ভুয়া অভিযোগ তৈরি ও গায়েবী মামলাকারীর শাস্তি

 আমার দেশ
২৩ ডিসেম্বর ২০২২

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

শেখ বিন হাসান

সংজ্ঞা

ভুয়া অভিযোগ তৈরিকারক অথবা গায়েবী অভিযোগে মামলা দায়ের-কারীর শাস্তি দণ্ডবিধিতেই লিপিবদ্ধ আছে। যারা এখন ভুয়া অভিযোগ তৈরি করে অথবা গায়েবী অভিযোগে মামলা দায়ের করছেন, তাদের শাস্তির বিষয়ে দণ্ডবিধিতে কি বলা আছে তা একটু দেখে নেওয়া যেতে পারে।

দণ্ডবিধি আইনের ১৯২ ধারায় মিথ্যা সাক্ষ্য উদ্ভাবন বা ভুয়া অভিযোগ তৈরির সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে এভাবে-যে ব্যক্তি এইরূপ অভিপ্রায় কোন বহি বা রেকর্ড এমন মিথ্যা বিবরণী (এজাহার) এই উদ্দেশ্যে লিপিবদ্ধ করে যে, তাহা কোন বিচার বিভাগীয় মামলায় ঘটনার প্রমাণ-রূপে উপস্থাপিত হইবে। তাহা হইলে সেই ব্যক্তি “মিথ্যা সাক্ষ্য উদ্ভাবন বা ভুয়া অভিযোগ তৈরি করে” বলিয়া গণ্য হইবে।

উদাহরণ: ‘ক’ কোন মিথ্যা বিবৃতি কোন বিচারালয়ে (আমলী ম্যাজিস্ট্রেট বা বিচারিক জজ) সত্য বলিয়া দৃঢ়ভাবে সমর্থনকারী হিসেবে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে তার দোকান (থানার এজাহার বহিতে) একটি মিথ্যা বিষয় লিপিবদ্ধ করে। তাহা হইলে ক মিথ্যা সাক্ষ্য উদ্ভাবন করিয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।

নজির: মিথ্যা সাক্ষ্য উদ্ভাবনের সাথে সাথেই এই ধারার অপরাধ সম্পন্ন হইয়া যায়। তাহা যদি বিচারালয়ের কার্যে পরবর্তীতে ব্যবহৃত না-ও হয়। [১১ উখজ ৩৫৯].

শাস্তিসমূহ

(১) দণ্ডবিধি ধারা ১৯৩: মিথ্যা সাক্ষ্য উদ্ভাবনের শাস্তি– যে ব্যক্তি কোন বিচার বিভাগীয় মামলার কোন পর্যায়ে ব্যবহৃত হইবার উদ্দেশ্যে মিথ্যা সাক্ষ্য উদ্ভাবন করে। সেই ব্যক্তি ৭ বছর পর্যন্ত যেকোন মেয়াদের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইতে পারে।

(২) দণ্ডবিধি ধারা ১৯৪: মৃত্যুদণ্ড-যোগ্য অপরাধের দণ্ডবিধান করাইবার উদ্দেশ্যে মিথ্যা সাক্ষ্য উদ্ভাবন করা– যে ব্যক্তি এই রূপ অভিপ্রায় বা জানিয়া মিথ্যা সাক্ষ্য উদ্ভাবন করে যার দ্বারা সে কোন ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড-যোগ্য অপরাধের জন্য দণ্ডিত করাইতে পারে মর্মে সম্ভাবনা রহিয়াছে। তবে সেই ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইবে।
আর যদি সেই ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষিত ও অতঃপর তাহা কার্যকর হইয়া যায়, তাহা হইলে মিথ্যা সাক্ষ্য উদ্ভাবনকারী মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হইবে।

(৩) দণ্ডবিধি ধারা ১৯৫: যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় অপরাধ দণ্ডিত করাইবার মতলবে মিথ্যা সাক্ষ্য উদ্ভাবন করা– যে ব্যক্তি এইরূপ অভিপ্রায় বা জানিয়া মিথ্যা সাক্ষ্য উদ্ভাবন করে যার দ্বারা সে কোন ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কিংবা ৭ বছরের ঊর্ধ্বে কোন মেয়াদের কারাদণ্ডের জন্য দণ্ডিত করাইতে পারে মর্মে সম্ভাবনা রহিয়াছে। তবে সেই ব্যক্তি উক্ত অপরাধের জন্য দণ্ডিত ব্যক্তি যদ্রূপ শাস্তির যোগ্য হইতো তদ্রূপ শাস্তির যোগ্য হইবে।

(৪) দণ্ডবিধি ধারা ১৯৬: মিথ্যা বলিয়া বিদিত সাক্ষ্য ব্যবহার করা– যে ব্যক্তি কোন সাক্ষ্য উদ্ভাবিত বলিয়া জানা সত্ত্বেও তাহা সত্য বলিয়া দূষণীয়-ভাবে ব্যবহার করে বা ব্যবহারের উদ্যোগ গ্রহণ করে, সেই ব্যক্তিও মিথ্যা সাক্ষ্য উদ্ভাবনকারীর অনুরূপ শাস্তির যোগ্য হইবে।

(৫) বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ৪(খ) ধারায় বলা হয়েছে– যদি কোন ব্যক্তি তার দখলে অথবা নিয়ন্ত্রণে বেআইনি কোনো বিস্ফোরক দ্রব্য রাখে, অতঃপর সেই বিস্ফোরক দ্বারা যদি অন্য কোনো ব্যক্তির জীবন বা সম্পদ হানি না-ও করা হয়, তথাপিও সেই ব্যক্তির সর্বোচ্চ ২০ বছর পর্যন্ত সাজা হতে পারে।

(৬) ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ৫৫১ ধারায় বলা হয়েছে যে, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ঊর্ধ্বতন থানা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ক্ষমতা ও দায়িত্ব পালন করবেন। এবং অধঃস্থন কর্মকর্তার কাজের দোষ ত্রুটি তত্ত্বাবধানে জন্য দায়ী থাকবেন।

অপরাধ এবং অপরাধীর সংজ্ঞা:

১। বাংলাদেশে প্রচলিত আইনে দুই ধরনের কাজকে অপরাধ এবং যারা তা করে তাদেরকে অপরাধী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

প্রথমত: যারা অপরাধটি সরেজমিনে উপস্থিত থেকে তা সম্পাদন করে।

দ্বিতীয়ত: যারা সেই অপরাধটি সংগঠন করতে সহায়তা করে।
তিন ধরনের কাজকে আইনে সহায়তা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে
(১) প্ররোচনা বা উস্কানি প্রদানের মাধ্যমে।
(২) ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার মাধ্যমে।
(৩) আইনগতভাবে যে ব্যক্তি যে কার্যটি করতে বাধ্য অসৎ উদ্দেশ্যমূলকভাবে সে যদি তা করা হতে বিরত থাকে। [সূত্র: ফৌ: কা: ৪(১)(ণ) এবং দণ্ডবিধি ১০৭ ধারা।]

২। অস্ত্র, বিস্ফোরক দ্রব্য, মাদকদ্রব্য ইত্যাদি সহ যেকোনো আইনগত নিষিদ্ধ বস্তু যার দখলে পাওয়া যাবে তিনিই অপরাধী বলে পরিবর্তিত হবেন। হোন তিনি পুলিশ, র‌্যাব বা আরো ক্ষমতাধর কেউ।