ইয়ামিন আরফান
বাংলাদেশে ভারতীয় পণ্য বর্জন কর্মসূচি চলছে। ফ্রান্স প্রবাসী বাংলাদেশী লেখক পিনাকী ভট্টাচার্য্য ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছিলেন। মূলত, ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচনে ভারতের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে এই ডাক দিয়েছিলেন পিনাকী ভট্টাচার্য্য। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে মানুষ যে ভারতীয় পণ্য বর্জনে এত সাড়া দেবে তা হয়তো বাংলাদেশ বা ভারত কোনো দেশের সরকারই বুঝতে পারেনি, বুঝতে পারেনি বিএনপিও। যতই দিন গড়িয়েছে ততই বেড়েছে ভারতীয় পণ্য বর্জনের গতি। একটি সামাজিক আন্দোলনে রূপ নিয়েছে ‘ইন্ডিয়া আউট’ নামের এ কর্মসূচি। সাধারণ মানুষ একে একটি বাস্তবসম্মত প্রতিবাদ হিসেবই নিয়েছে। এক পর্যায়ে এ কর্মসূচির সাথে বিএনপি সংহতি প্রকাশ করে।
যতদিন এ কর্মসূচি পিনাকী ভট্টাচার্য্যের অর্থাৎ একজন ব্যক্তির ডাকা সামাজিক আন্দোলন ছিল ততোদিন তাতে কোনো রকম ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া দেখায়নি সরকার বা আওয়ামী লীগ। কিন্তু যখনই এ কর্মসূচিতে বিএনপি সংহতি প্রকাশ করলো, তখন তারা যেন গর্ত থেকে বের হয়ে এলো। তারা এ কর্মসূচিকে বিএনপির কর্মসূচি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার অপপ্রয়াস চালাতে শুরু করলো।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ভারতীয় পণ্য বর্জনের নামে বিএনপি এখন দেশের অর্জনকে ধ্বংস করতে চায়। তিনি বলেন, ‘পণ্য বর্জন—এটা কি সম্ভব? বাংলাদেশ ও ভারতের যে অবস্থা, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের যে লেনদেন, যে আদান-প্রদান হয়ে থাকে, তার মধ্যে এমন বর্জনের প্রস্তাব বাস্তবসম্মত কি না! আসলে তারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের নামে দেশের অর্জনকে ধ্বংস করতে চায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাকিস্তান আমল থেকে যে অপপ্রচার শুনেছি, কোনো রাজনৈতিক ইস্যু যখন থাকে না, তখন একটাই ইস্যু আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নিয়ে আসে। আগে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে আনতো আর এখন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনে। সেটা হচ্ছে ভারত–বিরোধিতার ইস্যু।’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যারা ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছে, দেশের জনগণ তাদেরই বয়কট করবে। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান আমল থেকেই ভারত-বিরোধিতার নামে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি চলছে। আজকে ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক তারই অবিচ্ছেদ্য অংশ।
শুধু ওবায়দুল কাদেরই নন, এ বিষয়ে সরব আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদও। তারও অভিমত, ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়ে দেশের বাজার অস্থিতিশীল করে তোলার পাশাপাশি দ্রব্যমূল্য বাড়ানোই বিএনপির মূল উদ্দেশ্য।
তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে ভোগ্যপণ্য থেকে শুরু করে অনেক পণ্যই ভারত থেকে আসে। ভারতের সঙ্গে আমাদের হাজার হাজার কিলোমিটার সীমান্ত। কিছু সীমান্ত বাণিজ্যও হয় বৈধভাবে। ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়ে দেশের বাজার অস্থিতিশীল করে তোলা ও দ্রব্যমূল্য বাড়ানোই বিএনপির মূল উদ্দেশ্য, যাতে জনগণের ভোগান্তি হয় এবং পণ্যের মূল্য বাড়ে।
আগেই বলা হয়েছে, ভারতীয় পণ্য বর্জনের যে চলমান কর্মসূচি তা বিএনপির কর্মসূচি নয়, পিনাকী ভট্টাচার্য্যের ডাকা কর্মসূচি। ৭ই জানুয়ারির ডামি নির্বাচনের পর ওই মাসের মাঝামাঝি ইউটিউবের মাধ্যমে ‘ইন্ডিয়া আউট’ নামের কর্মসূচি ঘোষণা করেন পিনাকী ভট্টাচার্য্য। প্রথম দিকে অনেকে মনে করেছিলেন, এটা ফেসবুক আর ইউটিউবে সীমিত থাকবে। তবে তা হয়নি। সাধারণ মানুষ কর্মসূচিটি লুফে নেয়। জানুয়ারিতেই ভারত থেকে পণ্য আমদানিকারকরা বুঝতে পারেন যে একটা ভাটার টান শুরু হয়েছে। বিভিন্ন সুপার শপ ভারতীয় পণ্যে নানা রকম ছাড় দিতে শুরু করে। তবে মানুষকে ভারতীয় পণ্যের দিকে টানা যায়নি, বিশেষ করে প্রসাধন সামগ্রী বিক্রিতে ধস নামে।
কোনো রকম প্রচার-প্রচারণা নেই, নেই কোনো রকম সাংগঠনিক তৎপরতা। তারপরও ভারতীয় পণ্য বর্জনে মানুষের অংশগ্রহণ বাড়তে থাকে। বিশেষ করে ভোটবঞ্চিত তরুণ বা যুবক- যারা গত তিনটি নির্বাচনের কোনটিতেই ভোট দিতে পারেননি তারা উপলব্ধি করেন যে বাংলাদেশে যেনতেন নির্বাচনের পেছনের শক্তি ভারত, বিশেষ করে মোদী সরকার। তাই তারা নীরব এ প্রতিবাদে সক্রিয় হয়ে ওঠে। কোনো রকম পিকেটিং নয় নিজে থেকে ভারতীয় পণ্য না কেনার সিদ্ধান্ত নেয় মানুষ।
ভারতীয় পণ্য বর্জনের এ কর্মসূচিতে মানুষের অংশগ্রহণ দেখে আওয়ামী লীগের পাগল হওয়ার দশা। ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে প্রায়ই শ্লেষ করে একটি কথা বলে থাকেন ‘জ্বালারে জ্বালা’। শেখ হাসিনার সরকার নাকি এত উন্নয়ন করছে যা দেখে বিএনপির গায়ে জ্বালা ধরে গেছে! তাই তিনি বলেন, ‘জ্বালা রে জ্বালা’।
বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে ভারতীয় পণ্য বর্জন কর্মসূচির সফলতা দেখে ভারতের কতটা জ্বলছে তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না, তবে ওবায়দুল কাদের আর হাছান মাহমুদসহ আওয়ামী লীগের যে খুব জ্বলছে তা ষ্পষ্ট। তাদের উদ্দেশ্যে এখন জনগণের বলার পালা ‘জ্বালা রে জ্বালা’।
bangla outlook