ভোলা থেকে রাজধানীর দনিয়া এলাকায় দুই দিনের জন্য আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে এসে সুযোগ করে মেট্রোরেলে চড়তে আগারগাঁও স্টেশনে এসেছেন মো. ইউনুস। তবে নির্ধারিত সময়ের পরে আসায় তার আর চড়া হয়নি প্রত্যাশার মেট্রোরেলে। দুঃখ করে তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেলে চড়তে দনিয়া থেকে ২০০ টাকা খরচ করে এসেছি, আবার একই টাকা খরচ করে মেট্রোরেল না চড়েই ফিরে যেতে হবে।’ মেট্রোরেলের সময়সূচি সম্পর্কে জানতেন না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সকাল ৮টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত মাত্র ৪ ঘণ্টার জন্য মেট্রোরেল চলাচল করে বিষয়টা জানা ছিল না। আমি তো ভেবেছিলাম—উদ্বোধন যেহেতু হয়ে গেছে গেলেই চড়তে পারবো। কিন্তু বিধিবাম, ইচ্ছাপূরণ হলো না।’
একই কারণে মেট্রোরেলে চড়া হয়নি শ্যামলীর একটি হাসপাতালে ভর্তি এক আত্মীয়কে দেখতে আসা আবিদ হাওলাদারের। তবে মেট্রো স্টেশনের অবকাঠামো দেখে অভিভূত তিনি। তিনি বলেন, ‘মেট্রো স্টেশনের আশেপাশের সবকিছু দেখে অনেক ভালো লাগছে। সবকিছু একেবারে পরিষ্কার, বিদেশের মতো মনে হচ্ছে। তবে মেট্রোরেলে চড়তে পারলে আরও ভালো লাগতো। ওইটাই তো মূল আনন্দ। কিন্তু মেট্রোরেল যে শুধু সকালের দিকে চলাচল করে তা জানা ছিল না।’
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) আগারগাঁও মেট্রোরেল স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, নির্ধারিত সময়ের পরে আসা কয়েকজন মেট্রোরেলে না চড়তে পেরে হতাশা প্রকাশ করছেন। ফিরে যাওয়ার আগে মেট্রোরেল চলাচলের সময়, টিকিটের দাম, কীভাবে টিকিট কাটেসহ নানা তথ্য জেনে নিচ্ছিলেন তারা। তাদের প্রত্যাশা আগামীতে সময় মতো এসে একবার হলেও মেট্রোরেলে উঠবেন।
মেট্রোরেল স্টেশনগুলোতে সকাল থেকে যাত্রীর চাপ কম ছিল। সকাল সকাল আগারগাঁও থেকে সহজে উত্তরা যারা যেতে চান এমন যাত্রী বেশি আসছেন। সারাদিনের জন্য মেট্রোরেল চালু হলে এ পথে যাত্রী সংখ্যা বহুগুণ বাড়বে বলে প্রত্যাশা উত্তরাগামী যাত্রীদের।
উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরে অফিস করতে ফার্মগেট থেকে আসা মো. শাওন নামে এক যাত্রী বলেন, ‘উত্তরায় নিয়মিত অফিস করেন এমন অনেক লোকই মেট্রোরেলে যাতায়াত করতে চান। তাদের জন্য আগারগাঁও এসে মেট্রোতে ওঠে অফিস করতে যাওয়াটা কষ্ট হয়ে যায়, আবার লোকজনের ভিড় থাকে কিনা এটিও ভাবনায় থাকে। তবে মেট্রোরেল পুরোপুরি চালু হলে এই সংখ্যাটা অনেক বাড়বে।’
প্রথমবারের মতো মেট্রো চড়ে ম্যারেজ মিডিয়ার কাজ করা সৈয়দা সালমা সুলতানা উত্তরায় যাবেন এক ক্লায়েন্টের সঙ্গে দেখা করতে। তিনি বলেন, ‘উত্তরায় আমার আজকে এমনিতেই কাজে যাওয়া লাগতো। তাই ভাবলাম মেট্রোরেলে চড়ে যাই। প্রথমবারের মতো চড়বো ভালোই লাগছে।’
যাত্রী কম থাকলেও মেট্রোরেলের টিকিট কাটার মেশিন কম ব্যবহার করছিল যাত্রীরা। হাতে হাতে টিকিট কাটতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন বেশিরভাগ মেট্রোযাত্রী। মেট্রো স্টেশনের টিকিট ভেন্ডর মেশিনগুলোর দায়িত্বে থাকা সদস্যরা জানান, ভেন্ডর মেশিনের টিকিট কাটতে সময় লাগছে। লাইনে দাঁড়ানো যাত্রীদের দ্রুত জার্নি করতে হাতে টিকিট কেনার লাইনে দাঁড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
তারা বলেন, ‘এখনও পুরোপুরি সেটআপ হয়নি মেশিনগুলো। কোনটি টাকা গ্রহণ করছে আবার কোনওটি ঠিকমতো করছে না৷ ফলে কিছুটা দেরি হচ্ছে। এরই মধ্যে স্টেশনে ট্রেন এসে পড়ছে। দ্রুত টিকিট কাটলে দ্রুত ওঠে যেতে পারবে ট্রেনে।’ তারা আরও জানান, সকালের দিকে আগারগাঁও সি ব্লকের একটি মেশিন ১০ মিনিটের জন্য অকেজো হয়ে যায়। তবে যাত্রীর চাপ কম থাকায় তেমন কোনও সমস্যা তৈরি হয়নি।