিত এক ঘন্টার মধ্যে ইমরান খানকে সরকার সুপ্রিমকোর্টে হাজির করতে বাধ্য হয়। তখন শুনানী শেষে সুপ্রিমকোর্ট গ্রেফতার অবৈধ ঘোষণা করে অবিলম্বে মুক্তির নির্দেশ দেয়।
পাকিস্তান সুপ্রিমকোর্টের এই আদেশের পর এনিয়ে আলোচনা চলে নেট দুনিয়ায়। দৈনিক মানবজমিন এবিষয়ে বাংলাদেশের দুইজন সাবেক বিচারকের মন্তব্য গ্রহন করে। এতে এম এ মতিন পাকিস্তান সুপ্রিমকোর্টের আদেশকে সাহসী হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। কিছু নীতি বয়ানও দিয়েছেন একই সঙ্গে তিনি। মানবজমিনে তাঁর উক্তিটি- ‘পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের আদেশ সাহসী’ শিরোনাম করেছে। এই শিরোনাম এবং সঙ্গে এম এ মতিনের ছবি দেখে চোখ থেমে যায়। মনে মনে শুধু নিজেকে প্রশ্ন করলাম, তাঁর মুখে কি এমন কথা মানায়!
পাঠক, আপনারা হয়ত অবাক হবেন, আমার মনে উদয় হওয়া প্রশ্নটি নিয়ে। এম এ মতিনের মুখে কেন মানাবে না এই উক্তি? তিনি তো বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের একজন বিচারক ছিলেন। তাঁর মুখেই তো এটা মানাবার কথা!
কিন্তু সবার মুখে সব কথা মানায় না। এবার আসি কেন তাঁর মুখে ‘পাকিস্তান সুপ্রিমকোর্টের আদেশ সাহসী’ উক্তিটি মানায় না। সোজা উত্তর হচ্ছে, এম এ মতিন শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের বুনিয়াদ গড়তে বিচারকের আসনকে ব্যবহার করেছেন। শেখ হাসিনা ফ্যাসিবাদি হয়ে উঠেছেন মতিনদের মত লোভী, স্বার্থপর ব্যক্তিরা বিচারকের আসনকে ব্যবহারের সহযোগিতায়।
একটি পাতানো ষড়যন্ত্রের নির্বাচনের মাধ্যমে ২০০৯ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় বসেন। দ্বিতীয় মাসে (২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯) পিলখানায় সেনা অফিসার হত্যাযজ্ঞে প্রথম টার্গেট অত্যন্ত সফলতার সাথে অতিক্রম করেন তিনি। শুরু হয় দ্বিতীয় টার্গেট বিচার বিভাগকে কব্জায় নেওয়ার পালা। কারণ, এই বিচার বিভাগই এক সময় তাঁকে রংহেডেড (পাগল) বলে রায় দিয়েছিল। একটি দেশের সরকার প্রধানকে রংহেডেড বলে রায় দেওয়ার মত হিম্মত ওয়ালা বিচারপতি বাংলাদেশে ছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনা বিচার বিভাগকে কব্জায় নিয়েছেন, তাফাজ্জাল ইসলাম, খায়রুল হক, মোজাম্মেল হোসেন, সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, এম এ মতিনদের মত স্বার্থপর ব্যক্তিদের ব্যবহার করে। তারা বিচারকের আসনকে অপব্যবহার করে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের বুনিয়াদ গড়ে দিয়েছেন।
একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হবে। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা বিচার বিভাগকে কব্জায় নেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে আমার দেশ অনেক গুলো প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের বিচারকের আসনে বসে উপরে উল্লেখিত ব্যক্তিরা শেখ হাসিনার মানবাধিকার লঙ্ঘনকে কিভাবে সাপোর্ট এবং বিরোধী দলকে ঘায়েল করতে সহযোগিতা করছে, সেটার বিবরণ প্রকাশ করেছিল আমার দেশ ২০১০ সালের এপ্রিলে। অনুসন্ধানী এই প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল-‘চেম্বার মানেই সরকার পক্ষে স্টে’। প্রতিবেদনটিতে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদকে প্রতিষ্ঠা করতে কিভাবে সহযোগিতা করছে, সেটার বিবরণী ছিল প্রমাণসহ।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের আড়াই মাস পর টনক নড়ে তাদের। তারা তখন সিদ্ধান্ত নেয় আমার দেশকে শাস্তি দিতে হবে। বিচারকের আসনকে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে তারা ব্যবহার করবেন। আমার দেশ-আবার কথা বলার কে! আমার দেশকে শাস্তি দিতে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১০ সালের ১ জুন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ থেকে আমার দেশ-এর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে কারণ দর্শানোর জন্য রুল জারি করা হয়। এই রুল জারির আগের দিন সরকার আমার দেশ-এর ডিক্লারেশন হুট করেই বাতিল করে দেয় সরকার। এ যেন ছিল বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত ঘটনা। শুধু তাই নয় ১ জুন ভোর বেলায় সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে শেখ হাসিনার সরকারের পুলিশ বাহিনী গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। ৩১ মে রাত ১০টায় হঠাৎ করেই আমার দেশ-এর প্রকাশনা অনুমোদন (ডিক্লারেশন) বাতিল, ১ জুন ভোর বেলা সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে পত্রিকাটির অফিস থেকে গ্রেফতার করা এবং ওইদিনই সকাল ১০টায় সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ থেকে আদালত অবমাননার অভিযোগে কারণ দর্শানোর রুল জারি, এই ৩টি ঘটনা ঘটে। এই রুলের শুনানিতে কতগুলো ঘটনা ঘটেছে সে গুলো আজকে আমার আলোচনার বিষয়। এতেই পরিষ্কার হবে এম এ মতিনরা কিভাবে ফ্যাসিবাদের বুনিয়াদ গড়ে দিয়েছেন শেখ হাসিনাকে।
(১) তখন প্রধান বিচারপতি ফজলুল করিমের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের আপিল আদালত। তাদের মধ্যে জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে ছিলেন, আবু নাঈম শাহ মোমিনুর রহমান, এম এ মতিন, খায়রুল হক, মোজাম্মেল হোসেন, সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। আমার দেশ-এর আদালত অবমাননার রুল শুনানীর সময় বিচারকদের আচরণ ছিল মারমুখী। অথচ, শপথ নেওয়ার সময় বলতে হয়েছিল অনুরাগ-বিরাগের উর্ধ্বে উঠে ন্যায় বিচার করবেন।
(২) আমার দেশ সম্পাদক তখন কারাগারে। রুলে নির্দেশনা অনুযায়ী সম্পাদক, প্রতিবেদনটির লেখক (রিপোর্টার), প্রধান প্রতিবেদক ও প্রকাশককে আপিল বিভাগে হাজির হতে বলা হয় একমাস পর। তারিখটি এই মুহূর্তে আমার স্মরণে নেই। প্রতিবেদক হিসাবে আমি ও অন্যান্যরা নির্ধারিত তারিখে হাজির হলাম। আপিল বিভাগকে জানানো হল সম্পাদক কারাগারে রয়েছেন। তাই তিনি হাজির হতে পারেন নি। যেহেতু সম্পাদক কারাগারে তাই সময় চাওয়া হল। কিন্তু আপিল বিভাগের ৬ বিচারপতি তখন সময় দিতে নারাজ। পরের সপ্তাহের নির্ধারিত দিনে সম্পাদককে কারাগার থেকে সুপ্রিমকোর্টে হাজির করার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেয়। তাদের এতটাই তাড়াহুড়া ছিল যে, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ও কথা-বার্তায় আঁচ করতে পেরেছিলাম কঠিন কোন শাস্তি দেওয়ার জন্য বিচারকরা মনস্থির করেই বিচারকের আসনে বসেছেন।
(৩) পরবর্তী সপ্তাহে সম্পাদক মহোদয়কে হাজির করলেন কারা কর্তৃপক্ষ। যেহেতু আপিল বিভাগ রুল ইস্যু করেছে। সুতরাং ক্ষমা চাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন সিনিয়র আইনজীবীরা। আমার দেশ সম্পাদকের কথা ছিল একটাই। প্রতিবেদক কোন মিথ্যা বা অসত্য তথ্য পরিবেশন করেনি। আইনজীবীদের সাফ জানিয়ে দিলেন, ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। কোন আইনজীবী তখন শুনানিতে অংশ নিতে রাজি হননি। ফলে সম্পাদক মহোদয় নিজেই শুনানি করবেন, সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন।
(৪) পরবর্তী সপ্তাহে শুনানির তারিখে সম্পাদক মহোদয়কে আবারো কারাগার থেকে নিয়ে আসা হল আপিল বিভাগে। তিনি শুনানি করার জন্য দাঁড়ালেন। ৬ বিচারপতি তখন প্রশ্নবাণে জর্জরিত করলেন তাঁকে। আমাদের মনে হচ্ছিল, রিমান্ডে কোন আসামীকে যেভাবে জিজ্ঞাসাবাদের নামে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়, বিচারকের আসনে বসে তারা তাই করছেন। এমন কি খায়রুল হক এক পর্যায়ে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলেছিলেন-‘আপনি তাহলে চান্স সম্পাদক’। তখন ছিল রোজার মাস। দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বিচারকদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার এক পর্যায়ে সম্পাদক মহোদয় সেন্স হারিয়ে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিলেন। তখন তড়িঘড়ি শুনানি মুলতবি করে বিচারকরা আসন ত্যাগ করেন। কয়েক মিনিটে সম্পাদক মহোদয় কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলে আবারো তারা বিচারকের আসনে বসেন। তখন একবারের জন্যও তারা জিজ্ঞেস করেননি তিনি শুনানি করার মত অবস্থায় আছেন কি না। এক পর্যায়ে সিনিয়র আইনজীবী রফিকুল হকের অনুরোধে শুনানি পরের দিন পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছিল।
(৫) পরের দিনই আবার সম্পাদক মহোদয়কে হাজির করা হয় কারাগার থেকে। আমার দেশ-এর প্রতিবেদনের স্বপক্ষে তথ্যপ্রমাণ বিচারকদের হাতে দেন সম্পাদক মহোদয়। সঙ্গে সঙ্গে এই এম এ মতিন বলে উঠলেন-‘এখানে ট্রুথ ইজ নো ডিফেন্স’। এম এ মতিনের এই কথার সাথে সাথে প্রধান বিচারপতির আসনে বসা ফজলুল করিম বললেন, ‘আমরা এখানে সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের জন্য বসিনি’। তাদের এই কথাকে সমর্থন জানিয়ে আবু নাঈম বললেন-‘সভ্যতা ভব্যতা বলে একটা কথা আছে’। সিনহা এবং খায়রুল হকও সায় দিলেন এতে।
(৬) সেদিনই সম্পাদক মহোদয়ের একটি বিশেষ মন্তব্য প্রতিবেদন আদালতের সামনে দেয় সরকার পক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান। ‘স্বাধীন বিচারের নামে তামাশা’ শিরোনামে লেখা বিশেষ মন্তব্য প্রতিবেদনটি বিচারকদের সামনে দেওয়া হয়েছিল আমার দেশ আদালতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে তাদের যুক্তি প্রমান করতে। এম এ মতিন তখন বললেন- সাঙ্ঘাতিক ব্যাপার। এটা নিয়ে আরেকটি পৃথক আদালত অবমাননার মামলা হওয়া দরকার। এই মামলার সাথে নয়, এটা নিয়ে আরেকটি পৃথক আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের করার জন্য অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দিলেন এম এ মতিন। তখন অন্যান্যরাও সায় দিলেন তার সাথে। সে নির্দেশনা অনুযায়ী পরের দিনই অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর থেকে আরেকটি অবমাননার মামলা দায়ের করা হয়েছিল আমার দেশ-এর বিরুদ্ধে।
(৭) প্রথম মামলাটির শুনানি শেষে সেদিনই আমাদের বিরুদ্ধ রায় ঘোষণা করলেন। সত্য-মিথ্যা যাচাই না করার প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে তারা আইনের উর্ধ্বে উঠে কারাদণ্ড দিলেন এবং জরিমানা করলেন। জরিমানা না দিলে অতিরিক্ত কারাভোগ করার নির্দেশ দেওয়া হল। সম্পাদক মহোদয় এবং আমি জরিমানা না দিয়ে যথাক্রমে একমাস ও ৭দিন অতিরিক্ত কারাভোগ করেছি। কারণ অন্যায়, অবিচারের এই রায় আমরা প্রত্যাখ্যান করেছিলাম অতিরিক্ত কারাভোগ করার মাধ্যমে।
(৮) একমাস পরই ফজলুল করিম অবসরে যাবে। তাই প্রধান বিচারপতি হওয়ার জন্য কম্পিটিশন ছিল আবু নাঈম মোমিনুর রহমান, এম এ মতিন এবং খায়রুল হকের মধ্যে। এম এ মতিন আমাদের বিরুদ্ধে ঘোষিত রায়টি লেখার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। বিভিন্ন সোর্স থেকে জানতে পেরেছিলাম রায়টি ঘোষণার পর মুজিব কোট গায়ে দিয়ে রাতে বিভিন্ন মন্ত্রীর বাসায় গেছেন প্রধান বিচারপতি হওয়ার তদবীর করতে। শেষ পর্যন্ত সিরিয়ালে তৃতীয় অবস্থানে থাকা খায়রুল হকের উপর আস্থা রাখেন শেখ হাসিনা। শাহ আবু নাঈম এবং এম এ মতিন কিছুটা গোস্বা করলেন। তারা বিচারকের আসনে বসা থেকে বিরত থাকলেন। শেষ পর্যন্ত আমাদের বিরুদ্ধে ঘোষিত রায়টি না লিখে ফাইল ফেরত দিলেন এম এ মতিন।
পাঠক, হয়ত কিছুটা বিরক্ত হয়েছেন লম্বা কাসুন্দি টেনেছি। বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের আচরণ বোঝানোর জন্য এই লম্বা বিবরণ দিলাম। বিচারকের আসনকে অপব্যবহারের নজির হিসাবে আমার দেশ হচ্ছে ছোট একটি উদাহরণ। বিরোধী দলকে গায়েল করতে তারা এভাবেই বিরোধী দলীয় নেতাদের মামলায় দলবাজি করেছেন। শেখ হাসিনার মানবাধিকার লঙ্ঘনকে সায় দিয়েছেন এই বিচারকরা।
কারণ, এদের অবিচারের উদাহরণ দিয়ে শেষ করা যাবে না। তাই, আরেকটি ছোট উদাহরণ দিয়েই শেষ করব আজকের লেখা। ২০০৯ সালের ১৭ নভেম্বর ক্রস ফায়ার নিয়ে রুল ইস্যু করেছিলেন বিচারপতি এ এফ এম আবদুর রহমানে ও ইমদাদুল হক আজাদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ। পরবর্তী ১৪ ডিসেম্বর এই রুলের জবাব দিতে তাদের বেঞ্চে হাজির হওয়ার জন্য র্যাবের উর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তি ও স্বরাষ্ট্র সচিবকে তলব করা হয়েছিল। তখন তাফাজ্জাল ইসলাম প্রধান বিচারপতি। তিনি শেখ হাসিনার নির্দেশে বিরোধী নেতাকর্মীদের ক্রসফায়ার অব্যাহত রাখার সহযোগিতা করতে এ এফএম আবদুর রহমানের বেঞ্চ ভেঙ্গে দিয়ে এ বিষয়ে বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিলেন। এই রুল আর আলোর মুখ দেখেনি এখনো। আপিল বিভাগে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের রিমান্ড চ্যালেঞ্জ করা একটি আবেদনের শুনানিতে তৎকালীন এটর্নি জেনারেল দম্ভোক্তি করে বলেছিলেন, বাবর মারা গেলে আইসেন। বাবরের আইনজীবী জানিয়েছিলেন তাঁর মক্কেল অসুস্থ। এর জবাবে মাহবুবে আলম এই কথা আপিল বিভাগে বলার পরও রিমান্ড বহাল রেখে বাবরকে নির্যাতনের লাইসেন্স দিয়েছিলেন এই এম এ মতিনরা। এরকম আরো বহু নজির রয়েছে। খালেদা জিয়ার বাড়ির মামলা নিয়ে আরো ন্যাক্কারজনক কাণ্ড করেছেন খায়রুল হক, মোজাম্মেল হোসেন ও সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।
সুতরাং পাকিস্তানের আদালতের সাথে তুলনা করে এম এ মতিনদের মুখে কোন কথা শোভা পায় না।
লেখকঃ যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত সাংবাদিক