ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও হাসিনার ফ্যাসিবাদ রুখে দিন    

জগলুল হোসাইন :
৭ জানুয়ারি ২০২৪-এর নির্বাচন তামাশার মাধ্যমে হাসিনা আবারো অবৈধ ভাবে ক্ষমতায় বসলেন। বিএনপি ও সমমনা দলগুলি নির্বাচন বর্জন করে, কারণ হসিনার জালিম শাহীর অধীনে নির্বাচনের অর্থ, বর্বর ভাবে বিরোধী দমন ও বেপরোয়া ভোট কারচুপি। ২০১৪ ও ২০১৮-এর নির্বাচনে তাই হয়েছিল, এবারও তাই-ই হয়েছে। নির্বাচন-পূর্ব বিরোধী দমনে এবার বিএনপির ২৮ অক্টোবর ২০২৩-এর শান্তিপূর্ণ ১০ লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশ আওয়ামী লীগ ও পুলিশের আক্রমণে পণ্ড করে দেওয়া হয়, এবং ঐ সমাবেশের ২ মাসের মধ্যে বিরোধীদের ২৫,০০০ নেতাকর্মীকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়, ১৬ জনকে হত্যা করা হয়, ৫,৫০০ জনকে আহত করা হয়। বহু বিরোধীকে নির্যাতন করা হয়, বিদ্যুৎ দিয়ে নির্যাতন, গুলী করে পঙ্গু করা, হাঁটু ভেঙ্গে দেওয়া ও অমানুষিক প্রহার করা, এসব নির্যাতনের অন্যতম।  বহু মানবাধিকার সংগঠন এসবের তীব্র নিন্দা করেছে, পশ্চিমা সরকারগুলি এ নির্বাচন সম্বন্ধে বলেছে যে তা স্বাধীন ও নিরপেক্ষ হয় নি। বিরোধীরা জনগণের নির্বাচন বর্জনের যে ডাক দেয়, তা সফল হয়, বিএনপির মতে, ৫-১০% ভোটারের উপস্থিতি ছিল, যদিও সরকার থেকে বলা হয়েছে ৪০%, এবং এই ঘোষণার ১ ঘণ্টা আগে বলা হয়েছিল ২৮%। বর্তমান দমন নীতির আগে এই সরকার গত ১৫ বছরে বিএনপির ১,৫০০ নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে, ৬০০কে গুম করেছে, যাদের প্রায় সবকে হত্যা করা হয়েছে, ১০০,০০০কে জেলে দেওয়া হয়েছে এবং ৫০ লক্ষ নেতাকর্মীর উপর চাপানো হয়েছে মিথ্যা মামলা।
বাংলাদেশে আজ নেমে এসেছে এক ভয়াবহ বিপর্যয়। প্রকৃতপক্ষে ২০০৯ সালে হাসিনার ক্ষমতায় বসা থেকে বর্তমানের এ বিপর্যয়ের শুরু। গত ১৫ বছরে দেশের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। হত্যা, নির্যাতন, নিপীড়ন, নিষ্পেষণের এক বিভীষিকার দুঃশাসন চালিয়ে যাচ্ছে চরম ফ্যাসিবাদী অনির্বাচিত এই হাসিনা সরকার। তারা ভারতের কাছে তুলে দিয়েছে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ। আওয়ামী লীগ ও ভারত মিলে বাংলাদেশের উপর চালিয়েছে সীমাহীন লুণ্ঠন। এই লুণ্ঠনে দেশের অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়েছে। অন্যদিকে, দেশে চলছে ভয়াবহ দুঃশাসন। সেনাবাহিনী, প্রশাসন, বিচার বিভাগ সব কিছুকেই সরকারের হুকুমের দাস বানানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, পুরো দেশ ও তার শাসনব্যবস্থাকে ভারতের হুকুমের দাস বানানো হয়েছে। বাংলাদেশকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বা অধিকৃত রাজ্য বানানোর জন্য ভারত ও তার তাঁবেদার হাসিনা সরকার কাজ করে চলেছে, বদলে হাসিনা সরকার পাচ্ছে হাজার হাজার কোটি লুণ্ঠিত অর্থ। বছরে দেশ থেকে পাচার হচ্ছে লক্ষ কোটি টাকা।
২০০৯ থেকে হাসিনার শাসন আমলে, ভারত হাসিনার সাহায্যে তিনটি হত্যাকাণ্ড চালিয়াছেঃ (১) বিডিআর হত্যাকাণ্ড যার লক্ষ্য ছিল সীমান্ত ভারতের দখলে নেওয়া ও সেনাবাহিনীর উপর তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা, তাদের সে দুটি উদ্দেশ্যই সফল হয়েছে; (২) জামায়াতের উপর হত্যাকাণ্ড, যার উদ্দেশ্য ইসলামী শক্তিকে ধ্বংস করা, তা তারা করতে পেরেছে; এবং (৩) হেফাজতের উপর হত্যাকাণ্ড, এরও উদ্দেশ্য ইসলামী শক্তিকে ধ্বংস করা, এতেও তারা সফল হয়েছে। ভারত সব সময়ই বাংলাদেশে তিনটি বিষয়ে আক্রমণ চালিয়েছেঃ ইসলামের উপর, জাতীয়তাবাদী শক্তির উপর এবং সেনা বাহিনীর উপর। ভারত হাসিনার সাহায্যে এসবে অত্যন্ত সফল হয়েছে। অনেকে বলেন, হাসিনা সরকারের সিদ্ধান্ত আসে ভারতীয় দূতাবাস থেকে, এমনকি কে কোন পদে নিয়োগ পাবেন তা পর্যন্ত। ভারত বাংলাদেশে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালিয়েছে।
ভারত যদি একবার বাংলাদেশ দখল করতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের মুসলমানগণ হারাবেন তাদের বাড়িঘর, জমিজমা, সহায় সম্পদ, শিল্প কারখানা, ব্যবসা বাণিজ্য, চাকরি শিক্ষা, ইত্যাদি। সবই দখল করবে ভারতীয়গণ। মুসলমানরা হবেন গ্রামের ভূমিহীন কৃষক ও সহরের বস্তিবাসী শ্রমিক, ভারতীয়দের কাছে পরাধীন, এমন কি ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের মত গণহত্যাও নেমে আসতে পারে। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের পর বাংলার মুসলমানদের সেই অবস্থাই হয়েছিল। অথচ এর আগে নবাব শাসিত সুবাহ বাংলা ছিল বিশ্বের ধনীতম, অথবা অন্যতম ধনীতম দেশ।
রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে আজ ৩৫ লক্ষ ভারতীয়রা কাজ করছে, যদের ভিতর প্রায় সব বেআইনি, তারা ভারতে যে টাকা প্রেরণ করে তা ভারতের প্রেরণ অর্থের ৩য় উচ্চতম, বছরে ১০ বিলিয়ন ডলার। তারা বাংলাদেশে অসম বাণিজ্য করে।  সীমান্ত পাচারের মাধ্যমে, যেমন ফেন্সিডিল পাচারের মাধ্যমে, বাংলাদেশের বিশাল ক্ষতি করে। ফারাক্কা ও অন্যান্য বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশের বহু নদী শুকিয়ে কৃষিতে বিশাল ক্ষতি সাধন করেছে, তারা বন্দর নদী রাস্তা তাদের ইচ্ছামত ব্যবহার করছে, এক কথায়, তারা বাংলাদেশকে তাদের উপনিবেশের মত ব্যবহার করছে, আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে।
আজ তাই জেগে উঠতে হবে, সংগঠিত হতে হবে, দেশ রক্ষা করতে হবে। বাংলাদেশের সংগ্রামের ইতিহাস আছে। ইতিহাস আছে ১৯৫২, ১৯৫৪, ১৯৬৯-এর মহান গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১-এর মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম, ১৫ আগস্ট ও ৭ নভেম্বর ১৯৭৫-এর গৌরবময় সেনা-জনতার অভ্যুত্থান, ১৯৯০-এর মহান গণঅভ্যুত্থান, ইত্যাদির। সংগ্রামের মাধ্যমেই আমরা ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও হাসিনার ফ্যাসিবাদকে পরাভূত করে একটি দেশপ্রেমিক ও গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করবো।
আসুন, আজ আমরা ঐক্যবদ্ধ হই ও সংঘবদ্ধ হই। সারা দেশে ছড়িয়ে দেই সংগ্রামের ঢেউ। আমরা প্রতিরোধ করি ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও হাসিনার ফ্যাসিবাদ। ভারতীয় পণ্য বর্জন করুন, বাংলাদেশে ভারতীয় স্বার্থ প্রতিরোধ করুন! ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারকে প্রতিরোধ করুন!