ভারত সফরে বাংলাদেশ আশাবাদী হতে পারে যেখানে

গত চার বছরে দেশের বাইরে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং গড়ের উন্নতি হয়েছে

‘ভালো ফল সম্ভব, তবে চ্যালেঞ্জিং’—কাল চেন্নাইয়ের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ার আগে ভারতের বিপক্ষে সিরিজ নিয়ে ঠিক এ কথাটাই বলেছেন নাজমুল হোসেন। অনেকেরই মনে হতে পারে, ভারতের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজ নিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক খুব জোরগলায় আশার বাণী শোনাতে পারেননি। অন্তত পাকিস্তানকে তাদেরই মাটিতে ধবলধোলাই করে আসার পরে কথায় আত্মবিশ্বাসের ছাপ আরও জোরালো থাকতে পারত। কিন্তু সেটি যে পাওয়া গেল না, তার মূলে এবারের প্রতিপক্ষ ভারত।

রোহিত শর্মাদের দল শুধু টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়ের দ্বিতীয় সেরাই নয়, ঘরের মাঠে প্রায় অজেয়। আর বাংলাদেশকে নিজেদের মাটিতে সর্বশেষ সিরিজে দুই টেস্টেই ইনিংস ব্যবধানে হারানোর স্মৃতি তো আছেই। পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনা করলে ভারত সিরিজ নিয়ে বাংলাদেশের আশার বেলুন খুব বেশি ফুলিয়ে রাখার সুযোগ আসলেই কম। তবে সবটাই হতাশার নয়। আছে আশাবাদী হওয়ার জায়গাও। যেমন ভারতের মাটিতে ব্যাটিংয়ে আগের চেয়ে ভালো করার সম্ভাবনা আছে যথেষ্টই। সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিপক্ষের মাঠে বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানদের উন্নতির গ্রাফই এই আশাবাদ জোগাচ্ছে। আবার ঘরের মাটিতে বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মাদের পারফরম্যান্সও এখন ক্রমেই নিচের দিকে যাচ্ছে।

২০২১ সাল থেকে চলতি সেপ্টেম্বর সময়কে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের ১ থেকে ৭ নম্বর পর্যন্ত খেলা ব্যাটসম্যানদের অ্যাওয়ে গড় আগের আগের চার বছরের (২০১৬-২০) তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে। সর্বশেষ চার বছরে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের অ্যাওয়েতে যে গড়, তা নিজেদের মাঠের গড়ের চেয়েও বেশি।

সর্বশেষ চার বছরে ৮টি অ্যাওয়ে টেস্টে ৪৫.১০ গড়ে মুশফিক করেছেন ৪৫১ রান,
সর্বশেষ চার বছরে ৮টি অ্যাওয়ে টেস্টে ৪৫.১০ গড়ে মুশফিক করেছেন ৪৫১ রান,এএফপি

২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ দল অ্যাওয়ে টেস্ট খেলেছে ১১টি। এই ম্যাচগুলোতে বাংলাদেশের প্রথম সাত ব্যাটসম্যানের গড় ৩৩.৩৬, যা ২০১৬-২০ সময়ে ছিল ২৭.৬৭। আবার এ সময়ে ঘরের মাঠে খেলা ১৪ টেস্টে প্রথম সাত ব্যাটসম্যানের গড় ৩২.০৩। অর্থাৎ, সর্বশেষ চার বছরে ঘরের চেয়ে বাইরেই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা বেশি গড়ে রান তুলেছেন।

এই গড় বেড়ে যাওয়ার মূলে তিন ব্যাটসম্যানের অবদান বেশি। এ সময়ে ৫ ম্যাচ খেলে ৪৯ গড়ে ৪৪১ রান করেছেন তামিম ইকবাল। বাঁহাতি এই ওপেনার অবশ্য ২০২২ সালের পর আর অ্যাওয়ে টেস্ট খেলেননি। গড় বিবেচনায় দ্বিতীয় অবস্থানে মুশফিকুর রহিম। যিনি সর্বশেষ চার বছরে ৮টি অ্যাওয়ে ম্যাচে ৪৫.১০ গড়ে করেছেন ৪৫১ রান, সেঞ্চুরি করেছেন সর্বশেষ পাকিস্তান সিরিজেও। রাওয়ালপিন্ডিতে সেঞ্চুরি করা আরেক ব্যাটসম্যান লিটন দাস ১১টি অ্যাওয়ে ম্যাচের সব কটিতে খেলে তুলেছেন সর্বোচ্চ ৭৪২ রান, গড় ৪৩.৬৪। এ ছাড়া ভারতের সিরিজের দলে থাকা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে মুমিনুল হক ১০ ম্যাচে ৩৩.৮১ গড়ে ৫৪১ রান, সাদমান ইসলাম ৬ ম্যাচে ৩৩.৬০ গড়ে ৩৩৬ এবং নাজমুল হোসেন ১১ ম্যাচে ৩৩.৪৫ গড়ে তুলেছেন ৬৬৯ রান।

ভারতের বিপক্ষে সিরিজে বাংলাদেশের হয়ে ১ থেকে ৭–এর মধ্যে আরও ব্যাট করতে নামবেন সাকিব আল হাসান, জাকির হাসানরা। অ্যাওয়ে ম্যাচে এ দুজনের গত চার বছরের গড় অবশ্য ৩০–এর নিচে (যথাক্রমে ২৫.৫৭ ও ২২.৬৬)। জাকির অবশ্য দেশের বাইরে টেস্ট খেলেছেন শুধু সর্বশেষ পাকিস্তান সফরেই।

অ্যাওয়ে বাদ দিলে মোটের ওপরও বাংলাদেশের ১ থেকে ৭ নম্বরে খেলা ব্যাটসম্যানদের গড় বেড়েছে। ২০১৬-২০ সময়ে বাংলাদেশের প্রথম সাত ব্যাটসম্যানের গড় ছিল ৩২.৫, যা কিছুটা বেড়ে গত চার বছরে ৩৪.০-তে উঠেছে।

সর্বশেষ চার বছরে দেশের মাটিতে ব্যাটিং গড় আগের তুলনায় কমেছে বিরাট কোহলিদের
সর্বশেষ চার বছরে দেশের মাটিতে ব্যাটিং গড় আগের তুলনায় কমেছে বিরাট কোহলিদেরএএফপি

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, অ্যাওয়ে ব্যাটিংয়ে উন্নতি হলেই কি বাংলাদেশ ভালো করে ফেলবে, ভারতের কি দেশের মাটিতে ব্যাটিংয়ে উন্নতি হয়নি? সত্যিটা হচ্ছে, ‘না’, হয়নি। গত আট বছরের খেলা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, ভারতের ব্যাটসম্যানদের গড় তো বাড়েইনি, উল্টো বড় আকারে কমেছে। ২০১৬-২০ সময়ে ভারতের প্রথম সাত ব্যাটসম্যানের দেশের মাটিতে গড় ছিল ৫৪.৪৩, যা ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সময়ে কমে দাঁড়িয়েছে ৩৮.৩০-এ। পার্থক্য ১৬.১৩। গত আট বছরে অন্তত ১০টি টেস্ট খেলেছে, এমন দলগুলোর মধ্যে ভারতের মতো এত বেশি হোম গড় কমেনি আর কোনো দলেরই। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬.২২ গড় কমেছে দক্ষিণ আফ্রিকার।

আরেকটু গভীরে গেলে দেখা যাবে, ভারতের যে ব্যাটসম্যানদের নিয়ে বাংলাদেশের আতঙ্ক বেশি, তাদেরই গড় কমেছে অনেক বেশি। ২০১৬-২০ সময়ে ঘরের মাঠে খেলা ২২ টেস্টে বিরাট কোহলির গড় ছিল ৮৬.১৭, সেঞ্চুরি ছিল ১০টি। অথচ ২০২১-২৪ সময়ে ১১ টেস্ট খেলে কোহলির গড় অর্ধেকের কম—মাত্র ৩৪.৪৭, সেঞ্চুরি মাত্র ১টি। ভারত অধিনায়ক রোহিতেরও ঘরের মাঠে গড় কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। আগের চার বছরে ১০ টেস্টে ১০১.১০ গড়ে রান তুললেও গত চার বছরে খেলা ১৫ টেস্টে তা ৪৪.৮৭-এ নেমে এসেছে।

সব মিলিয়ে যা বোঝা যাচ্ছে, ফল শেষ পর্যন্ত যেমনই হোক, বাংলাদেশ দল নিজেদের ব্যাটিং এবং ভারতের কোহলি-রোহিতের হুমকির বিষয়ে কিছুটা হলেও আশাবাদী হতেই পারে।

prothom alo