ভীতু নারী-পুরুষ বৃত্তান্ত
- গোলাম মাওলা রনি ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯
আমাদের দেশ-কাল-সমাজের বিরাট অংশ ইদানীং যেভাবে ভীরুতা ও কাপুরুষতা প্রদর্শন করছে, তা আদিকালে এ দেশে আদৌ ছিল কি না, তা আমার জানা নেই। নারী-পুরুষ এবং আবালবৃদ্ধবনিতা বাংলাদেশের ছয়টি ঋতুর সাথে সামঞ্জস্য রেখে নিত্যনতুন ভীরুতার ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। ভীরুতার বেদনায় ক্ষতবিক্ষত নারী-পুরুষ নিজেদেরকে ভীতু হিসেবে নিবন্ধিত করে ফেলেছে এবং এতদসংক্রান্ত পরিচয়পত্র গলায় ঝুলিয়ে চলাফেরার মাধ্যমে বেঁচে থাকার আনন্দ খুঁজে বেড়াচ্ছে। এরা হররোজ বহু জল্পনা-কল্পনা, চিন্তা-ভাবনা অথবা গবেষণা করে নতুন নতুন ভয় আবিষ্কার করে চলেছে এবং সেই ভয়ের কবলে পড়ে নিজেদেরকে ঘরে বন্ধ করে কিভাবে এবং কত জোরে কাঁপাকাঁপি করা যায়, সেই রিহার্সেল শুরু করে দিয়েছে।
এ দেশের ভীতু নারী-পুরুষ দিনকে দিন সঙ্ঘবদ্ধ হচ্ছে এবং নিজেদের ভীরুতার আবাদ করে উচ্চতর ফলনের আশায় ভীরুতার দেবতার দরবারে প্রণতি দিয়ে যাচ্ছে। তারা কোকিলের কুহু কুহু, কাউয়ার কা কা এবং গরুর হাম্বা হাম্বা ডাকের মতো করে নিজেদের জন্য একটি জাতীয় ভয়ের ভাষা আবিষ্কারের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা নিত্যকার জোয়ার-ভাটা এবং অমাবস্যা-পূর্ণিমার বিশেষ জোয়ারের মতো নিজেদের ভয়ভীতি, দ্বিধাদ্বন্দ্ব, সন্দেহ-অবিশ্বাস, কলহ-বিবাদ এবং অকর্মণ্যতাকে ভরা কাটালের মতো স্ফীত করার মানসে কামরূপ-কামাখ্যা থেকে বাজিকরদের ভাড়া করে এনেছে। বাজিকরদের চেষ্টা-তদবির, ঝাড়ফুঁকের কারণে হু হু করে বাড়ছে কাপুরুষ এবং কামহিলাদের সংখ্যা।
বাজিকরদের দিয়ে তৈরি ভীতু নারী ও পুরুষের অবস্থা অনেকটা হাইব্রিড মুরগির মতো। এরা গায়ে-গতরে বেশ বড়সড়, কিন্তু এদের ব্যাকবোন বা শিরদাঁড়া নেই বললেই চলে। সাধারণ মানুষ- দেশীয় ভীরু মানুষ এবং হাইব্রিড ভীরু মানুষ তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত হয়ে অদ্ভুত কোলাহল ও কলকাকলীতে হাটবাজার-রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে পশুর চামড়া পর্যন্ত দূষিত করে তুলছে। শক্তিমত্তা এবং বুদ্ধিশুদ্ধি কম থাকা সত্ত্বেও কেবল বড় বড় শরীর এবং বড় বড় গমগমে কথার কারণে হাইব্রিড ভীরুরা কাপুরুষদের নেতা বনে গেছে। লোকজন এদেরকে সমীহ করে চলে অশরীরী আত্মার ভয়ে। তারা মনে করে, এসব ভীতু নারী-পুরুষের মানসপিতা বাজিকরেরা হয়তো এদের মধ্যে এমন কোনো জাদুকরী শক্তি ঢুকিয়ে দিয়েছে, যে কারণে তারা ইচ্ছে করলে যেকোনো ভয়ঙ্কর কীটপতঙ্গের চেয়েও বেশিমাত্রার বিষ দিয়ে সমাজ সংসারকে নিঃশেষ করে দিতে পারে।
আমাদের দেশের রাজনীতি-অর্থনীতি-সমাজনীতি এবং শিল্প-বাণিজ্যে কাপুরুষতার বিষবাষ্প ঢুকে পড়েছে। ফলে সর্বত্রই এক ধরনের স্থবিরতা নেমে এসেছে। কাপুরুষতার স্বাভাবিক ধর্ম হলো- এরা কাজ করার চেয়ে অকাজ করাকে বেশি পছন্দ করে। কোনো বৈধ জিনিস নষ্ট করে অথবা ধ্বংস করে এরা সারি সারি অবৈধ জিনিসের পিরামিড বা কৃত্রিম পাহাড় তৈরি করে মনের আনন্দে সেই পিরামিডে আত্মাহুতি দেয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে। এরা প্রকৃতির স্বাভাবিক ছন্দ, আইনকানুন ও ধর্মকর্মের তোয়াক্কা করে না। এরা আলোর চেয়ে অন্ধকার, সোজা পথের চেয়ে বাঁকা পথ এবং জীবনের উচ্ছ্বাস-হাসিখুশি এবং প্রাণবন্ততার পরিবর্তে বিভীষিকাময় মৃত্যুর আহাজারি এবং সুনসান কবরের নীরবতাকে পছন্দ করে থাকে।
মানব জীবনে কাপুরুষতার ব্যাধি সেই আদিকাল থেকেই ছিল। এটি স্থান-কাল-পাত্রভেদে কখনো মহামারী আকার ধারণ করে, আবার কখনো পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় হয়ে মানবমনে লুকিয়ে থাকে। মহাবিশ্বের সৃষ্টির অপার রহস্য হিসেবে প্রতিটি মানুষের মধ্যে প্রায় সমভাবে বীরত্ব ও কাপুরুষতার বীজ লুকানো থাকে। মানুষের দৈহিক শক্তিমত্তা, নীরোগ দেহ, মানসিক বিকাশ, জ্ঞানবুদ্ধি এবং পরিবেশ-প্রতিবেশ অনুযায়ী তার ভেতরকার বীরত্ব অথবা কাপুরুষতা বাড়তে থাকে। কারো মধ্যে যদি বীরত্বের প্রবৃদ্ধি বেশি হয়, তবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাপুরুষতার বীজ নষ্ট হয়ে যায়। অন্য দিকে, কারো মধ্যে যদি কাপুরুষতার বীজের প্রবৃদ্ধি ঘটে, তবে বীরত্বের বীজ অঙ্কুরে বিনষ্ট হয়। মানুষের বীর হওয়া অথবা কাপুরুষ হওয়ার প্রথম পদক্ষেপ হলো তার পিতা-মাতা এবং পরিবার। দ্বিতীয় কারণ হলো সমাজ আর সর্বশেষ ও সর্বপ্রধান কারণ হলো রাষ্ট্রব্যবস্থা।
বাংলার বাঘ হিসেবে পরিচিত সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মানুষ শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের একটি কথাকে আমরা অনেকেই উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করি। তিনি বলেন, যে মা সর্বদা তার সন্তানকে কুমিরের ভয় দেখায় সেই সন্তান কোনো দিন সাঁতার কেটে নদী পার হতে পারে না। শেরেবাংলার এ কথাটিকে আমি বহু দিন ধরে ধ্যানজ্ঞান করে নিজের ছেলেমেয়েদেরকে বড় করার চেষ্টা করছি এবং আলহামদুলিল্লাহ আমার সন্তানদেরকে কেউ ভীতু পুরুষ বা মহিলা বলতে পারবে না। আমার সন্তানেরা যখন ছোট ছিল ঠিক তখন থেকেই আমি তাদেরকে নানা উদ্দীপনামূলক কথাবার্তা, গল্প-কবিতা এবং শারীরিক পরিশ্রম দিয়ে তাদের স্নায়বিক দুর্বলতাগুলো দূর করে যথাসম্ভব সাহসী হিসেবে গড়ে তুলেছি। দু’টি ছোট উদাহরণ দিলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে।
আমি শৈশব থেকেই ভোর ৪টা বা সাড়ে ৪টার দিকে ঘুম থেকে জেগে ওঠার অভ্যাস রপ্ত করেছিলাম আমার দাদা-নানা এবং আব্বার কঠোর অনুশাসনের কারণে। ছোটকালের সেই অভ্যাস যেমন আজো আমি বহাল রেখেছি এবং নিজের স্ত্রী-পুত্র-কন্যাদেরকে একই অভ্যাসে অভ্যস্ত করে ফেলেছি। আমার ছেলেমেয়েরা যেদিন থেকে হাঁটতে শিখেছে, সেদিন থেকেই আমি তাদেরকে নিয়ে সপরিবারে ভোররাতে রাস্তায় বের হতাম প্রাতঃভ্রমণের জন্য। এমনকি সন্তানেরা যখন গর্ভে ছিল তখনো আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে প্রাতঃভ্রমণ করেছি। তার গর্ভের সন্তানের মন-মস্তিষ্ক এবং শরীর গঠনের জন্য উপযুক্ত পুষ্টিকর খাদ্য তাকে আহার করিয়েছি এবং গর্ভকালীন সময়ে এমন ব্যবহার করেছি, যার কারণে গর্ভস্থ সন্তান যেন এক ধরনের উদ্দীপনার মধ্যে থাকে। ফলে আমার তিনটি সন্তানই প্রাকৃতিক নিয়মে সুস্থ-সবল হিসেবে ভূমিষ্ঠ হয়েছে।
ছেলেমেয়েরা যখন ছোট ছিল তখন থেকেই সাহসী হওয়ার জন্য আমি তাদেরকে প্রেরণা দিয়েছি। আমি তাদেরকে শিখিয়েছি কারো সাথে বিরোধ না করে মানসম্মান নিয়ে কিভাবে চলা যায়। একই সাথে বিরোধের সময় নিজের মানসম্মান রক্ষা করে কিভাবে বিজয়ী হওয়া যায়, সেই কৌশলও তাদেরকে খুব ভালো করে রপ্ত করিয়েছি। তাদেরকে খেলাধুলা, ব্যায়াম, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ধর্মকর্ম এবং নিয়মানুবর্তিতার পাশাপাশি আচার-আচরণ, আলাপ-চারিতা, মেহমানদারি এবং নম্রতা-ভদ্রতা শিখিয়েছি। তাদেরকে আমি পদ্মা-মেঘনা-যমুনার উত্তাল ঢেউয়ের মাঝে নিয়ে গিয়েছি এবং ঢেউয়ের তোড়ে লঞ্চটি যখন ডুবু ডুবু অবস্থায় পড়ে এবং ছেলে-বুড়োদের বিরাট অংশ যখন আর্তচিৎকার শুরু করে দেয় তখন আমার সন্তানেরা দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে যেন ঢেউ গুনতে পারে সেই প্রশিক্ষণ দিয়েছি। ফলে তাদের কারণে আজ অবধি আমি কোথাও বেইজ্জতি হইনি এবং তাদের জন্য আমাকে কখনো দুশ্চিন্তা করতে হয়নি।
আলোচনার এই পর্যায়ে এবার আমার সন্তানদেরকে রেখে আমার পরিচিত কয়েকজনের সন্তানসন্ততির কথা বলি, যারা ঢাকা শহরের ধনীদের এলাকায় বাস করে। এসব সন্তান তেলাপোকা দেখলে ভয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। ভূতের ভয়ে তারা দিনের বেলাতেও গোসলখানায় যেতে ভয় পায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া মেয়েরা ভূতের ভয়ে এতটাই কম্পমান থাকে যে, তাদের কাজের মেয়েরা দরজার সামনে পাহারা না দিলে তারা রাতের বেলায় বাথরুমে পর্যন্ত ঢোকে না। তারা সাঁতার জানে না। কোনো খেলাধুলা করে না হাত-পা ভেঙে যাওয়ার ভয়ে এবং রাস্তায় বের হলে দু-তিনজন বডিগার্ড নিয়ে বের হয় এ কারণে যে, তাদেরকে যে কেউ যেকোনো সময় অপহরণ করে নিয়ে যেতে পারে। এসব সন্তান সারা রাত জেগে থাকে এবং আজেবাজে সিনেমা দেখে আর বেলা ২টা পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকে। এরা কারো সাথে বন্ধুত্ব করতে জানে না এবং পুরো দুনিয়াকে নিজেদের শত্রু হিসেবে ধ্যানজ্ঞান করে।
আমার পরিচিতজনদের মধ্যে যাদের উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত সন্তানসন্ততি রয়েছে, তাদেরকে আমি যথাসাধ্য পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করেছি। এসব লোক বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আজপাড়াগাঁয়ের দ্বীনহীন পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ জন্মগতভাবে ভীতু প্রকৃতির ছিলেন এবং কর্মজীবনে নানা ধরনের অবৈধ সুবিধা নিয়ে অঢেল অবৈধ বিত্তবৈভবের মালিক হয়ে গেছেন। তারা নিজেদের মতো একটি ভীতু মহিলাকে বিয়ে করেছেন অথবা বিয়ের পর স্ত্রীকে ছলে-বলে-কৌশলে ভীতু বানিয়ে ফেলেছেন। ফলে তাদের সন্তানেরা ভীতু হবে, এটাই স্বাভাবিক। এই শ্রেণীটি ছাড়া আমি আরো একটি শ্রেণীকে চিনি, যারা মূলত লড়াই সংগ্রাম করে হালাল পথে অঢেল বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন। টাকা-পয়সা হওয়ার পর এই শ্রেণীটি ফুটানি দেখানোর জন্য ধনীদের ক্লাবে যাতায়াত আরম্ভ করেন এবং সেখানকার ভীরু কাপুরুষদের অনুকরণে বডিগার্ড নিয়ে ভাবসাব দেখানোর ব্যাপারে লোভাতুর হয়ে পড়েন। এরা নিজেদের পরিচয় ভুলে গিয়ে ধনীদের সাথে মিশতে চেষ্টা করেন এবং এমন ভাবভঙ্গি শুরু করেন, যেন তারা কয়েক শ’ বছরের পুরনো ধনী।
গ্রাম থেকে উঠে আসা সাহসী-সৎ এবং সংগ্রামী মানুষেরা যখন ভীরু কাপুরুষের দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে পড়েন, তখন তাদের মধ্য থেকে উৎকট কাপুরুষতার দুর্গন্ধ বের হতে থাকে। তারা প্রথমে ঢং করে বডিগার্ড নিয়ে চলাফেরা আরম্ভ করেন। তারা সেসব বডিগার্ড নিয়ে ঘুরে বেড়ান এবং বলে বেড়ান যে, টাকা-পয়সা হওয়ার কারণে তাদের অনেক শত্রু সৃষ্টি হয়েছে। তারা প্রথমে বানিয়ে বানিয়ে অনেকগুলো মিথ্যা কথা ইনিয়েবিনিয়ে তাদের দরিদ্র আপনজনকে বলে বেড়ান যে, তাদের জীবন হুমকির মুখে- তাদের শত্রুরা তাদেরকে যেকোনো সময় মেরে ফেলতে পারে। এসব কথা বলে তারা নিজেদের গুরুত্ব বোঝানোর অপচেষ্টা করেন এবং কৃত্রিম ভয় পাওয়ার ভান করে লোকজনের সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করেন। এসব করতে করতে তারা অচিরেই এক ধরনের মানসিক রোগীতে পরিণত হন এবং ভং দেখাতে গিয়ে এক সময় সত্যিকার ভীরুতে পরিণত হয়ে যান। এরা প্রথমে নিজেরা নষ্ট হন এবং পর্যায়ক্রমে স্ত্রী ও সন্তানসন্ততিকে নিজেদের দলভুক্ত করে কাপুরুষ ও কামহিলাদের দলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়েন।
ব্যক্তিগত পর্যায়ের ভীরুতার একটি কারণ যেমন ব্যক্তিগত দুর্বলতা-অক্ষমতা-দৃষ্টিভঙ্গি বা প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড হয়ে থাকে; তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্রের কারণে মানুষ কখনো ব্যক্তিগতভাবে আবার কখনো সমষ্টিগতভাবে কাপুরুষ বা কামহিলাতে রূপান্তরিত হয়ে যায়। রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিরা যখন কাপুরুষদের মানসপিতা বা মানসমাতা রূপে বড় বড় কাপুরুষতামূলক কর্মকাণ্ড চালান এবং সেসব কর্মকাণ্ড ধামাচাপা দেয়ার জন্য ষণ্ডাগণ্ডা নিয়োগ করে সন্ত্রাস ও ভয়ভীতির রাজ্য কায়েমের অপচেষ্টা চালান; তখন অত্যাচারিত লোকজন একটি পর্যায়ে এসে ভীরু মানুষে পরিণত হয়ে যান। রাষ্ট্র যখন ন্যায়বিচারের পরিবর্তে অবিচার, ন্যায়ের পরিবর্তে অন্যায়, দুষ্টের দমন-শিষ্টের পালনের পরিবর্তে দুষ্টের আবাদ এবং শিষ্টের নিপাতের জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করে তখন সাধারণ মানুষের ভীরু ও কাপুরুষ হয়ে যাওয়া ছাড়া উপায়ান্তর থাকে না।
রাষ্ট্রে যখন কাপুরুষের সংখ্যা সীমা ছাড়িয়ে যায় তখন কী ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে তার অনেকগুলো ঐতিহাসিক উদাহরণের মধ্যে দুটো বিখ্যাত ঘটনা বলে আজকের নিবন্ধের ইতি টানব। দুটো ঘটনাই ঘটেছিল অত্যন্ত অপত্যাশিতভাবে- নজিরবিহীনভাবে এবং ঝড়ের গতিতে হঠাৎ করে। ওই ধরনের ঘটনা পৃথিবীতে একবারই ঘটেছে এবং আগামী দিনেও দ্বিতীয়বার ঘটবে না। কারণ কাপুরুষ শাসকদেরকে হতবাক করে দেয়ার জন্য প্রকৃতির পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে এমনতর ঘটনা ঘটানো হয়ে থাকে, যা সাধারণ মানুষের মন-মস্তিষ্ক কল্পনাও করতে পারে না এবং এ ধরনের ঘটনা দ্বিতীয়বার ঘটানো হয় না, যাতে করে কেউ পূর্বপ্রস্তুতি নিতে না পারে।
প্রথম ঘটনাটি ঘটেছিল পাচীন রোমে খ্রিষ্টপূর্ব ৭৩ থেকে ৭১ অব্দে। সাম্রাজ্যের ক্রীতদাসেরা স্পার্টাকাস নামের একজন ক্রীতদাসের নেতৃত্বে অত্যাচারী ও কাপুরুষ রোমান কনসাল জেনারেল ও সিনেটের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে পৃথিবীর ইতিহাস নাড়িয়ে দিয়েছিল এবং ক্রীতদাসদের শ্রেণিশত্রুদেরকে খতম করেছিল। দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটেছিল ফ্রান্সে ১৭৮৯ সালে, যা ইতিহাসে বিখ্যাত ফ্রান্সের বিপ্লব বা বাস্তিল দুর্গের পতন হিসেবে স্বীকৃত। আপনারা জেনে অবাক হবেন যে, ফ্রান্সের অত্যাচারী পাগলা সম্রাট ষোড়শ লুইয়ের অত্যাচারে বেশির ভাগ পুরুষ কাপুরুষে রূপান্তরিত হয়েছিল। এ অবস্থায় রাজ্যে হঠাৎ আটা-ময়দার অভাব দেখা দেয় এবং মহিলারা রুটি বানানোর বেলুন হাতে নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন এবং পৃথিবীর সর্বকালের অবিস্মরণীয় গণ-অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ফেলেন।