ভোটডাকাত হাসিনা সরকার ও চোর-ডাকাত ব্যবসায়ীদের কোয়ালিশন এবং ভোটডাকাতির নতুন প্রস্তুতি

ব্যবসাবান্ধব সরকার নিশ্চিত করেছি: শেখ হাসিনা

ফিরোজ মাহবুব কামাল

www.drfirozmahboobkamal.com/blog/ভোটডাকাত-হাসিনা-সরকার-ও-চ/

 চোর-ডাকাত ও ভোটডাকাতদের নেশাগ্রস্ততা 

চুরি-ডাকাতির প্রতি চোর-ডাকাতদের থাকে প্রচণ্ড নেশাগ্রস্ততা। হিরোইনসেবীরা সহজে হিরোইন ছাড়তে পারে না। কারণ, হিরোইনের প্রতি তাদের প্রচণ্ড নেশাগ্রস্ততা। সেরূপ অবস্থা চোর-ডাকাতদের মাঝেও। অর্থ কারো হাতে এমনিতেই আসে না। অর্থ উপার্জন করতে দিবা-রাত্র ভাবতে হয়। কর্মে নেমে মেধা ও শ্রম ব্যয় করতে হয়।  জীবনের ঝুঁকি নিতে হয়। কিন্তু যারা চোর-ডাকাত, তাদের সেরূপ মেহনত করতে হয় না। তারা বরং চুরি-ডাকাতিতে নামে। বছরের পর মেহনত করে সৎ, মেধাবী ও পরিশ্রমী মানুষেরা যা কিছু উপার্জন করে, চোর-ডাকাতগণ তা ঘণ্টা খানেকের মধ্যে লুটে নেয়। এরূপ চুরিডাকাতির মধ্যেই তারা আনন্দ পায়। এ নিয়েই তাদের জীবনে গর্ব ও উৎসব। তাদের সর্বক্ষণের ভাবনা, কি করে নতুন চুরি বা ডাকাতি করা যায় তা নিয়ে। এরাই গণমানুষের পরম শত্রু।                                                                                              

বিষয়টি অবিকল একই রূপ ভোটডাকাতদের ব্যাপারেও। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে জনপ্রিয়তা চাই। জনপ্রিয়তার জন্য শিক্ষা, মেধা, যোগ্যতা ও সুকর্ম চাই। জনগণের ভোট পেতে বছর পর বছর জনগণের মাঝে কাজ করতে হয়। নিজের যে যোগ্যতা আছে -সেটির প্রমাণ দিতে হয়। কিন্তু ভোটডাকাতিতে সেরূপ কোন যোগ্যতা লাগে না। লাগে স্রেফ ভোটডাকাতির সামর্থ্য। চাই বিশাল ডাকাত বাহিনী। ডাকাত দল ও ডাকাতির দক্ষতা থাকলে তারা এক রাতে সমগ্র দেশবাসীর ভোট ডাকাতি করে নিতে পারে। ভোটডাকাতগণ এজন্যই রাজনৈতিক যোগ্যতা অর্জনের বদলে রাজনীতির ময়দানে এবং প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীতে ডাকাত সংগ্রহ করে। তাদের দিয়েই জনগণের ভোট তারা ডাকাতি করে নেয়। শেখ হাসিনা সেটিই করেছে ২০১৮ সালের ৩০ শে ডিসেম্বর নির্বাচনপূর্ব রাতে। 

নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয় ব্যালট পেপার গুণে। কিন্তু সে ব্যালট পেপার কখনোই ভোটারদের হাতে থাকে না। সেগুলি থাকে পুলিশ ও সরকারি প্রশাসনের হেফাজতে। কিন্তু পুলিশ ও প্রশাসনের লোকেরা যদি তাদের হেফাজতে থাকা ব্যালটগুলোতে নিজেরাই তাদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে সিল মারে এবং ব্যালেট বাক্সে ঢুকিয়ে দেয় -তবে জনগণ সেটি রোধ করতে পারে না। এভাবেই ভোটডাকাতি হয়।

 ২০১৮ সালের ৩০ শে ডিসেম্বরের আগের রাতে সেটি ঘটেছে সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে। এটাই হলো সমগ্র মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ভোট ডাকাতি। সেটি সংঘটিত হয়েছে বাংলাদেশে এবং সেটি ভোটডাকাতিতে নেতৃত্ব দিয়েছে শেখ হাসিনা। বহু কুখ্যাত চোরডাকাত-অপরাধীদের ন্যায় হাসিনাও ইতিহাসে এ লিগ্যাসি নিয়ে বহু কাল বেঁচে থাকবে। 

ভোটডাকাতির অকাঠ্য প্রমাণ                                                                                               

চোর-ডাকাত, ধর্ষক বা খুনিরা প্রতিটি অপরাধ করে অতি সতর্কতার সাথে। কিন্তু তারপরও সে অপরাধের সকল আলামত তারা গোপন রাখতে পারেনা। প্রমাণ রেখে যায়। প্রতিটি অপরাধ তদন্তে সে আলামতগুলি পথ দেখায়। এবং অপরাধীদের গ্রেফতার করা হয় এবং বিচারে শাস্তি হয়। 

ভোটডাকতির সেরূপ সুস্পষ্ট আলামত রেখে গেছে শেখ হাসিনার ডাকাত বাহিনীও। ২০১৮ সালের ৩০ শে ডিসেম্বরেরভোটডাকাতির ছয় মাস পর বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। উক্ত রিপোর্টে প্রকাশ পায় যে, ঐ নির্বাচনে ১০৩ টি আসনের ২১৩ টি ভোটকেন্দ্রে শতকরা ১০০ ভাগ ভোট প্রদান করা হয়। এটি অবিশ্বাস্য। শুধু বাংলাদেশ আমলে নয়, এমনকি পাকিস্তান আমলেও যত নির্বাচন হয়েছে সেগুলির কোনটিতেই শতকরা ৭০ ভাগের বেশী ভোট দান হয়নি। ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতেও কোন নির্বাচনে শতকরা ৬০ ভাগের বেশি ভোট পড়ে না। তাই প্রশ্ন হলো ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে কি করে সম্ভব হলো যে ২১৩ টি ভোটকেন্দ্রে সবাই অর্থাৎ শতকরা ১০০ ভাগ ভোটার ভোট দিল? ভোটার তালিকা করা হয়েছে কিছু বছর আগে। ফলে সে তালিকার অনেকেই সেদিন জীবিত ছিল না। তাছাড়া প্রবাসী ভোটাদের অনেকেই সেদিন দেশে ছিল না। অনেকে হয়তো গুরুতর অসুস্থ ছিল, ফলে তাদের পক্ষে ভোট দিতে আসা অম্ভব ছিল। তাই শতকরা শতভাগ ভোটারের ভোটদান কি বিশ্বাস করা যায়? এমনটি একমাত্র ডাকাতিতেই সম্ভব। কারণ ভোটডাকাতি কালে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে এসে সিল দেয়া লাগে না। ব্যালট পেপারে সিল মারার সে কাজটি করে দেয় যে প্রশাসনের বা পুলিশের লোকজন। কারণ, একমাত্র তাদের কাছেই থাকে ব্যালট পেপার এবং সিল। কে বেঁচে আছে বা কে দেশে আছে -সে বিচারের সামর্থ্য বা গরজ তাদের থাকে না। ফলে শতকরা শত ভাগ ব্যালটে সিল মারা তাদের জন্য অতি সহজ হয়ে যায়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তো সেটিই হয়েছে। 

নির্বাচনী কমিশনের উক্ত রিপোর্টে আরো উল্লেখ করা হয়, ১ হাজার ২০৫ টি ভোটকেন্দ্রে শতকরা ৯৬ থেকে ৯৯ ভাগ ভোট পড়ে।এটাও কি বিশ্বাস করা যায়? উক্ত রিপোর্টে আরো বলা হয়, ৬,৪৮৪ কেন্দ্রে শতকরা ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ ভোট পড়ে। এবং বলা হয় ১৫,৭১৯ টি ভোট কেন্দ্রে শতকরা ৮০ থেকে ৮৯ ভাগ ভোট পড়ে। যে কোন সুষ্ঠ নির্বাচনে এটি অসম্ভব। এরূপ অসম্ভবকে সম্ভব করা একমাত্র ভোটডাকাতির মাধ্যমে সম্ভব। ২০১৮ সালে সংঘটিত ভোটডাকাতির পক্ষে এ হলো মোক্ষম দলিল। 

বাংলাদেশ কি জঙ্গল? 

প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ কি একটি জঙ্গল? জঙ্গলে চুরি-ডাকাতি হলে, কেউ খুন বা ধর্ষিতা হলে সেখানে বিচার হয় না। কারণ, সেখানে আদালত থাকে না। প্রশাসন ও পুলিশ থাকে না। ফলে অপরাধীকে গ্রেফতার করে আদালতে তোলার সুযোগ থাকে না।প্রশ্ন হলো বাংলাদেশও জঙ্গলের চেয়ে ভিন্নতর? এখানে কি আইনের শাসন আছে? আছে কি পুলিশ? আছে কি আদালত এবং বিচারক? প্রতিটি সভ্য দেশে জনগণ রাজস্ব দিয়ে বিশাল পুলিশ বাহিনী এবং আদালতের বিচারকদের প্রতিপালন দেয় এজন্য যে, তারা আইনের শাসন পাবে। এজন্য যে তাদের জান, মাল, ইজ্জত ও রায় সুরক্ষা পাবে। দুর্বৃত্তদের শাস্তি দেয়া হবে। অথচ বাংলাদেশে সেটি হয়না। যেমন হয় না কোন গহীন জঙ্গলে। বাংলাদেশে জনগণের ভোট ডাকাতি হয়ে গেল পুলিশের চোখের সামনে। আদালতের বিচারকদের চোখের সামনেও। কিন্তু এতো বড় অপরাধেরও কোন বিচার হলো না। ফলে কোন ভোটডাকাতেরই শাস্তি হলো না। শাপলা চত্বরে শত শত নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হলো, অথচ কোন খুনিরই বিচার হলো না। অথচ কোন অপরাধ না করেও দেলোওয়ার হোসেন সাঈদীর ন্যায় বহু আলেম বছরের পর বছর আজ জেলবন্দী।