- নাজমুল হক
- ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৯:৫০
১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলো নিরপেক্ষতা বজায় রেখে জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ পরিচালনা করে। ২০০৭ সালে জাতীয় পরিচয়পত্র ইস্যু করে জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করা হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা মানেই শতভাগ ব্যালট পেপারের নিশ্চয়তা। অন্যদিকে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচন জাতির প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের ১৫তম সংবিধান সংশোধনীর রায় ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার রকিবউদ্দিনদের ভোটারবিহীন সংসদ নির্বাচন পরিচালনা, নুরুল হুদার দিনের আলোর ভোট রাতের বেলা, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা না করে কারচুপির মাধ্যমে সরকার গঠনের দায়ভার জাতিকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বহন করতে হবে। এখন দেখার বিষয় আউয়াল কমিশন কী করে!
সাবেক প্রেসিডেন্ট বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমেদ থেকে আবদুল হামিদ পর্যন্ত বাংলাদেশের সব প্রেসিডেন্ট জাতির অভিভাবক হিসেবে নাগরিকদের প্রত্যাশা পূরণ করেছেন কি? বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপ করে থাকেন। রাষ্ট্রপতি সংবিধান মোতাবেক প্রধানমন্ত্রীর সাথে পরামর্শ করে নির্বাচন কমিশন গঠন করেন। ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠিত হলে কেবল সেই সরকারকে গণতান্ত্রিক সরকার বলে। প্রতিবেশী ভারতে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন ঘটে। ভারতে নির্বাচন কমিশন বা ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে ভোট চুরি বা কারচুপির মাধ্যমে সরকার গঠনের কোনো অভিযোগ নেই। আধুনিক বিশ্বের সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা। একটি গণতান্ত্রিক দেশে শক্তিশালী বিরোধী দল থাকে। ক্ষমতাসীন সরকারের ভুল-ত্রুটিগুলো বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা সংসদে তুলে ধরেন। কিন্তু বাংলাদেশে সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা নেই বললেই চলে। জেনারেল এরশাদের আমলে গৃহপালিত বিরোধী দলের প্রধান ছিলেন আ স ম আবদুর রব। ২০১৪ সাল থেকে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করে আসছে গৃহপালিত বিরোধী দল জাতীয় পার্টি।
১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠনের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবার গণতান্ত্রিক সরকার বাধাগ্রস্ত হয়। ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউর রহমান হত্যার মাধ্যমে দ্বিতীয়বার গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ জেনারেল এরশাদ রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে। তৃতীয়বার গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়। ১৯৮৩ সাল থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নিরপেক্ষ নির্বাচন দাবিতে জেনারেল এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদ সরকারের পতন ঘটে। প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমেদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে। ১৯৯১ সালে গণতান্ত্রিক সরকার হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি সরকার গঠন করে। ১৯৯১ সালে শিশু গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু করে। জেনারেল এরশাদের আমলে রাজনৈতিক দলের স্লোগান ছিল- ‘আমার ভোট আমি দেবো যাকে খুশি তাকে দেবো। এই মুহূর্তে দরকার কেয়ারটেকার সরকার, ক্ষমতায় থেকে সংসদ নির্বাচন মানি না মানব না। মাগুরা ও মিরপুরের মতো নির্বাচন মানি না মানব না, কেয়ারটেকার ছাড়া নির্বাচন মানি না মানব না।’ হরতাল, অবরোধ, সচিবালয়ের সরকারি কর্মচারীদের দিগম্বর করা, বাস-ট্রেনে আগুন জ্বালিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ছাত্র সংগঠন, আইনজীবী, শ্রমিক, জনতা, রাজনৈতিক দলগুলো ব্যাপকভাবে আন্দোলন গড়ে তোলে। বাংলাদেশ পুলিশের গুলিতে নিহত হন জিহাদ, ডা: মিলন, নূর হোসেন, বসুনিয়া, দিপালী সাহা প্রমুখ রাজনৈতিক দলের নেতা। বিরোধী দল ১৫৪ দিন হরতাল পালন করে। কেয়ারটেকারের অধীনে ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে। ক্ষমতাসীন দলের অধীনে ১৯৭৩, ১৯৭৯, ১৯৮৬, ১৯৮৮, ১৯৯৬, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে।
বাঙালি জাতি ২৪ বছর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ও পাকিস্তানি জেনারেলদের শোষণ ভুলে গেছে। ক্ষমতা দখল করে রাখার মানসিকতার কারণে রাজনৈতিক দলের লিডারদের সরকারে থাকলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন মানি না। বিরোধী দলে থাকলে সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নিরপেক্ষ নির্বাচন ও কেয়ারটেকার সরকারের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে। এভাবে সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের জন্য রাজনৈতিক শিষ্টাচার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে না পারলে বাংলাদেশের নাগরিকদের কাছে গণতন্ত্র একটি তামাশায় পরিণত হয়ে থাকবে। অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব রয়েছে। বাংলদেশের বড় বড় রাজনৈতিক দলের জাতীয় কাউন্সিলে অনেক অবাক করা বিষয় দেখা যায় । ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কল্যাণে পুরো জাতি ও বিশ্ববাসী দেখেছে। দলীয় কাউন্সিলের জন্য নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয় না। কাউন্সিলরদের কোনো ভোটিং পাওয়ার নেই, কাউন্সিলরদের ভোট দেয়ার সুযোগ নেই। রাজনৈতিক দলের সংবিধানে নির্বাচন কমিশন গঠন, মনোনয়নপত্র বিক্রি, মনোনয়নপত্র দাখিল, একাধিক প্রার্থী বা প্যানেল ইত্যাদি উল্লেøখ থাকলেও তার কোনো চর্চা নেই। ডেলিগেটদের ভোটাভুটির বাধ্যতামূলক কোনো ব্যবস্থা নেই। যেখানে রাজনৈতিক দলের ডেলিগেটদের জাতীয় কাউন্সিলে ভোট দেয়ার কোনো সুযোগ নেই; সেখানে দেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করবে কে?
জাতি আশা করেছিল বাংলাদেশে সংসদ, উপজেলা চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইত্যাদি পদে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে ভোটারদের ব্যালট পেপার দেয়া হবে! ব্যালটের মুড়িতে ভোটারের স্বাক্ষর নেবে প্রিজাইডিং অফিসার। ইভিএম পদ্ধতি নিরপেক্ষ নির্বাচন ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা হবে। ভোটকেন্দ্র দখল ও ব্যালট ছিনতাই হলে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পুলিং ও প্রিজাইডিং অফিসারের চাকরি চলে যাবে ইত্যাদি। কিন্তু বেড়ায় ক্ষেত খাওয়ার মতো। এরশাদের আমলের মতো প্রিজাইডিং অফিসারের সাহায্য নিয়ে ব্যালট ছিনতাই, কেন্দ্র দখল ইত্যাদি অব্যাহত আছে! সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যার নীরব সাক্ষী দেশী-বিদেশী মিডিয়া সিনিয়র সিটিজেন ও দেশপ্রেমিক ভোটার।
সুষ্ঠু এবং অবাধ ও নিরাপদ নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে বাঙালি জাতির অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করতে পারে এভাবে: ১. রাজনৈতিক দলের কাউন্সিল সংবিধানের আওতায় নেতা নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন কমিশন থেকে কমিশনার দিয়ে রাজনৈতিক দলের গণতন্ত্র চর্চা করা; ২. রাজনৈতিক দলের নেতা নির্বাচনের জন্য ভোটাভুটি নিশ্চিত করা; ৩. সুষ্ঠু, অবাধ, নিরাপদ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা; ৪. শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্বাচন কমিশন থেকে নির্ধারণ করে ইউপি মেম্বার পদে এইচএসসি, ইউপি চেয়ারম্যান পদে গ্র্যাজুয়েট, উপজেলা চেয়ারম্যান, সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী পদে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট বাধ্যতামূলক করা; ৫. ঘুষখোর, চাঁদাবাজ, লুটপাটকারী, মাদক ব্যবসায়ী, ঋণখেলাপিকে নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করা; ৬. নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী মেধাবী ছাত্রদের দিয়ে ৫০ জনের ভলান্টিয়ার গ্রæপ তৈরি করা; ৭. ব্যালট ছিনতাই ও ভোটকেন্দ্র দখলকারীর ১৫ বছর জেল দেয়া; ৮. প্রতিটি ভোটকেন্দ্র দখলের জন্য দলের স্থানীয় নেতাদের জরিমানা করা; ৯. সব রাজনৈতিক দলের পোলিং এজেন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; ১০. বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত- এ অপশন বাতিল করা; ১১. প্রতিটি পদে কমপক্ষে পাঁচটি রাজনৈতিক দলের পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তা নিশ্চিত করা; ১২. নির্বাচন কমিশন থেকে পোস্টার ছাপিয়ে দেয়া; ১৩. ৮০ শতাংশের অধিক ভোট পড়লে পুনরায় ভোট গ্রহণ করা; ১৪. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর মামলা থাকলেও কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মীকে গ্রেফতার না করা; ১৫. উপজেলা চেয়ারম্যান, এমপি এবং মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য দু’বারের বেশি সুযোগ না দেয়া; ১৬. জনপ্রতিনিধি হিসেবে দু’বারের বেশি নির্বাচন করা যাবে না; ১৭. উপজেলা চেয়ারম্যান, এমপি, মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী পদের বয়সসীমা ৬৫ বছর করা।
যেহেতু ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতায় থেকে শাসক দল ১৯৭৩, ১৯৭৯, ১৯৮৬, ১৯৮৮, ১৯৯৬, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নির্বাচন পরিচালনা করে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে, বিরোধী রাজনৈতিক দল ও আন্তর্জাতিক সংস্থা ক্ষমতা দখলকারী সরকারের বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির অভিযোগ করে আসছে। শাসক দল ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি, সেহেতু শাসক দলের প্রতি জনমানুষের আস্থার সঙ্কট তা-ই প্রমাণ করে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করা নিয়ে ক্ষমতাসীন কোনো শাসক দলই জনমানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পারেনি। সব ক্ষমতাসীন শাসক দল জনমানুষের মতামত না নিয়ে সংবিধানের দোহাই দিয়ে ক্ষমতায় থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে আসছে। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলোর নিরঙ্কুুশ ম্যান্ডেট দিয়েছে, যা দিয়ে ভোট কারচুপির সুযোগ দেয়া হয়েছে! সে জন্য কেয়ারটেকার সরকারের চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আরপিও সংশোধন করতে পারে। সুশীল সমাজ নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আন্দোলন ও মতামত দিতে পারে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য সংসদে আইন পাস করবে। রাজনৈতিক দল তাদের নির্বাচনী মেনিফেস্টো কেয়ারটেকার সরকার লিপিবদ্ধ করবে।
প্রেসিডেন্ট নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করার জন্য সংলাপ করেন। প্রেসিডেন্ট রাজনৈতিক দল থেকে নির্বাচিত হিসেবে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন উপহার দিতে পারেননি। সে জন্য কেয়ারটেকার সরকার অর্ডিন্যান্স জারি করেই দেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে পারেন। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হলে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। জনগণকে ভোটের মাঠে ফিরিয়ে আনতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীক বাতিল করতে হবে। নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিলে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় এলে জোট-মহাজোট খেলা শুরু হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত জাতির সামনে হাজির হয়ে থাকে। জোট-মহাজোট থেকে ছোট ও মাঝারি দলগুলো বেরিয়ে এলে রাজনৈতিক অঙ্গনে, চা-দোকানে, টেবিল টক, টকশোতে ঝড় ওঠে।
এক তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়েই বড় দু’টি দল বিভিন্ন সময়ে ভেলকিবাজির পরিচয় দিয়ে দেশের সীমাহীন ক্ষতি করেছে। বিরোধী দলে থাকলে তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার লাগে এবং আন্দোলনে জামায়াতকে লাগে। ক্ষমতায় আসার পর আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার লাগে না! জাতির সাথে এ প্রতারণা হয়েছে। এ প্রতারণা বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগ বড়দাগে এগিয়ে রয়েছে।
১৯৯৬ সালে বিএনপি নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রণয়ন করে ক্ষমতা ছেড়েছে। আর যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবিতে আওয়ামী লীগ শত শত মানুষের জীবনহানি করেছে, জ্বালাও পোড়াও, বছরকে বছর হরতাল অবরোধসহ ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড করে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ ও ব্যবসায়-বাণিজ্য নষ্ট করেছে! ক্ষমতায় আসার পর তারাই সংবিধান পরিবর্তন করে এ ব্যবস্থা বাতিল করেছে। আজ সরকার গঠন করতে ভোট লাগে না! জামায়াত জাতীয় স্বার্থে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে আছে। দলটির বিদেশী আধিপত্যবাদী শক্তির কাছে ধরনা দেয়ার সুযোগ নেই। দেশপ্রেমী তরুণদের একটি বড় অংশের কাছে জামায়াত স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের জন্য বিশ্বস্ত হয়ে উঠেছে। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তি দাবিদাররা ভিনদেশী তাঁবেদার হিসেবে পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে।
আজো নিরপেক্ষ নির্বাচন, গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তন, সামাজিক ন্যায়বিচার, সুষম বণ্টন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জামায়াতের প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে। বাঙালি জাতি উঁচুমানের আদর্শিক রাজনৈতিক দল ও লিডারের সঙ্কটে ভুগছে। নাগরিকদের ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য আজো আন্দোলন করতে হচ্ছে। এ দেশের রাজনীতিতে আদর্শিক সঙ্কট থেকে মুক্তি পেতে হলে জোট-মহাজোট খেলা বন্ধ করে একক দলীয় মনোনয়ন দিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনের মতো নিরপেক্ষ সরকার গঠন করে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
লেখক : গবেষক