ভোটের মাঠে উড়ছে টাকা হুমকি-ধমকি অব্যাহত

ভোটের মাঠে উড়ছে টাকা হুমকি-ধমকি অব্যাহত 

চট্টগ্রামে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচারে উড়ছে টাকা। ভোটের মাঠ টাকার গন্ধে গরম হয়ে উঠছে। প্রার্থী ও প্রার্থীর এজেন্টকে ভোটারদের মধ্যে টাকা বিলি করার ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির কাছে প্রার্থীরা একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগও তুলছেন। এসব অভিযোগে টাকা বিলির ছবি কিংবা ভিডিওসহ প্রমাণাদি দাখিল করা হচ্ছে। কমিটি শোকজ করার পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে।

সর্বশেষ ২৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া) আসনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে প্রচারের সময় ১ হাজার টাকার নোট বিলি করার ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এর আগে চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে নৌকার প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম এক ভোটারকে ৫০০ টাকার নোট দিচ্ছেন, এমন ছবি ভাইরাল হয়। এ ছাড়া চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট নিয়াজ মোর্শেদ এলিটের টাকা বিলির ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মনজুর আলমের বিরুদ্ধেও টাকা বিলির অভিযোগ উঠেছে। পটিয়ায় টাকা বিলির ছবি ভাইরাল হওয়ার ঘটনাটি নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির নজরে আসে। নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান চট্টগ্রামের সিনিয়র সহকারী জজ শেখ মহিবুল্লাহ বলেন, ‘এ বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ স্বতন্ত্র প্রার্থী সামশুল হকের ছেলে নাজমুল হক চৌধুরী শারুন বলেন, প্রকাশ্যে টাকা বিলির ছবিসহ অভিযোগ করা হয়েছে।

২৭ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে পটিয়া উপজেলার জঙ্গলখাইন ইউনিয়নের আকুবদণ্ডী এলাকায় গণসংযোগে যান নৌকার প্রার্থী মোতাহের। এ সময় টাকা বিলির এ ঘটনা ঘটে। ভিডিওতে দেখা যায়, মোতাহের সরাসরি ৫০০ টাকার একটি নোট চেয়ারে বসা এক বৃদ্ধের হাতে তুলে দেন। এ সময় এক ব্যক্তি ওই বৃদ্ধকে বলেন, ‘দোয়া করবেন, নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন।’

এদিকে পটিয়ায় নৌকার বিরুদ্ধে ভোটকেন্দ্রে গেলে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন কুসুমপুরা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ও যুবলীগ নেতা খোরশেদ আলম। ভিডিওতে খোরশেদ আলমকে বলতে শোনা যায়, ‘৭ তারিখ যেন নৌকার বিপক্ষে গিয়ে কেউ ভোট সেন্টারে না দাঁড়ায়। মোতাহেরুল ইসলাম শুধু এখন শপথ পাঠ করবেন।’

মিরসরাইয়ে নৌকার প্রার্থী মাহবুব রহমান রুহেলের ব্যক্তিগত সহকারী হাবিব খান বলেন, ‘প্রচারে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনের প্রধান এজেন্ট এলিট ভোটারদের হাতে টাকা বিলি করেছেন। ছবিসহ অভিযোগ করেছি আমরা।’ তবে এলিটের দাবি, ভোটারদের প্রভাবিত করতে নয়, প্রচারকাজে নিয়োজিত সমর্থকদের শিঙ্গাড়া খাওয়ার জন্য ৫০০ টাকা দিয়েছি। নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন প্রার্থী।

মিরসরাইয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন ও তাঁর প্রধান এজেন্ট এলিট ১৯ ও ২০ ডিসেম্বর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একসঙ্গে প্রচারে অংশ নেন। এ সময় এক ব্যক্তির হাতে ৫০০ টাকা দিতে দেখা যায় এলিটকে। এ ছবি এখন মিরসরাইয়ের মোবাইলে মোবাইলে ঘুরছে।

ডাবলমুরিংয়ে নৌকার প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চুর প্রতিপক্ষ স্বতন্ত্র প্রার্থী এম মনজুর আলমের বিরুদ্ধে টাকা বিলির অভিযোগ রয়েছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মনজুর।

সাতকানিয়ার স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ মোতালেব গতকাল শুক্রবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে টাকা বিলির ছবিসহ অভিযোগ দেন নৌকার প্রার্থী আবু রেজা নেজামউদ্দিন মোহাম্মদ নদভীর বিরুদ্ধে। তবে অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে নদভী বলেন, এনজিও সংস্থার কর্মী ঋণের টাকা আদায় করছিল। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা যায়, সাতকানিয়ায় দু’জন বোরকা পরা নারী অন্য এক নারীর হাতে নৌকায় ভোট দেওয়ার লিফলেট তুলে দিচ্ছেন। তাদের পাশেই খাতা-কলম নিয়ে বসে আছেন এক ব্যক্তি। তাঁর হাতে ১ হাজার টাকার একটি বান্ডেল রয়েছে।

সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর) আসনের ট্যাকেরঘাট পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ সজীব দেব রায়ের বিরুদ্ধে নৌকা প্রতীকে ভোট চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সজীব দেব তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় নৌকার কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে প্রচারে অংশ নেন। এ অভিযোগ করেন ভাটি তাহিরপুর গ্রামের শফিকুল ইসলাম।

অস্ত্রধারী নিরাপত্তাকর্মী নিয়ে প্রচারের অভিযোগে কুমিল্লা-২ (হোমনা-মেঘনা) আসনের এমপি ও নৌকার প্রার্থী সেলিমা আহমাদ মেরীকে শোকজ (কারণ দর্শানোর নোটিশ) করেছে নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি। অভিযোগে বলা হয়, ‘গত ২৪ ডিসেম্বর হোমনা উপজেলার জয়পুর ইউনিয়ন এলাকায় নির্বাচনী প্রচারে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে দু-একজনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল।’ ৩১ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় আদালতে হাজির হয়ে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

কুষ্টিয়া-৩ আসনের এমপি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক  মাহবুবউল-আলম হানিফকে  (নৌকা)  ভোট না দিলে এলাকা থেকে ঝেটিয়ে বিদায় করার হুমকি দিয়েছেন এক আওয়ামী লীগ নেতা। ওই নেতার নাম আব্দুল কুদ্দুস। তিনি সদর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা। গতকাল শুক্রবার বিকেলে স্থানীয় বাজারে এক পথসভায় তিনি ওই হুমকি দেন। এ সময় তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী পারভেজ আনোয়ারের বাবা প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও কুষ্টিয়া পৌর মেয়র আনোয়ার আলীকেও  হুমকি দেন।

আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘হরিপুরের মানুষ আজকে যারা হানিফ ভাইয়ের সঙ্গে বেইমানি করছেন, তারা কান খুলে শুনে রাখেন, যারা আনোয়ার আলীর ছেলের পেছনে যাচ্ছেন তারা বেইমান। ৭ তারিখের পর হরিপুরের মানুষ আপনাদের ঝেটিয়ে বিদায় করবে। শহরে গেলে লোকে বলবে ওই দেখ বেইমানের জাত। সেই কলঙ্ক থেকে বাঁচতে আমরা তাদের হরিপুরে বসবাস করতে দেব না, বের করে দেওয়া হবে।’

হুমকির বিষয়ে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক এহতেশাম রেজা বলেন, ‘এ ধরনের বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ নেই। এটি আচরণবিধি ভঙ্গের মধ্যে পড়ে। ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে নির্বাচনী প্রচারে ইত্তেফাকের প্রকাশক তারিন হোসেনকে নিয়ে কটূক্তি করায় পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম মিরাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (ইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের কাছে পিরোজপুর-২ আসনের নৌকার প্রার্থী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর মেয়ে তারিন হোসেন এ অভিযোগ দেন।

ইসি সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, অভিযোগ নজরে এসেছে। সত্যতা পাওয়া গেলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 সমকাল