- ড. আবদুল লতিফ মাসুম
- ১২ আগস্ট ২০২০
‘মগের মুল্লুক’ কথাটি বাংলা ভাষায় একটি বিশেষ অর্থজ্ঞাপক। মধ্যযুগে মগদের অনাচার-অত্যাচারে জর্জরিত ছিল ‘সুবহে বাঙ্গালা’। সে সময়ে আরাকান বা আজকের মিয়ানমার থেকে আসা মগদস্যুদের উৎপাতে বাংলাদেশের উপকূল বিশেষত চট্টগ্রাম অঞ্চল প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়েছিল। ১৬৬৬ সালে বিখ্যাত শায়েস্তা খান তাদের শায়েস্তা করেছিলেন। মগরা চলে গেলেও রেখে গেছে তাদের কলঙ্কিত ‘ঐতিহ্য’। ইতিহাসের নাকি পুনরাবৃত্তি ঘটে। তাই আমরা একই অঞ্চলে একই কায়দায় তাদের নব আবির্ভাব লক্ষ করছি।
এই নব দস্যুরা আরাকান বা মগের মুল্লুক থেকে আসেনি। তারা আমাদের লোক। পার্থক্য শুধু সময়ের এবং নৃতত্ত্বের। ভারতে ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তক লর্ড মেকলে বলেছিলেন, ‘তিনি সৃষ্টি করতে চান এমন সব ভারতীয় যারা ভবিষ্যতে রঙে বাদামি হলেও বিশ্বাস ও আচরণে হবে ব্রিটিশ।’ আমাদের আজকের মগের মুল্লুকের অনুঘটকরা আকারে-প্রকারে বাংলাদেশী হলেও স্বভাব-চরিত্রে মধ্যযুগীয় মগ। তাদের কাছে আইন-কানুন, রীতি-নীতি, সভ্যতা-ভব্যতা ও সমাজ-সংস্কৃতির কোনোই মর্যাদা নেই। তাদের শুধুই ‘সোনার হরিণ’ চাই।
দায়েরকৃত মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ৩১ জুলাই বিকেলে মেজর (অব:) সিনহা মো: রাশেদ খান সঙ্গী সাহেদুল ইসলাম ওরফে সিফাতকে নিয়ে ভিডিও চিত্র ধারণের জন্য কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছড়ার একটি পাহাড়ে যান। দৃশ্যয়ন শেষে রাত সাড়ে ৯টার দিকে নিজস্ব গাড়িতে ফেরার সময় শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে গাড়িটি থামানো হয়। এ সময়ে নিজেকে ‘অবসরপ্রাপ্ত মেজর’ পরিচয় দেন রাশেদ। ওই সময়ে পুলিশের সদস্যরা গাড়ির সামনের বাঁ দিকের দরজা খুলে সিফাতকে টেনে হিঁচড়ে বের করেন। সিফাত দু’হাত উপরে তুলে নিজের এবং গাড়িতে বসা মেজর সিনহার পরিচয় দেন। এতে আসামিরা (পুলিশ) আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে থাকা মেজর সিনহাকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন। ওই সময় সিনহা গাড়ি থেকে নেমে তার দুই হাত তুলে বারবার নিজের পরিচয় দিতে থাকেন। কিন্তু মামলার প্রধান আসামি পুলিশ পরিদর্শক, লিয়াকত আলী সিনহাকে উদ্দেশ্য করে আরো গালি দিয়ে বলেন, ‘তোর মতো বহু মেজরকে দেখেছি, এইবার খেলা দেখামু।’ এরপর লিয়াকত আলী টেকনাফ থানার কুখ্যাত ওসি প্রদীপ কুমার দাসকে ফোন করে শলাপরামর্শ করতে থাকেন। কথোপকথনের একপর্যায়ে লিয়াকত আলী ফোনে ওসি প্রদীপকে বলতে থাকেন, ‘ঠিক আছে, শালারে শেষ কইরা দিতাছি’। ওই সময় কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত সম্পূর্ণ ঠাণ্ডা মাথায় পূর্বপরিকল্পিতভাবে মেজর সিনহার শরীরে কয়েক রাউন্ড গুলি করেন। গুলির আঘাতে সিনহা রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে যান এবং নিজের জীবন রক্ষার্থে ঘটনাস্থল থেকে উঠে পালানোর চেষ্টা করলে অন্য আসামিরা তাকে চেপে ধরে পুনরায় মাটিতে ফেলে দেন। এ সময় মেজর সিনহার মৃত্যু নিশ্চিত করতে পরিদর্শক লিয়াকত আরো এক রাউন্ড গুলি করেন। এর পরপর ঘটনাস্থলে ওসি প্রদীপ এসে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকা মেজর সিনহার শরীর ও মুখে কয়েকবার লাথি মেরে মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হন এবং নিজের বুট জুতা দিয়ে সিনহার মুখে ঘষা দিয়ে মুখমণ্ডল বিকৃত করার চেষ্টা করতে থাকেন। ওই সময় মামলার সাক্ষীদের ও ঘটনাস্থলের আশপাশের লোকজনকে আসামিরা অস্ত্র উঁচিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে তাড়িয়ে দেন। (প্রথম আলো : ৬ আগস্ট ২০২০) এ ছিল মেজর সিনহার বড় বোনের দায়েরকৃত বিবরণী।
মেজর সিনহার মৃত্যুর পর টেকনাফ থানায় পুলিশ উল্টো তার বিরুদ্ধেই হত্যা মামলা করে। পুলিশের ওই এজাহারে বলা হয়, সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয় দানকারী ব্যক্তি কিছুক্ষণ তর্ক করে গাড়ি থেকে নেমে একপর্যায়ে কোমরের ডান পাশ থেকে পিস্তল বের করে গুলি করার জন্য উদ্যত হলে আইসি স্যার (পরিদর্শক লিয়াকত) নিজের ও সঙ্গীয় অফিসার ফোর্সদের জান-মাল রক্ষার্থে সাথে থাকা তার নামে সরকারি ইস্যুকৃত পিস্তল থেকে চার রাউন্ড গুলি করেন’। শুধু তাই নয়, মেজর সিনহার সফরসঙ্গী নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার করা হয়। ওই মামলায় মেজর সিনহা ও তার সফরসঙ্গী সিফাতের বিরুদ্ধে হত্যা ছাড়াও সরকারি কাজে বাধা প্রদান এবং হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করার জন্য অস্ত্র তাক করারও অভিযোগ আনা হয়। এ ছাড়া মেজর সিনহা ও সিফাতের হেফাজত থেকে ৫০টি ইয়াবা ও চার পোটলা গাঁজা উদ্ধারের অভিযোগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে আরেকটি মামলা করে পুলিশ। এটা হচ্ছে এক সাধারণ বিবরণী যা সবসময়ে সব স্থানে পুলিশ করে থাকে। মামলা সম্পর্কে প্রচলিত কথাটা এ রকম- ‘মিথ্যা দিয়েই শুরু, মিথ্যা দিয়েই শেষ’। এ ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হওয়ার কোনো কারণ নেই। ঘটনাটি যখন গোটা জাতির বিবেককে নাড়া দিয়েছে এবং আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তখন দায়েরকৃত মামলা দু’টো পুলিশের জন্য বুমেরাং হয়ে গেছে। কথায় বলে, ‘ঠেলার নাম বাবাজি, ভূত পালায় যার ডরে’। যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে জনসাধারণের ব্যাকুলতার প্রকাশ ঘটেছে তখন নিশ্চয়ই মিথ্যার অবসান হবে। আর ‘নিশ্চয় মিথ্যা অপসৃয়মান’ (আল কুরআন)
গত কয়েক বছর ধরে একই গল্প শুনতে শুনতে নাগরিক সাধারণ হয়রান। আর তা হচ্ছে বন্দুকযুদ্ধের গল্প। ‘যে গল্পের শেষ নেই’ শিরোনামে একটি কলাম লিখেছিলাম এখানেই। তারা জনগণকে কতটা নির্বোধ মনে করলে একই গল্প বলে। আর তা বিশ্বসযোগ্য হবে বলে মনে করে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘বন্দুকযুদ্ধের গল্প সাজায় এসপি’ (ইত্তেফাক, ৫ আগস্ট ২০২০)। ওই মগের মুল্লুকে তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধের রয়েছে দীর্ঘ গল্প। শুধু টেকনাফেই পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ গত দুই বছরে ১৬১ জন নিহত হয়েছে। এসব বন্দুকযুদ্ধের বেশির ভাগই ঘটেছে ৮৪ কিলোমিটার দীর্ঘ কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে। স্থানীয় সূত্রের হিসাবে দুই বছরে এভাবে অন্তত ২০০ জন নিহত হয়েছেন সেই সড়কেই। ঈদের আগের রাতে পুলিশের হত্যার শিকার হলেন সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেয়া মেজর সিনহা। বিস্ময়ের ব্যাপার, পুলিশের কোনো স্তরে কেউই এই হত্যা, মামলা ও মিথ্যা নিয়ে প্রশ্ন করেনি। তাতে বোঝা যায় ‘মিথ্যা প্রতিষ্ঠিত সত্যে পরিণত হয়েছে। ‘ট্রুথ ইজ স্ট্রেঞ্জার দ্যান ফিকশন।’
মেজর সিনহাকে গুলি করার বিষয়টি অস্বাভাবিক। অথচ পুলিশের কাছে এটা ছিল স্বাভাবিক। ট্রিগার হ্যাপি লিয়াকত বা প্রদীপ এভাবেই মানুষ মারায় অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। এটা তাদের কাছে ‘কোনো ব্যাপারই নয়’। প্রায় দেড় দশক ধরে স্বনামে-বেনামে এই হত্যাকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে। সব সরকারের আমলেই এই অন্যায়ের প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে। কখনো সন্ত্রাস দমনের নামে, কখনো মাদকের নামে অথবা ধর্ষণের দায়ে এটি বৈধ করা হয়েছে। মেজর সিনহা হত্যার নির্দেশদানকারী প্রদীপ রীতিমতো স্বনামধন্য! এই ঘটনার আগে মাদক কারবারিদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার প্রকাশ্য হুমকি দিয়েছিলেন। এই কথিত বন্দুকযুদ্ধের জন্য ২০১৯ সালে প্রদীপ কুমার দাস পুলিশের সর্বোচ্চ পদক ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক’-বিপিএম লাভ করেছেন। টেকনাফের বাসিন্দাদের অনেকের অভিযোগ, ওসি প্রদীপ থানার ভেতরে একটি নির্যাতন সেল তৈরি করেছিলেন। ইয়াবা কারবারি সন্দেহে তুলে আনা লোকদের সেখানে নির্যাতন করা হতো। এ জন্য একটি বিশেষ পুলিশ দল গঠন করেছিলেন তিনি। তারা তিনটি নম্বর প্লেটবিহীন মাইক্রোবাস ব্যবহার করতেন। এগুলো ব্যবহৃত হতো মানুষ ধরে আনার কাজে। এ ঘটনা থেকে বাংলাদেশের অন্যত্র গুম আর খুনের ইশারা পাওয়া যায়। ইয়াবা উদ্ধারের নামে মারধর করে টাকা আদায়ের অভিযোগও ছিল। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর বলেছেন, অভিযানের সুযোগ নিয়ে মাদকসহ গ্রেফতার ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন ওসি প্রদীপ। চাহিদামতো টাকা না দেয়ায় অনেকে বন্দুকযুদ্ধের শিকার হতেন। আবার কাউকে মাদক ও অস্ত্র মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন।
বছরের পর বছর ধরে বন্দুকযুদ্ধের নামে যে হত্যাকাণ্ড চলছে তা সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত ছাড়া কিভাবে চলে আসছে? অপরাধ যতই গুরুতর হোক না কেন, মানুষ হত্যার সিদ্ধান্ত কি এভাবে নেয়া যায়? বলা হয়েছে, ‘ক্রসফায়ার’ বলতে কিছু নেই। অথচ সংবাদপত্রে ও সরকারি তথ্য বিবরণীতে বারবার শব্দটি ব্যবহৃত হচ্ছে। মূলত এটি বিচারবহির্ভূত হত্যা। বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি অব্যাহত থাকলে মেজর সিনহার হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটতেই থাকবে। কয়েক বছর আগে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের পরিচয় পাওয়ার পরও তার নিকটাত্মীয়কে নিগৃহীত করেছেন পুলিশ কর্মকর্তা। বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নাল আবদিন ফারুককে রাজধানীতে প্রকাশ্যে বেধড়ক পিটিয়ে আরেক পুলিশ কর্মকর্তা মেডেল ও পদোন্নতি লাভ করেন। বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবে মতিয়া চৌধুরীকে নাজেহাল করেছিল সে দিনের পুলিশ। মোহাম্মদ নাসিমকে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এতটুকু সম্মান দেয়নি তখনকার পুলিশ। আর নিত্যদিন নিগ্রহের কত খবরই না রয়ে যায় অগোচরে। সুতরাং বুঝতে হবে, সিন্দাবাদের দৈত্য ঘাড় মটকাবে সবার। সমাধান, আইনের শাসন।
এই ঘটনাটি যদি ঘটত কোনো সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে, তাহলে প্রদীপ-লিয়াকতদের বুকে হয়তো আরেকটি পদক শোভা বৃদ্ধি করত। একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর হওয়ার কারণে বিষয়টি তোলপাড় তুলেছে। পরিচয় দেয়ার পরও তাকে জীবন দিতে হয়েছে, তাই তার পেশাগত পর্যায়ে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। বিষয়টি এতই সংবেদনশীল হয়ে দাঁড়ায় যে, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী যথার্থভাবেই হস্তক্ষেপ করেছেন। ক্ষোভ প্রশমনে সিনহার মাকেও ফোন করেন তিনি। এ ঘটনা এতটাই আলোচিত হয় যে, সেনাপ্রধান ও পুলিশের মহাপরিদর্শক যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দিয়েছেন, ‘এ ঘটনায় সেনাবাহিনী এবং পুলিশ এমন কোনো আচরণ করবে না, যার মাধ্যমে দুই বাহিনীর সম্পর্কে চিড় ধরে’। তারা বলেছেন, প্রতিষ্ঠান দায় নেবে না। ‘ঘটনায় মর্মাহত’ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, ‘এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা’। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর-আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘পুলিশ আশ^স্ত করেছে এটাই শেষ ঘটনা’। তবে ভবিষ্যৎ একমাত্র ভবিতব্যই বলতে পারে। এ ধরনের ঘটনা বলতে পুলিশ ভাষ্যে কি মেজর সিনহার মতো মানুষের কথা বলা হয়েছে নাকি বন্দুকযুদ্ধের অবসানের ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে- তা স্পষ্ট নয়। তবে দেশবাসী আশা করতে চায়, আর কোনো হত্যাকাণ্ডই যেন না ঘটে। সংবাদপত্র পাঠকের খেয়াল থাকার কথা, এ ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও র্যাবের অভ্যন্তরে ‘বাহিনী’ স্নায়ুযুদ্ধ ঘটেছে। এ ছাড়াও রাজপথে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের ঘটনা অনভিপ্রেত। ঘটনার মনস্তাত্ত্বিক ও কাঠামোগত ভিত্তি বুঝলে ঘটনা নিরসন বা অবসান অসম্ভব নয়। পুলিশ যদি মনে করে থাকে, তারা ‘কিং মেকার’, তাহলে তারা ভুল করবে। আসল ‘কিং মেকার’ জনগণ। কারণ চূড়ান্তভাবে জনগণই সব ক্ষমতার উৎস।
বাংলাদেশের প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত বাহিনী সর্বোচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। অপর দিকে, সব দেশে সব কালে পুলিশ শান্তি-শৃঙ্খলা বিধানে সচেষ্ট। বদনাম সত্ত্বেও সমাজে তাদের স্থায়ী আসন রয়েছে। তবে কোনোকালে ‘পুলিশ স্টেট’ কোথাও কাম্য নয়। পারস্পরিক সম্মান, শ্রদ্ধাবোধ ও ক্ষমতার ভারসাম্যই সহাবস্থানের শর্ত। এ দুর্ঘটনার ফলে সারা দেশে যে জনমত তৈরি হয়েছে তার বার্তা একটাই- বিনাবিচারে এ ধরনের হত্যা বা বন্দুকযুদ্ধ আর নয়। সংবাদপত্রের খবরে প্রকাশ, এ ঘটনার প্রতিবাদে আহূত একটি মানববন্ধনে পুলিশ লাঠিপেটা করেছে। যেখানে খোদ সরকার বিষয়টির প্রতি সহানুভূতিশীল সেখানে মানববন্ধনের মতো নিরুপদ্রব কর্মসূচি বানচাল করার অর্থ কী? তারা কি সরকার ও জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিতে চায়?
অপ্রিয় সত্য কথা নাকি বলতে নেই। মন্ত্রী ও নেতা ওবায়দুল কাদের খোলামেলা মনের মানুষ। তিনি কথাটি বলে ফেলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘একটি অশুভ চক্র নানা ইস্যুতে গুজব রটনা ও অপপ্রচারে লিপ্ত। সিনহা মো: রাশেদ খানের মর্মান্তিক ঘটনাকে ঘিরে কেউ কেউ দুই বাহিনীর মধ্যে উসকানি দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে’। তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনার সরকার কারো হাতে ইস্যু তুলে দেবে না। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহা করা হয়েছে। ‘শেখ হাসিনা সরকারের শেকড় এ দেশের মাটিতে অনেক গভীরে’ উল্লেখ করে কাদের বলেন, গুজব রটিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে কোনো লাভ হবে না। রাজনীতিতে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা থাকে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে সেনাবাহিনীতে এখন ‘সিভিলিয়ান সুপ্রিমেসি’ সুপ্রতিষ্ঠিত। সামরিক-বেসামরিক সম্পর্ক নতুনভাবে বিন্যস্ত। রাজনৈতিক এলিটরা এত দিনে অনেক পরিপক্বতা অর্জন করেছেন। তারা বিশ্বাস করেন, ‘পার্টি কমান্ডস দ্য গান অ্যান্ড দ্য গান মাস্ট নেভার বি অ্যালাউড টু কমান্ড দ্য পার্টি’।
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়