
সকাল সাড়ে ছয়টার পর হুইসেল বাজিয়ে প্রিজন ভ্যানগুলো পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার মোড় ঘুরে ঢাকার আদালতের হাজতখানায় ঢুকতে থাকে। সকাল সাড়ে সাতটা পর্যন্ত আরও কয়েকটি প্রিজন ভ্যান হাজতখানায় ঢুকে যায়। তখন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের সামনে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও সেনাসদস্য সতর্ক অবস্থানে দাঁড়িয়ে। সকাল আটটার পর কড়া পুলিশি পাহারায় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিকে আদালতের হাজতখানা থেকে বের করে আনা হয়। দীপু মনির পেছনে ছিলেন সাবেক আইজিপি এ কে এম শহিদুল হক। এভাবে একে একে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, শাজাহান খান, ফারুক খান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের আদালতে তোলা হয়।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক এসব মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগ নেতাসহ অন্তত ৩৫ জনকে আজ বুধবার সকালে আদালতে তোলা হয়। সকাল আটটার পর তাঁদের আদালতের এজলাস কক্ষে তোলা হয়। নেতারা তখন পাশাপাশি দাঁড়িয়েছিলেন এজলাসের কাঠগড়ায়। তাঁদের প্রত্যেকের এক হাতে ছিল হাতকড়া।
একপর্যায়ে পুলিশের পক্ষ থেকে আনিসুল হকসহ অন্যদের নতুন করে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়। আদালত সবাইকে ওই সব হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। এরপর শুরু হয় রিমান্ড শুনানি।

নতুন করে দুটি মামলায় আট দিন রিমান্ডে নিয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন আদালত। পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে দুটি মামলায় সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেওয়া হয়। একটি মামলায় আবার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুর।
সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খানের নতুন করে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয় সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের। সাবেক সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানের নতুন করে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।
প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোটের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা এবং পুলিশের সাবেক শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার ও রিমান্ড আবেদনের শুনানি হয়। এরপর আবার তাঁদেরকে প্রিজন ভ্যানে একে একে আদালত চত্বর থেকে নিয়ে যায় পুলিশ।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গত ১৩ আগস্ট রাজধানীর সদরঘাট থেকে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন যখন তাঁদের দুজনকে একত্রে আদালতে তোলা হয়, তখন একদল আইনজীবী তাঁদেরকে লক্ষ্য করে ডিম ছুড়ে মেরেছিলেন। সেদিন দুজনই শারীরিক ও মানসিক হেনস্তার শিকার হন। এরপর গ্রেপ্তার হয়ে আদালতে আসেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনু। এই তিনজনও তখন শারীরিক ও মানসিক হেনস্তার শিকার হয়েছিলেন। এভাবে বেশ কয়েকজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতা শারীরিক ও মানসিক হেনস্তার শিকার হওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে এসব নেতাদের ভোরবেলা আদালতে তোলা হচ্ছে।

আজ সকালে আদালতের কক্ষে দেখা যায়, কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে একজন ব্যক্তি কথা বলছিলেন। তখন একদল আইনজীবী ওই ব্যক্তিকে আদালত কক্ষ থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটিও হয়। পরে ওই ব্যক্তি বেরিয়ে যান। এরপর এসব নেতাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর হওয়ার পর তাঁদের আবার আদালতকক্ষ থেকে হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর আনিসুল হকসহ অন্যদের রিমান্ড শুনানি শুরু হয়।
নির্বিকার আনিসুল হক, উত্তেজিত হাজী সেলিম
ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসানের রিমান্ড শুনানি প্রথমে শুরু হয়। নিউমার্কেট থানায় করা একটি অপহরণ মামলায় তাঁকে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ।

রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী আদালতকে বলেন, ছয় বছর আগে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার বাসা থেকে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা দলের তৎকালীন প্রধান কর্নেল (অব.) মো. তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরীকে তুলে নিয়ে গুম করার ঘটনার প্রধান আসামি হচ্ছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান। তিনি বহু গুম-খুনের জনক। তখন জিয়াউল আহসানের পক্ষের আইনজীবী আদালতকে বলেন, জিয়াউল আহসান একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। তিনি কোনো ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে জিয়াউল আহসানের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

জিয়াউল আহসানের রিমান্ড শুনানির পর সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের রিমান্ড শুনানি শুরু হয়। আনিসুল হককে শাহবাগ থানায় করা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সাংবাদিকদের মারধর ও হত্যাচেষ্টা মামলায় ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। তখন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পিপি ওমর ফারুক ফারুকী আদালতকে বলেন, আনিসুল হক আইনমন্ত্রী থাকাকালে সুপ্রিম কোর্ট বার ও ঢাকা বারের নির্বাচনে নগ্ন হস্তক্ষেপ করেন তিনি। যে কারণেই আইনজীবীদের মধ্যে বিভেদ ও মারামারি হয়েছিল। কারচুপির ভোটে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এসব ঘটনার সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের প্রত্যেককে চিহ্নিত করার জন্য তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।
তবে আনিসুল হকের আইনজীবী এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আনিসুল হক সুপ্রিম কোর্টের একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী। তিনি কোনো ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত আনিসুল হককে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন।
এর বাইরে বাড্ডা থানার আরেকটি হত্যা মামলায় আনিসুল হকের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। পুরো সময় আনিসুল হক বিচারকের দিকে নির্বিকারভাবে তাকিয়ে ছিলেন। শুধু একবার তিনি সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে কথা বলেন।

চকবাজার থানার একটি হত্যা মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য হাজী সেলিমকে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। তখন হাজী সেলিমের আইনজীবী আদালতকে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, হাজী সেলিম তো কথা বলতে পারেন না। আগে একবার একটি মামলায় তাঁর রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছিল। তিনি তো কথাই বলতে পারেন না। আবার তিনি তো অসুস্থ। তাঁর উচ্চ ডায়াবেটিস। হার্টে রিং পরানো।’ তখন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি ওমর ফারুক ফারুকী আদালতে বলেন, একটি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তো কেবল আসামির সঙ্গে কথাই বলেন না। মামলার ঘটনাস্থলও পরিদর্শন করেন।
শুনানি নিয়ে আদালত হাজী সেলিমকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন। রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ার পর হাজি সেলিম উত্তেজিত হন। তিনি তাঁর আইনজীবীকে হাতকড়া দেখাতে থাকেন। এরপর হাজী সেলিমকে অন্য আদালতকক্ষে নেওয়ার পর তিনি চিৎকার করতে থাকেন।

এ ছাড়া ধানমন্ডি ও বংশাল থানার পৃথক দুটি মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। যাত্রাবাড়ী থানার একটি হত্যা মামলায় সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। মোহাম্মদপুর থানার একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আর ধানমন্ডি থানার একটি মামলায় সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর তিন দিনের মঞ্জুর করেন আদালত।
আজ যাঁদের আদালতে তোলা হয়

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক ইলাহী চৌধুরী, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ, সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া, এনটিএমসির সাবেক প্রধান জিয়াউল আহসান, সাবেক সংসদ সদস্য সাদেক খান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহ্মেদ পলক, সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহিদুল হক, সাবেক সংসদ সদস্য তাজুল ইসলাম, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক মন্ত্রী ফারুক খান, এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি মশিউর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ হিল কাফি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত ও সাবেক কাউন্সিলর হাসিবুর রহমানসহ ৩২ জন।
prothom alo
Why are some of them not concenred or agitated? What do they know that the rest of us do not know? With SHit still out there, possibly conniving with India, and her relative crook, the Army Chief still in power, perhaps they are preparing for a military coup that will bring back SH and them to power again? Is our Caretaker Government doing anything about this risk? Are they even concerned about it? I would have thought that their first order of business would be to replace the Army Chief with someone else they can trust, but I see no discussion/movement along those lines. Instead, I see even the Army Chief making a short trip to America (why? meeting co-conspirators?) and returning. That would have been the perfect time to fire him, when he was out of the country. Why the CG is not doing anything about him? Afraid? Unable?