ভারত থেকে বেশ কয়েক বছর ধরেই এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে বাংলাদেশ। দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত এনটিপিসির তিনটি কেন্দ্র থেকে আমদানি করা হয় ৭১০ মেগাওয়াট এবং বেসরকারি দুই কেন্দ্র থেকে আসে ৪৫০ মেগাওয়াট। এর সঙ্গে গত অর্থবছর মার্চ থেকে যুক্ত হয়েছে আদানির বিদ্যুৎ আমদানি। তবে এ বিদ্যুৎ আমদানি ব্যয় দেশটির অন্যান্য কেন্দ্রের চেয়ে অনেক বেশি। ফলে গত অর্থবছর ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি ব্যয় এক লাফে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছর ভারত থেকে ৭৭১ কোটি ২১ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়েছিল। এতে ব্যয় হয় চার হাজার ৬৭৩ কোটি ২১ লাখ টাকা। ফলে গড় ব্যয় পড়ে ছয় টাকা ছয় পয়সা। গত অর্থবছর আদানির বিদ্যুৎ আসার পর আমদানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫১ কোটি ৫৫ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। তবে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৯ হাজার ২২৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা। ফলে গড় ব্যয় পড়ে আট টাকা ৭৭ পয়সা।
এ হিসাবে গত অর্থবছর ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ। তবে আদানির বিল যুক্ত হওয়ায় বিদ্যুৎ আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৯৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আদানি ছাড়াও ডলারের দর বৃদ্ধিও এ ব্যয় বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। তবে সার্বিক গড় ব্যয়ও প্রায় ৪৫ শতাংশ বেড়ে গেছে।
এদিকে আদানির কারণে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধও বেড়ে গেছে। ২০২১-২২ অর্থবছর ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল এক হাজার ৭৪৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। তবে গত অর্থবছর ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ক্যাপাসিটি চার্জ বেড়ে দাঁড়ায় তিন হাজার ২৬৯ কোটি ১১ লাখ টাকা। এর মধ্যে আদানির কেন্দ্রটির ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল ৬৩২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।
পিডিবির তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছর ভারতের এনটিপিসির ২৫০ মেগাওয়াট আমদানি চুক্তির আওতায় বিদ্যুৎ কেনা হয়েছিল ১৭৮ কোটি ৮২ লাখ ইউনিট। এতে ব্যয় হয় ৬৬৮ কোটি ছয় লাখ টাকা। অর্থাৎ গড় ব্যয় পড়ে তিন টাকা ৭৪ পয়সা। ২০২২-২৩ অর্থবছর কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ কেনা হয়েছে ১৮০ কোটি ১৭ লাখ ইউনিট। এতে ব্যয় হয় ৯০১ কোটি পাঁচ লাখ টাকা। গড় ব্যয় পড়ে পাঁচ টাকা।
২০২১-২২ অর্থবছর এনটিপিসির ত্রিপুরার ১৬০ মেগাওয়াট আমদানি চুক্তির আওতায় বিদ্যুৎ কেনা হয়েছিল ৯৪ কোটি ১২ লাখ ইউনিট। এতে ব্যয় হয় ৭৬২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ গড় ব্যয় পড়ে আট টাকা ১০ পয়সা। ২০২২-২৩ অর্থবছর কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ কেনা হয়েছে ১০৭ কোটি ৩৯ লাখ ইউনিট। এতে ব্যয় হয় ৯২৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। গড় ব্যয় পড়ে আট টাকা ৬২ পয়সা।
২০২১-২২ অর্থবছর এনটিপিসির ৩০০ মেগাওয়াট আমদানি চুক্তির আওতায় বিদ্যুৎ কেনা হয় ২৬২ কোটি ১৫ লাখ ইউনিট। এতে ব্যয় হয় এক হাজার ৫১৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ গড় ব্যয় পড়ে পাঁচ টাকা ৮০ পয়সা। ২০২২-২৩ অর্থবছর কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ কেনা হয়েছে ২৫১ কোটি ৫৮ লাখ ইউনিট। এতে ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৭৯৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। গড় ব্যয় পড়ে সাত টাকা ১৫ পয়সা।
এদিকে বেসরকারি খাতের স্যাম্বকর্প ২৫০ মেগাওয়াট আমদানি চুক্তির আওতায় ২০২১-২২ অর্থবছর বিদ্যুৎ কেনা হয় ১৯০ কোটি ৬৪ লাখ ইউনিট। এতে ব্যয় হয় এক হাজার ৩৮৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা। অর্থাৎ গড় ব্যয় পড়ে সাত টাকা ২৬ পয়সা। গত অর্থবছর কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ কেনা হয়েছে ১৮৩ কোটি ৯০ লাখ ইউনিট। এতে ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৮২৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। গড় ব্যয় পড়ে ৯ টাকা ৯৫ পয়সা।
বেসরকারি খাতের পিটিসি ২০০ মেগাওয়াট আমদানি চুক্তির আওতায় ২০২১-২২ অর্থবছর বিদ্যুৎ কেনা হয় ৪৫ কোটি ৪৮ লাখ ইউনিট। এতে ব্যয় হয় ৩৩৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ গড় ব্যয় পড়ে সাত টাকা ৪৫ পয়সা। গত অর্থবছর কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ কেনা হয়েছে ১৬৮ কোটি ৬৯ লাখ ইউনিট। এতে ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৫২৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। গড় ব্যয় পড়ে ৯ টাকা ০৫ পয়সা।
এর বাইরে গত অর্থবছর মার্চে আদানির ঝাড়খণ্ডের কেন্দ্রটি থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসা শুরু হয়। এতে চার মাসে কেন্দ্রটি থেকে ১৫৯ কোটি ৮২ লাখ ইউনিট বিদ্যুৎ এসেছে। এজন্য বিল দিতে হয়েছে দুই হাজার ২৪১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। অর্থাৎ গড় আমদানি ব্যয় পড়েছে ১৪ টাকা দুই পয়সা। যদিও আদানির বিদ্যুৎ বাদ দিলে আগের পাঁচটি কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে গড় ব্যয় পড়েছে ৭ টাকা ৮৩ পয়সা। অর্থাৎ আদানির বিদ্যুতের দাম পড়েছে অন্য কেন্দ্রের গড় ব্যয়ের ৭৯ শতাংশ বেশি।
যদিও কয়লার দাম কমায় আদানির বিদ্যুৎ আমদানিতে ব্যয় কমেছে বলে জানান পিডিবির চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, জানুয়ারি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম নিম্নমুখী। এতে আদানির বিদ্যুৎ আমদানি ব্যয় কমছে। তবে ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধির কারণে সার্বিকভাবে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে।
শেয়ার বিজ