ভারতের সব ডিম এক ঝুড়িতে

  • আবু রূশ্দ

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ৪ এপ্রিল পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক কমান্ডার নিযুক্ত হয়ে ঢাকায় আসেন তথাকথিত ‘টাইগার’ নিয়াজি। দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি ঢাকা সেনানিবাসের সব সেনাকর্মকর্তার উদ্দেশে উদ্বোধনী বক্তৃতার এক পর্যায়ে ঘৃণার সাথে বলেন, ‘ম্যায় ইস হারামজাদা কওম কি নসল বদল দুঙ্গা। ইয়ে মুঝে কিয়া সমঝতা হ্যায়?’ সোজা বাংলায় ‘আমি এই বেজন্মা জাতির খোলনলচে বদলে দেবো। ওরা আমাকে কী মনে করে?

পরক্ষণেই আরো হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘আমি বাঙালি নারীদের ওপর আমার সৈন্যদের লেলিয়ে দেবো।’ ওখানে কয়েকজন পাকিস্তান অনুগত বাঙালি সেনাকর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন। তাদের একজন মেজর মুশতাক বাথরুমে গিয়ে নিজ পিস্তল দিয়ে মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেন অপমানে, ক্ষোভে।

লে. জেনারেল নিয়াজি প্রায় ৯ মাস চেষ্টা করেও বাঙালি জাতির নকশা পাল্টাতে পারেননি। বরং পুরো পাকিস্তানের নকশাই পাল্টে গিয়েছিল।
বাংলাদেশীরা যখন মরণপণ যুদ্ধ করছিল হানাদার পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে তখন প্রতিবেশী ভারত সহায়তায় এগিয়ে আসে। ভারতের মাটি থেকেই স্বাধীন বাংলা সরকার পরিচালিত হয়। কোটি মানুষ আশ্রয় নেয় সীমান্তের ওপাশে। একপর্যায়ে প্রত্যক্ষ যুদ্ধের ঝুঁকি নেয় ভারত। তাদের কয়েক হাজার সেনা জীবন দেয়। অর্থনীতির ওপর ব্যাপক চাপ সত্ত্বেও ভারত আমাদের যাবতীয় উপায়ে ‘নসল’ বদলের হাত থেকে রক্ষা করে। বাংলাদেশীরা সেজন্য ভারতের কাছে কৃতজ্ঞ।

ইসলামে যুদ্ধের অন্যতম শর্ত কোনো নারী ও শিশুর ওপর নির্যাতন করা যাবে না। সেটা যখন পাকিস্তানের মুসলিম সেনাবাহিনী ভঙ্গ করছিল তখন ভারত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র দিয়ে ভিন্ন ধর্মের হয়েও পাশে দাঁড়িয়েছিল।

আজ বাংলাদেশের বয়স বাহান্ন বছর পেরিয়েছে। এতদিনে ভারতের সাথে সম্পর্কটা হওয়ার কথা ছিল মধুর থেকে মধুরতম। কিন্তু তা হয়নি। বাংলাদেশের জনগণের এক বড় অংশ ভারত সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সমালোচনামুখর হয়ে উঠেছে। ভারতের নাগরিকদের এক বড় অংশের মধ্যেও বাংলাদেশকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার প্রতিযোগিতা চলছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখলে এসব দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে যায়। এমনকি ভারতের সরকারি দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কিছু নেতা, পাতি নেতা ও সুব্রামানিয়াম স্বামীর মতো একজন বড় মাপের গবেষক পর্যন্ত যখন বাংলাদেশকে কব্জা করার হুমকি দেন, তখন সম্পর্কটি যে জটিল আকার ধারণ করছে তা বলাই বাহুল্য। বাংলাদেশীদের একাংশের মধ্যেও অনেক ক্ষেত্রে যুক্তিহীন ভারত বিরোধিতা লক্ষ করা যায়। বাংলাদেশের সব অনাসৃষ্টির পেছনে ভারত দায়ী এমন একটি ধারণা ছড়িয়ে পড়েছে অনেকের মধ্যে।

ভারতে সবচেয়ে বেশি অবাস্তব কথাবার্তা ও প্রচারণা হয় পশ্চিম বাংলায় যাদের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কটা হওয়ার কথা ছিল সবচেয়ে মধুর। এদিকে ভারতের কিছু কিছু পত্র-পত্রিকায় চোখ রাখলে প্রায়ই দেখা যায় বাংলাদেশ নিয়ে আজগুবি সব কথকতা, বাংলাদেশের এক বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে অযথাই শত্রু হিসাবে চিত্রিত করার গল্প। ক্রিকেট বিশ^কাপে অস্ট্রেলিয়া জয়লাভ করলে কেন বাংলাদেশীদের অনেকে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করল তা নিয়েও দেখা গেছে ভারতীয় মিডিয়ার একপেশে প্রচার, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার চেষ্টা। কিন্তু কেন এমনটা করল গণতন্ত্রহীন সমাজে বসবাসকারী হতাশাগ্রস্ত বাংলাদেশীরা তার মূল খুঁজে দেখেননি তাদের কেউ। বলা হলো, ভারত বাংলাদেশ তৈরি করে দিয়েছে, খেতে দিচ্ছে ইত্যাদি। আমরা অস্বীকার করি না ভারত বাংলাদেশ তৈরিতে নিয়ামক ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু ভারত কি এটাও মনে রাখবে না যে, একই ধর্মের হওয়ার পরও এই বাংলাদেশীরাই জীবনপণ করে পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়েছে ও ভারতের নিরাপত্তার সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা পাকিস্তানকে দ্বিখণ্ডিত করেছে? এতে কি ভারতের কৌশলগত সুপিরিয়রিটি পাওয়ায় বাংলাদেশীদের কোনোই অবদান নেই?

এদিকে, বাংলাদেশের অনেকে দেশপ্রেম বলতে কেবল ভারত বিরোধিতাকেই সামনে নিয়ে আসেন। এক্সট্র্রিম ধারণার রাজনীতির সাথে জড়িতরা তাদের রাজনীতির মুখ্য নির্দেশনাই বানিয়ে ফেলেছেন ভারতের বিপক্ষে দাঁড়ানোকে। কাল্পনিক অনেক কথকতা দিয়ে উসকে দেয়া হয় ভারতবিরোধিতা।

কেন এমন হলো? কাঁধের ওপর ছড়ি ঘোরানো বড় দাদা নাকি স্নেহশীল বড় ভাইয়ের মতো ভারতকে দেখতে চায় বাংলাদেশের মানুষ? দুই দেশের সম্পর্কটা গাঢ় করায় দায়িত্ব কার বেশি? বাংলাদেশের না ভারতের? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর একেকজনের কাছে একেকরকম হতে পারে। তবে স্নেহশীল বড় ভাইয়ের জায়গায় কেউই দাদাগিরি পছন্দ করে না। বাংলাদেশের মানুষ স্নেহশীল বড় ভাই চায়, কর্তৃত্ব দেখানো বিগ ব্রাদার নয়।

বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচন হয়ে গেল। সেই নির্বাচনটা কেমন হবে, আদৌ বিশ্বে গ্রহণযোগ্যতা পাবে কিনা, কারা যাবে, কারা যাবে না প্রায় সব ক্ষেত্রেই শোনা গেছে ভারতের প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে জড়িত থাকার কথা। অন্তত পাবলিক পারসেপশন তাই। সরকারি দলের বড় নেতাদের কেউ কেউ তো বলেই দিচ্ছিলেন, ওটা ভারত হতে দেবে না, তলে তলে সব ঠিক, আমি ভারতের ক্যান্ডিডেট আমার বিজয় ঠেকায় কে? জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে পর্দার আড়ালে ভারতের জড়িত থাকার কথা রাজনৈতিক অঙ্গনে দ্রুত শাখা প্রশাখা বিস্তার লাভ করেছে। বাতাসে আরো উড়েছে নানা কাহিনী, নানা তত্ত্ব। বাংলাদেশের গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষের মন থেকে এখনো মুছে যায়নি ২০১৩ সালে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিংয়ের ঝটিকা সফর ও নির্বাচন নিয়ে একপেশে অবস্থান গ্রহণের কথা। সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদকে নির্বাচনে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিশেষ অপারেশনের ইতিবৃত্তও মনে আছে বাংলাদেশীদের।

সদ্যসমাপ্ত সংসদ নির্বাচনে আদৌ জনসমর্থন প্রতিফলিত হয়েছে কিনা বা সরকারের দাবি অনুযায়ী চল্লিশ ভাগ ভোটার ভোট প্রদান করেছেন কিনা তা নিয়ে ভারতের মিডিয়ায় কোনো প্রশ্ন নেই। বরং বেশির ভাগ মিডিয়ায় ঢাকঢোল পিটিয়ে বলা হচ্ছে, এই নির্বাচনটা ছিল ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির সাথে ইসলামিস্টদের প্রতিযোগিতা, যেখানে সেক্যুলার শক্তিকে সমর্থন করা ছাড়া ভারতের উপায় ছিল না। একটি গণতান্ত্রিক সংগ্রামকে যখন ধর্মের আবরণ দিয়ে বিশে^র সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশটির মিডিয়া বিবেচনা করে তখন একটি মাত্র দলের প্রতি তাদের সহমর্মিতা ও সহযোগিতার প্রসঙ্গটি উঠে আসা কি খুবই অন্যায্য?

অবশ্য সেই ১৯৮১ সালের ২৯ আগস্ট সংখ্যা ভারতীয় মেইনস্ট্রিম পত্রিকায় ‘লিমিটস অব ডিপ্লোমেসি : বাংলাদেশ’ শিরোনামের এক নিবন্ধে বলা হয়েছিল, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের মধ্যেই ভারতের একটি শক্ত ভিত্তি রয়ে গেছে।’ এরপর ১৯৯৫ সালে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনার একটি দৈনিকের সাথে সাক্ষাৎকারেও বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের একটি ভূমিকা রয়েছে।’ এবারো ভারত সেই ‘ভূমিকাটিকে’ ধর্মনিরপেক্ষতার সাথে ধর্মীয় মৌলবাদের সংঘর্ষ হিসাবেই বিবেচনা করেছে। এত বছর পর এসেও বলতে হচ্ছে, এ জাতীয় কথাগুলো বাস্তবতার তেতো কুইনাইন। সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশীর নিতান্ত গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষা এখানে উপস্থিত নেই, বিবেচনাতেও নেই। বাংলাদেশে যে কখনোই ধর্মীয় কোনো দল ক্ষমতায় আসেনি এবং এ দেশের সামাজিক পরিস্থিতি যে এর অনুকূল নয় সেসব তথ্য ভারতীয় প্রচারণায় কখনোই উঠে আসে না। বরং এসব প্রচারণার মাধ্যমে ভারতের জনগণকে যে বার্তাটি অব্যাহতভাবে দেয়া হচ্ছে তা রীতিমতো ভীতিকর। বাংলাদেশে উগ্র মৌলবাদের উত্থানে শঙ্কিত হয়ে উঠছে ভারতীয় জনগণ। তৈরি হচ্ছে বৈরী মনোভাব। পাল্টা রিঅ্যাকশনে বাংলাদেশে বাড়ছে ভারতবিরোধিতা।

ভারতীয় নীতিনির্ধারকরা, যারা বাংলাদেশে তাদের একমাত্র বিশ^স্ত দলের ‘জয়ে’ বিগলিতপ্রায়, তারা এই বিষয়টিকে আরো জটিল করে তুলছেন। তাদের খেয়ালই নেই বাংলাদেশে ওই দলটি ছাড়াও অনেক লিবারেল, আধুনিক রাজনৈতিক দল রয়েছে। বিশে^র সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশটি থেকে বাংলাদেশের জনগণ অন্তত গণতন্ত্র বিকাশে সমর্থন আশা করে, কোনো কিছু চাপিয়ে দেয়া নয়।

আজ স্বাধীনতাপ্রাপ্তির এত বছর পর সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন করতে হয় ভারতের সম্পর্কটা কি বাংলাদেশের সাথে নাকি শুধুই একটি দলের সাথে? সম্পর্ক তো হওয়ার কথা পুরো বাংলাদেশী জনগোষ্ঠীর সাথে? শুনতে খারাপ লাগালেও সত্য, সম্পর্কটা ভারত রেখেছে শুধু একটি দল ও সেটির অনুগামীদের সাথে। বাকি রাজনৈতিক দল, মত, আদর্শের সাথে রয়েছে যোজন যোজন দূরত্ব। স্থানীয় ভারতীয় দূতাবাস যখন কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করে তখন সেখানে চিহ্নিত মুখগুলোকেই শুধু দেখা যায়। ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক আদর্শকে সামনে নিয়ে আসা হয়। ভারতের কোনো হাইকমিশনার বাংলাদেশে এলে ছুটে যান ওই চিহ্নিত রাজনৈতিক দলটির অফিসে। অন্যদের সাথে থাকে হিমশীতল সম্পর্ক।

অস্বীকার করার উপায় নেই, বাংলাদেশের ভিন্নধারার রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকাকালে ভারতের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি সৃষ্টি হয় এমন অনেক কর্মকাণ্ড দেখেও না দেখার ভান করেছে। ভারতের নীতিনির্ধারক ও নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট কর্তারা এসব বিষয় নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন এবং এমন উপসংহারে পৌঁছেছেন যে, আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্যরা ক্ষমতায় থাকলে তাদের পড়তে হবে চরম সঙ্কটে। বলতেই হবে বিএনপি ক্ষমতায় এসে এসব অযাচিত উগ্র শ্রেণীকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে বহুবার। এটাই হয়তো ভারতের সাথে তাদের সহমর্মিতার বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পথে বড় বাধা। কিন্তু উগ্রবাদী কোথায় নেই? পৃথিবীর সব দেশই এই প্যারাসাইটে আক্রান্ত।

এসবের বাইরেও ভারতের অভিযোগ রয়েছে তাদের সরাসরি ‘শত্রুপক্ষের’ কাছ থেকে বাংলাদেশের অবারিত সমরাস্ত্র সংগ্রহের। চীনের ছাতার ছায়ায় থাকাটা তারা ঠিক মেনে নিতে পারেনি কখনো। বাংলাদেশ হওয়ার পর তাদের আশা ছিল একটি বড় সশস্ত্র বাহিনীবিহীন প্রতিবেশীর। কিন্তু বাংলাদেশ তা হয়নি। নিতান্ত ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার জন্য সেনাবাহিনীর আকার বৃদ্ধি পেলেও বাংলাদেশের এই পদক্ষেপকে ভারত হয়তো সবসময়ই সন্দেহের চোখে দেখেছে।

১৯৭১ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান ফিল্ড মার্শাল মানেকশ স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে এসে অবশ্য অনুভব করেছিলেন ভিন্ন কিছু। তাই কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক স্টেটসম্যানের ১৯৮৮ সালের ২৯ এপ্রিল সংখ্যায় তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশে যদি ইসলামী প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হয় তাহলে ভারতের অবাক হবার কিছু নেই। আমাদের সৈনিকরা যেদিন বাংলাদেশ কব্জা করে সেদিনই আমি এই সত্য উপলব্ধি করি। বাংলাদেশের কখনোই ভারতের প্রতি তেমন ভালোবাসা ছিল না। জানতাম ভারতের প্রতি তাদের ভালোবাসা ক্ষণস্থায়ী। অনুপ্রেরণার জন্য তারা ভারতের দিকে না তাকিয়ে বরং মক্কা ও পাকিস্তানের দিকেই তাকাবে। আমাদের সত্যাশ্রয়ী হওয়া উচিত।’
আমরা ফিল্ড মার্শাল মানেকশর সন্দেহ বা ভীতি দূরে রাখতে চাই। বাংলাদেশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশ এটা সত্য। তবে মুসলিম দেশ ও ইসলামী দেশের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক ফারাক। বাংলাদেশ কখনোই পাকিস্তান, আফগানিস্তান বা ইরান নয়। এ দেশের লাখ লাখ মানুষ তাই প্রখর রোদে মাইলব্যাপী কিউতে দঁড়িয়ে থেকে ভারতের ভিসা নেয়। ঈদের শপিংয়ের জন্য ছুটে যায় কলকাতায়। চিকিৎসার জন্য চরম ভারতবিরোধী মানুষও বেছে নেয় ভারতের হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের।

ভারত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ। সেখানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। রাষ্ট্র বা সরকারের সমালোচনার জন্য কাউকে গোয়েন্দারা রাতের বেলায় উঠিয়ে নিয়ে যায় না। প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট, সিবিআই বা ‘র’ চাইলেই বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ করতে পারে না। এমন একটি গণতান্ত্রিক শক্তির পাশে থেকে বাংলাদেশীরাও আশা করে এ দেশের গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক সংগ্রামে ভারত সবসময় পাশে থাকবে। যে দলই নিরপেক্ষ নির্বাচনে ক্ষমতায় আসবে তার সাথেই হৃদ্যতা গড়ে উঠবে ভারতের। ভারতের জনগণ গণতন্ত্রের সুফল ভোগ করে। বাংলাদেশের জনগণও যাতে দলমত নির্বিশেষে সেই ফল ভোগ করতে পারে সেজন্য ভারতীয়রা বাংলাদেশীদের পাশে দাঁড়াবে এটাই সবার প্রত্যাশা।

বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র বা নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র কখনোই ভারতের সার্বিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে পারবে না। বড় দেশ হিসাবে, সর্ববৃহৎ গণতন্ত্র হিসাবে দায়টা ভারতেরই বেশি, আমাদের কম। তাদের ভুলে গেলে চলবে না, বাংলাদেশের সামাজিক যুথবদ্ধতা ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে তাদেরও নিরাপত্তা সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করবে। তাই শুধু একটি দল নয়, সবার সাথেই হোক ভারতের বন্ধুত্ব।
ভারত এখন যা করছে তা হলো, বাংলাদেশ ইস্যুতে সব ডিম রেখেছে এক ঝুড়িতে। ঝুড়ির একটি সুতো কেটে গেলে ডিম সব পড়ে যাবে। তাই সব ডিম এক ঝুড়িতে রাখতে নেই।

লেখক : সাবেক সেনাকর্মকর্তা, সম্পাদক, বাংলাদেশ ডিফেন্স জার্নাল

Nayadiganta