ভারতের অপারেশন সিঁদুর,পাকিস্তানের কড়া জবাব

logo

মানবজমিন ডেস্ক

৮ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার

mzamin

facebook sharing buttonwhatsapp sharing button

ভারতের প্রিসিশন স্ট্রাইক। পাকিস্তানের কড়া জবাব, হুঁশিয়ারি। ভারত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে পাকিস্তানে। এতে নিহত হয়েছেন ২৬ জন। পাল্টা হামলা চালিয়েছে পাকিস্তানও। এতে ভারতে নিহত হয়েছেন ১৫ জন। ভারতের ৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে পাকিস্তান। ১৯৭১ সালের পর এই প্রথম পাকিস্তানে স্থল, নৌ ও আকাশপথে হামলা চালিয়েছে ভারত। ওদিকে নতুন করে ভারতে হামলা চালাতে সেনাবাহিনীকে অনুমতি দিয়েছে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি। ফলে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা আছে। এরই মধ্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ পারমাণবিক যুদ্ধের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি এই উত্তেজনার মধ্যে বুধবার পার্লামেন্টে বক্তব্য রেখেছেন। বলেছেন, ভারত কাপুরুষের মতো রাতের অন্ধকারে হামলা করেছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীও উপযুক্ত জবাব দিয়েছে। তিনি বলেন, পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান ভারতের আকাশসীমায় প্রবেশ করেনি। তা সত্ত্বেও তিনটি রাফাল সহ ৫টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে পাকিস্তান। তার দু’টি পতিত হয়েছে কাশ্মীরে এবং একটি বাথিন্ডায়। দু’টি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে।

শেহবাজ শরীফ বলেন, এটা প্রচলিত অর্থে যুদ্ধ। যারা বলে প্রচলিত যুদ্ধে পাকিস্তানকে ভারত  পেছনে ফেলেছে, এখন তারা জানবে আমরা কি- হোক সেটা পারমাণবিক যুদ্ধ বা প্রচলিত যুদ্ধ। ওদিকে, পাকিস্তানে ভারতের এই হামলাকে ‘লজ্জাজনক’ বলে অভিহিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ভারতের এ হামলাকে ‘দুঃখজনক’ অভিহিত করেছে চীন। তারা পাকিস্তানের পক্ষে থাকবে। পাকিস্তানের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে তুরস্ক। উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। পারমাণবিক শক্তিধর এই দুই দেশের মধ্যে সামরিক সংঘাতে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বিশ্বনেতারা। তাদের অনেকেই সর্বোচ্চ সংযমের আহ্বান জানিয়েছেন। ২২শে এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার জবাবে ভারত মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত ১টা ৪৪ মিনিটে পাকিস্তানে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে হামলা চালায়। হামলায় মসজিদ, বাড়ি সহ বিভিন্ন স্থান ধ্বংস হয়েছে। ২৫ মিনিটের ওই হামলায় পাকিস্তানও জবাব দিয়েছে। তাতে ভারতের ৫টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে পাকিস্তান। তবে ভারত ৩টি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে।

রাতের আঁধারে হামলা-পাল্টা হামলা হওয়ায় এর তীব্রতা অনুমান করা কঠিন। কিন্তু যখন ভারতের যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করার কথা স্বীকার করা হয়েছে, তখন আন্দাজ করা যায় তীব্রতা কেমন ছিল। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এই শত্রুতা চিরদিনের। দুই দেশের হাতেই আছে পারমাণবিক অস্ত্র। এ জন্যই তাদের সংঘাত নিয়ে এত বেশি ভয়। যদি কোনো পক্ষ বড় কোনো ভুল করে এসব অস্ত্রের সুইচে হাত রাখে, তাহলে ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হয়ে যাবে। অনেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, এমন হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তাতে শুধু ভারত-পাকিস্তানই আক্রান্ত হবে এমন নয়, একই সঙ্গে আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে। এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়বে পুরো ভারত উপমহাদেশে। মঙ্গলবার রাতে হামলা সরাসরি মনিটরিং করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে বুধবার বিভিন্ন রাজ্যে হয়েছে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মহড়া। পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই পাকিস্তানে প্রতিশোধমূলক হামলা চালানোর হুমকি দিয়ে আসছিল ভারত। ওই হামলার জন্য তারা পাকিস্তানকে দায়ী করে। কিন্তু পাকিস্তান সে দাবিকে প্রত্যাখ্যান করে বলেছে,  কোনো তথ্যপ্রমাণ দিতে পারেনি ভারত। পক্ষান্তরে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে পাকিস্তান। তাদের সে দাবির প্রতি তোয়াক্কা করেনি ভারত। তারা একতরফাভাবে পাকিস্তানকে দায়ী করে যেতেই থাকে। এর প্রেক্ষিতে পাকিস্তানে হামলার প্রস্তুতি নিতে থাকে। পেহেলগাম হামলার দুই সপ্তাহ পরে মঙ্গলবার সেই হামলা চালিয়েছে তারা। এতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি হামলা চালাতে যে অনুমোদন দিয়েছে, তার ফলে কখন ভারতে তারা হামলা চালাবে তা পরিষ্কার নয়। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানে যেমন সব রাজনৈতিক দল ঐকমত্যে এসেছে, তেমনি ভারতেও। ভারত শাসিত কাশ্মীরের বিভিন্ন এলাকায় স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একইভাবে পাকিস্তানের পাঞ্জাবে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে স্কুল-কলেজ।

রাতের অন্ধকারে হামলা কাপুরুষোচিত: বুধবার পাকিস্তান পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ বলেন, মঙ্গলবার রাতে আমাদের শত্রুরা ঘুমাতে পারেনি। আমাদের বন্ধুরা অনুধাবন করতে পেরেছেন যে, পাকিস্তান যখন কঠিন সময়ে পড়বে তখন সহায়তার জন্য তারা এগিয়ে আসবেন। এর চেয়ে বেশি সম্মানের কিছু নেই পাকিস্তানের। এ সময় তিনি সব রাজনৈতিক দলের নেতাকে একত্রিত হয়ে ঐক্যবদ্ধ একটি জাতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। তিনি বিরোধীদের সঙ্গে পার্লামেন্ট চেম্বারে বসার আগ্রহ প্রকাশ করেন। মঙ্গলবার রাতের পরিস্থিতি পাকিস্তানের সেনাবাহিনী যেভাবে মোকাবিলা করেছে তার জন্য তাদের প্রশংসা করেন তিনি। একটি রেজ্যুলুশনের মাধ্যমে তাদেরকে স্যালুট জানাতে হাউজের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। সেনাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তারা পাকিস্তানের সম্মান পুনরুদ্ধার করেছেন। একই অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন বিরোধী দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি। তিনি বলেন, রাতের অন্ধকারে হামলা কাপুরুষোচিত। যদি তাদের সাহস থাকতো তাহলে দিনের বেলায় যুদ্ধ  ঘোষণা করতো। রাতের বেলা তারা আমাদের সেনাদের সামনে পড়েছে। তাদের হামলার নিন্দা জানাচ্ছে পুরো বিশ্ব।

ভারতের হামলায় নিহত ২৬, পাঁচ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে পাকিস্তান 
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ভারতের বিমান বাহিনীর ৫টি যুদ্ধবিমান, একটি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে। একই সঙ্গে একটি ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার ধ্বংস করেছে বলে খবর দিয়েছে অনলাইন জিও নিউজ। ভারত দাবি করেছে যে, তারা স্থানীয় সময় রাত ১টা ৪৪ মিনিটে  পাকিস্তান ও পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের ভেতরে ‘সন্ত্রাসী’দের অবকাঠামোতে হামলা করেছে। এই অভিযান অব্যাহতভাবে মনিটরিং করছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই অভিযানের নাম দেয়া হয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’। মোট ৯টি স্থাপনায় এই হামলা চালানো হয়েছে। পাকিস্তানের আইএসপিআরের মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট  জেনারেল আহমেদ শরীফ  চৌধুরী জানিয়েছেন, মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতের পর  কোটলি, ভাওয়ালপুর, মুরিদকে, বাগ ও মুজাফ্‌ফরবাদে ‘কাপুরুষোচিত’ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। পাকিস্তান  সেনাবাহিনী এর বদলা নিতে শুরু করেছে। উল্লেখ্য, গত ২২শে এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানি হয়। এরপর  থেকে পারমাণবিক ক্ষমতাধর দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে এ হামলা চালালো ভারত। আইএসপিআরের মহাপরিচালক বলেন, ‘কাপুরুষ শত্রু ভারত ভাওয়ালপুরের আহমেদ ইস্ট এলাকার সুবহান্নাল্লাহ মসজিদ,  কোটলি ও মুজাফ্‌ফরবাদের অন্তত তিন জায়গায় বিমান হামলা চালিয়েছে।’ হামলাগুলো ভারতের আকাশসীমা থেকে চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। পাকিস্তান এর সমুচিত জবাব দেবে উল্লেখ করে এই  সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘এই ঘৃণ্য উস্কানি জবাব ছাড়া পার পাবে না।’ তিনি জানান, আহমেদপুরে একটি মসজিদে হামলা হয়েছে। কাছের একটি বাড়িও আক্রান্ত হয়েছে। সেখানে একটি শিশু ও তার বাবা-মা আটকা পড়েছেন। তাদেরকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছিল।  কোটলিতেও একটি মসজিদে হামলা হয়েছে। মুজাফ্‌ফরবাদে একটি সড়কে ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে। তাতে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। পাকিস্তানি বাহিনী স্থল ও আকাশপথে এই হামলার জবাব দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। এদিকে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর কোনো স্থাপনাকে এই অভিযানে নিশানা করা হয়নি। পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের মুজাফ্‌ফরাবাদে বুধবার গভীর রাতে বড় ধরনের একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা  গেছে।

ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় একটি সম্ভাব্য নিশানা ছিল মুজাফ্‌ফরাবাদের বিলাল মসজিদ। ওই মসজিদের পাশেই বসবাস করেন মোহাম্মদ ওয়াহিদ। তিনি বলেন, আমার খুব ঘুম পাচ্ছিল এমন সময় প্রথম বিস্ফোরণে আমার বাড়িটা  কেঁপে ওঠে। আমি দৌড়ে রাস্তায়  বের হই। সেখানে দেখি অন্যরাও একই কাজ করছে। আমরা তখনো বুঝে উঠতে পারিনি কী হচ্ছে। এর মধ্যেই আরও ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলে এলাকা জুড়ে আতঙ্ক ও বিশৃঙ্খলা  দেখা দেয়। পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফ্‌ফরাবাদে ভারতের  ক্ষেপণাস্ত্র হামলার একটি জায়গার আশপাশের বাসিন্দারা প্রাণ ভয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে আসেন। ওয়াহিদ বলেন, ডজনখানেক মানুষ আহত হয়েছেন এবং তাদের প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে ওয়াহিদ বলেন, ‘বাচ্চারা কাঁদছে, মহিলারা দৌড়াদৌড়ি করছে, তারা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছে। আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানিই না কী করবো। মানুষ ঘরবাড়ি  ছেড়ে পালাচ্ছে, আর চারদিকে এক অজানা অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়েছে।’ তিনি বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তিনি বুঝে উঠতে পারছিলেন না একটি মসজিদ কেন হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হলো। ওয়াহিদ বলেন, ‘এটা তো সাধারণ একটা মসজিদ ছিল,  যেখানে আমরা দিনে পাঁচবার নামাজ পড়তাম। আমরা এই মসজিদ ঘিরে কখনো সন্দেহজনক কিছু দেখিনি।’

পাল্টা জবাব পাকিস্তানের: ভারতের আগ্রাসনের জবাবে পাকিস্তান প্রতিরক্ষা বাহিনী পাল্টা আঘাত হেনেছে। তারা পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। এই তথ্য জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। মঙ্গলবার জিও নিউজকে  দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, পাকিস্তান তাদের প্রতিক্রিয়ামূলক পদক্ষেপে বেশি অর্জন করেছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও জানান, পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব ও  ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষার জন্য অত্যন্ত দৃঢ় ও সুনির্দিষ্টভাবে পদক্ষেপ নিয়েছে।  সেনাবাহিনীর মুখপাত্রও বলেন, ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী উপযুক্ত জবাব দিচ্ছে। এর কিছুক্ষণ পরই পাকিস্তানের পাল্টা হামলা শুরু হয়। সূত্র মতে, বারনালা সেক্টরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী একটি ভারতীয়  ড্রোনও ভূপাতিত করেছে। জিও নিউজের তথ্যে বলা হয়, ভারতের হামলায় কেবল নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদেরই লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, এবং তাদের রক্তের প্রতিশোধ অবশ্যই  নেয়া হবে। পাকিস্তান আইএসপিআরের মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী জানান, ভারতীয় সেনাবাহিনী পাঞ্জাব ও আজাদ কাশ্মীরের বিভিন্ন শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। তিনি বলেন, সব পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান আকাশে রয়েছে। ভারতের এই কাপুরুষোচিত হামলা তাদের নিজস্ব আকাশসীমা থেকে চালানো হয়েছে। তারা কখনোই পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশ করতে পারেনি। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এই উস্কানিমূলক হামলার উপযুক্ত জবাব পাকিস্তান দেবে- সময় ও স্থান আমাদের পছন্দ অনুযায়ী তা হবে। তিনি জানান, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের কাজ চলছে এবং বিস্তারিত তথ্য সময়মতো জানানো হবে। রয়টার্সের বরাতে জানা যায়, মুজাফ্‌ফরাবাদ ও তার আশপাশের পাহাড়ি অঞ্চলে বিস্ফোরণের পর পুরো এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং অন্ধকারে ডুবে যায় শহরটি।

উপযুক্ত সময়ে জবাব দেবে পাকিস্তান: ভারতের বিমান বাহিনী পাকিস্তানের আকাশসীমা লঙ্ঘন না করলেও আন্তর্জাতিক সীমান্ত এবং নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পাকিস্তানের ভূখণ্ডে স্ট্যান্ডঅফ অস্ত্র ব্যবহার করে বেসামরিক জনগণকে লক্ষ্যবস্তু করেছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মুরিদকে, ভাওয়ালপুর, কোটলি এবং মুজাফ্‌ফরাবাদে এই হামলা চালানো হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শাফকাত আলী খান এক বিবৃতিতে বলেন, ভারতের এই বিনা উস্কানিতে সরাসরি আগ্রাসনমূলক কার্যকলাপে অনেক বেসামরিক, নারী ও শিশু নিহত হয়েছেন। এই হামলা বাণিজ্যিক আকাশপথের জন্যও মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করেছে। তিনি আরও বলেন, আমরা ভারতের এই কাপুরুষোচিত আগ্রাসনকে জোরালোভাবে নিন্দা জানাচ্ছি, যা জাতিসংঘ সনদ, আন্তর্জাতিক আইন ও রাষ্ট্র-পররাষ্ট্র সম্পর্কের প্রতিষ্ঠিত নীতিমালার সরাসরি লঙ্ঘন। পেহেলগাম হামলা প্রসঙ্গে এই মুখপাত্র বলেন, ভারতের নেতৃত্ব আবারো ‘সন্ত্রাসবাদের ভুয়া অজুহাত’ তুলে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন করছে। তাদের এই বেপরোয়া পদক্ষেপ দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রকে বড় ধরনের সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানায়, পাকিস্তান তার প্রতিক্রিয়া দেয়ার পূর্ণ অধিকার সংরক্ষণ করে-যেকোনো সময় ও স্থান নির্বাচন করার স্বাধীনতাসহ, জাতিসংঘ সনদের ৫১ নম্বর অনুচ্ছেদ এবং আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় এটা করতে পারে। বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার, সশস্ত্র বাহিনী এবং দেশের জনগণ একত্রিতভাবে ভারতের এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব এবং ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষায় তারা দৃঢ়ভাবে কাজ করে যাবে।
এর আগে প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ ও তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার জানান, পাকিস্তান এরই মধ্যে ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে এবং একটি  ড্রোন গুলি করে নামানো হয়েছে।  সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জানান, পাকিস্তানি বিমান বাহিনী আকাশে সক্রিয় রয়েছে এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী দেশ উপযুক্ত জবাব দিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত।

পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের আশঙ্কা: ভারত-পাকিস্তান দুই দেশের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের আশঙ্কা বৃদ্ধি পেয়েছে। হামলার পর ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এক্স (সাবেক টুইটার)-এ ‘ভারত মাতা কি জয়’ লিখে বার্তা দেন। ভারতীয় সেনাবাহিনী জানায়, ‘ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জয় হিন্দ।’ ভারতীয় সেনাবাহিনীর সূত্র অনুযায়ী, হামলায় ব্যবহৃত হয়েছে অত্যাধুনিক স্ক্যালপ (স্টর্ম শ্যাডো) ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। এই ক্ষেপণাস্ত্র ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের যৌথ উদ্যোগে তৈরি। ভারতের রাফাল যুদ্ধবিমানে তা ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়াও হ্যামার স্মার্ট বোমা ব্যবহারেরও খবর পাওয়া গেছে। এসব তথ্য দিয়েছে অনলাইন এনডিটিভি। এতে বলা হয়, ভারতের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, এই বিমান হামলার জবাবে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ রেখার পুঞ্চ-রাজৌরি সেক্টরের ভিম্বার গলি এলাকায় গোলাবর্ষণ করেছে। তবে ভারতীয় সেনারা ‘পর্যাপ্ত ও নিয়ন্ত্রিতভাবে’ জবাব দিচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এবং ভারতীয় অভিযানের বিষয়ে তাদের বিস্তারিত অবহিত করেন। উভয় পক্ষই এখন ‘সময় ও স্থানের পছন্দ অনুযায়ী জবাব’ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ফলে দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here