মওদুদ আহমদের শোকসভা বন্ধ, কাদের মির্জার কঠোর হুঁশিয়ারি

Daily Nayadiganta

মওদুদ আহমদের শোকসভা বন্ধ, কাদের মির্জার কঠোর হুঁশিয়ারি – ছবি : সংগৃহীত

সাবেক উপ-রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রবীণ আইনজীবী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মরহুম ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের জন্য বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার ডাকা শোকসভা বন্ধ করে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রোববার সন্ধ্যা ৭টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বসুরহাট পৌরসভার মিলনায়তনে মওদুদ আহমদের মৃত্যুতে শোকসভাকে কেন্দ্র করে র‌্যাব-১১, গোয়েন্দ পুলিশ (ডিবি) ও দাঙ্গা পুলিশ ঘিরে রেখেছে। পৌরসভা কার্যালয়ে কোনো লোকজনকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।

শনিবার বিকেল ৫টায় বসুরহাট পৌরসভা মিলনায়তনে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্মরণে আয়োজিত এক সভা থেকে কাদের মির্জা রোববার বিকেল ৪টায় বসুরহাট পৌরসভার একই স্থানে মওদুদ আহমদের জন্য শোকসভা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন।

এর আগে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই মেয়র আবদুল কাদের মির্জা মওদুদ আহমদের মৃত্যুতে বসুরহাট পৌরসভায় তিন দিনের শোক ঘোষণা করেন।

‘শোকসভা বন্ধের পরিণতি ভালো হবে না’
দুপুরে ফেসবুক লাইভে মেয়র আবদুল কাদের মির্জা বলেন, আজকে এভাবে আমাকে খাটো করার জন্য দলের উচ্চপর্যায় থেকে নিন্ম পর্যন্ত, প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায় থেকে নানা ষড়যন্ত্র চক্রান্ত চলছে। বাংলাদেশে যখন যারা ক্ষমতায় আসে কিছু কিছু লোক মনে করে এটা তার পারিবারিক সম্পত্তি। যা ইচ্ছা তা করবে, যা ইচ্ছা তা বলবে। আজকে আমাকে থামিয়ে দেয়ার জন্য, আমার মুখ বন্ধ করার জন্য, আমাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য, আমার মর্যাদা নষ্ট করার জন্য আজকের এ প্রোগ্রাম (শোকসভা) বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এটার পরিণতি কিন্তু ভালো হবে না। আমি জানি, যারা এ নির্দেশ দিয়েছেন আপনিও এক দিন এ ধরনের নির্দেশে লাঞ্ছিত হবেন, অপমানিত হবেন। অপেক্ষা করুন।

সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই কাদের মির্জা বলেন, এখন থেকে এক ঘণ্টা আগে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি আমাকে জানান, আপনার আয়োজিত নাগরিক শোকসভা ও মিলাদ মাহফিল ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে স্থগিত করা হলো। এ বিষয়ে আমি চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো: আনোয়ার হোসেনকে ফোন করলে তিনি জানান, এ কর্মসূচি পালন করা যাবে না। আপনি প্রয়োজনে নোয়াখালীতে এ কর্মসূচি পালন করুন। তাকে বললাম, শনিবার আমি সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেছি। তিনি বললেন, ওই ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। আজকে জেনেছি, তাই বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছি।

কাদের মির্জা বলেন, যে দেশ গুণী ব্যক্তিকে সম্মান করে, ওই দেশে গুণী ব্যক্তির জন্ম হয়। আমি মনে করি, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ একজন গুণী ব্যক্তি ও আমাদের সম্পদ। তিনি ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধুর আগরতলা ষড়যন্ত্রের মামলায় ড. কামাল হোসেনের সহযোগী আইনজীবী ছিলেন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সংবিধান রচয়িতা ড. কামাল হোসেনের সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশের সংবিধান রচনা করেছেন। আইয়ুব খানের সাথে গোল টেবিল বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর সাথে ছিলেন। তিনি একজন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক।

মির্জা কাদের আরো বলেন, আমি একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে মনে করেছি, মওদুদ আহমেদ একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আমাদের এ অঞ্চলের একজন কৃতি সন্তান। তার জন্য শোকসভা ও মিলাদ মাহফিল করার প্রয়োজন অনুভব করে আমি এ নাগরিক শোকসভা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছিলাম। কিন্তু প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞায় এ কর্মসূচি বাতিল হয়ে গেল।

বসুরহাটের মেয়র আরো বলেন, এটা কেন করা হয়েছে আমি বুঝি। যারা আজকে আমাকে হত্যা করার জন্য ঢাকা থেকে আরম্ভ করে নোয়াখালী, ফেনীতে অপরাজনীতির হোতা, একরাম-নিজাম ও কোম্পানীগঞ্জের জাসদের সভাপতি-সম্পাদক খিজির হায়াত-নুরনবীসহ অস্ত্রধারীদের আজকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। আজকে তাই প্রমাণ করতে চেয়েছে প্রশাসন। ‘আমরা আবদুল কাদের মির্জার কথা শুনি না। আমরা অস্ত্রধারীদের কথা শুনি। আমরা অপরাজনীতি যারা করে তাদের কথা শুনি।’

এ সময় কাদের মির্জা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘আমাদের এক নেতা বলেছেন, কেউ যদি অধম হয়, আমরা কেন উত্তম হব না। নেতাজির এ বক্তব্য মানুষের জন্য, নিজের ক্ষেত্রে সেটা প্রযোজ্য নয়।’

কাদের মির্জা বলেন, ‘আমার ছেলেদের জামিন হয় না। প্রতিপক্ষের ছেলেদের জামিন হয়। কার নির্দেশে, তিনি কে? এই নাম একদিন বেরিয়ে আসবে কোম্পানীগঞ্জের জনগণের কাছে। তাকে জবাব দিতে হবে। প্রশাসন একতরফাভাবে আজকে আমার লোকজনকে হয়রানি করছে। আমার পাশে কাউকে দেখলে তার বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে, তাকে গ্রেফতার করছে।

তিনি আরো বলেন, আজকে এখানে ‘প্রপাগান্ডা’ ছড়াচ্ছে তাদেরকে নাকি উচ্চপর্যায় থেকে বলেছে, আব্দুল কাদের মির্জা মুখ বন্ধ করতে হলে, তার আশপাশে যারা আছে, তাদেরকে যেকোনোভাবে হোক সরাতে হবে। আমার চতুরপাশ থেকে সবাইকে সরিয়ে নেয়ার জন্য এটা কে করছে? এক দিন প্রমাণ হবে। এক দিন বেরিয়ে আসবে কে করছেন। আজকে স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, প্রশাসনে যারা আছেন। আজকে প্রশাসনের কয়েকজন ব্যক্তি মাসোহারা পায়।

ফেসবুক লাইভে আবদুল কাদের মির্জা বলেন, এখানে নানা অনিয়ম করে তারা টাকা উপার্জন করে, আজকে তারা এজন্য মাতাল হয়ে গেছে। আব্দুল কাদের মির্জাকে সরাতে হবে। কারণ আমি অপরাজনীতি, চাকরি বাণিজ্যসহ প্রশাসনকে ব্যবহার করে যে অনিয়ম নোয়াখালী ও ফেনীতে চলছে এর বিরুদ্ধে কথা বলছি। এখানকার সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমি কথা বলছি। এজন্য আজকে আমাকে সরিয়ে দিতে চায়।

তিনি আরো বলেন, যত ষড়যন্ত্র করুন, যত অস্ত্রবাজি করেন, যত চক্রান্ত করেন, আমাকে কোনো অবস্থায় ‘সত্যবচন’ থেকে দূরে সরানো যাবে না। আমি সাহস করে সত্য কথা বলব। এটা কার পক্ষে যাচ্ছে, কার বিরুদ্ধে যাচ্ছে, আমি বলতে পারবো না। আর কোম্পানীগঞ্জে নেতারা আছে, কী করছে জানি না। অভিভাবক যারা নিজেদেরকে দাবি করে। অভিভাবকের কাজ কি এগুলো? শোকসভা বন্ধ করা কি অভিাভকের কাজ? আমি শুধু বলব, গোলাপ ভরা ফুলদানি ভেঙে ফেলতে পার। কিন্তু বাতাস থেকে কখনো গোলাপের গন্ধ মুছে ফেলতে পারবে না।