ব্রিটেনে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের ৩ কোম্পানি দেউলিয়া হওয়ার পথে

logo

নয়া দিগন্ত অনলাইন
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান |সংগৃহীত

ব্রিটেনে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর তিনটি আবাসিক সম্পত্তি কোম্পানির দায়িত্ব গ্রহণ করেছে আর্থিক সংস্থা গ্রান্ট থর্নটনের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। গত ২৯ জুলাই প্রতিষ্ঠানটিকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

শুক্রবার (৯ আগস্ট) যুক্তরাজ্যভিত্তিক গণমাধ্যম নোয়াহ নিউজ ও বিসনাউ নিউজের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

কোম্পানি তিনটি হলো জেডটিএস প্রপার্টিজ লিমিটেড, রুখমিলা প্রপার্টিজ লিমিটেড এবং নিউ ভেঞ্চারস (লন্ডন) লিমিটেড। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এই তিন প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১৪২ মিলিয়ন পাউন্ড, যার মধ্যে জেডটিএস এককভাবে প্রায় ৭৭ মিলিয়ন পাউন্ডের মালিক। অন্যদিকে, বিভিন্ন ঋণদাতার কাছে তাদের মোট প্রায় ৭৮ মিলিয়ন পাউন্ড পাওনা রয়েছে।

সিঙ্গাপুরের ব্যাংক ডিবিএস-এর কাছে জেডটিএস মালিকানাধীন একাধিক সম্পত্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে। গ্রুপটির ঋণ সাধারণত লন্ডনের ফ্ল্যাটের বিপরীতে সুরক্ষিত। এই কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সাথে সংশ্লিষ্ট বৃহত্তর এক ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর অংশ। বিদেশে সম্পত্তি কেনার জন্য ব্যবহৃত অর্থের উৎস নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের তালিকাভুক্ত অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে তিনি একজন। ২০২৪ সালে আল জাজিরার এক অনুসন্ধানে অভিযোগ করা হয়, তিনি লন্ডন, দুবাই ও নিউইয়র্কে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি সম্পত্তি অর্জন করেছেন। যুক্তরাজ্যের জাতীয় অপরাধ সংস্থা (এনসিএ) তার সাথে সম্পর্কিত সম্পত্তি জব্দের আদেশ পেয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১৭০ মিলিয়ন পাউন্ড।

পাবলিক কোম্পানির রেকর্ড অনুযায়ী, কোম্পানিজ হাউসে জমা দেয়া নথিতে দেউলিয়া কার্যক্রম, রিসিভার ও ম্যানেজার নিয়োগ এবং জেডটিএস ও রুখমিলার নিবন্ধিত চার্জের তথ্য রয়েছে। নিউ ভেঞ্চারস (লন্ডন) লিমিটেডের বাণিজ্যিক প্রোফাইলে ব্যবসার উদ্দেশ্য, পরিচালকের নাম এবং চার্জ ইতিহাস উল্লেখ আছে।

গ্র্যান্ট থর্নটনের এই পদক্ষেপ একই গোষ্ঠীর অন্যান্য কোম্পানির পূর্ববর্তী প্রশাসনের ধারাবাহিকতা। আগে প্রায় ২৯ মিলিয়ন পাউন্ড সম্পদবিশিষ্ট তিনটি সম্পর্কিত সংস্থা প্রশাসনে গিয়েছিল। সেসব সম্পত্তি বিক্রির প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। প্রশাসনের প্রথম দফার প্রতিবেদনে গ্র্যান্ট থর্নটন জানিয়েছিল, তারা এনসিএর আদেশ মেনে চলছে এবং বিক্রয় আয় অনুমোদিত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো মধ্যে বিতরণ করা হবে না। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক চৌধুরীর কাছ থেকে প্রায় ২৬০ মিলিয়ন পাউন্ড পাওনা দাবি করেছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও আন্তঃসীমান্ত তদন্ত চলমান থাকায় একটি উল্লেখযোগ্য আবাসিক সম্পত্তি পোর্টফোলিও দেউলিয়া প্রক্রিয়ার অধীনে বাজারে আনা হতে পারে। নিবন্ধিত চার্জধারী ঋণদাতারা, যেমন ডিবিএস, পৃথক ফ্ল্যাটের নিরাপত্তা জোরদার করবে। আর এনসিএর জব্দ আদেশ নির্ধারণ করবে কোন সম্পদ বিক্রি হতে পারবে এবং অর্থ কিভাবে ব্যবস্থাপিত হবে।

পরবর্তী ধাপে দেউলিয়া প্রশাসকরা ধীরে ধীরে সম্পত্তি নিষ্পত্তি করবেন, ঋণদাতা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাথে সমন্বয় করে। ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যে চলমান তদন্ত, মালিকানা বিতর্ক এবং নিয়ন্ত্রক বিধিনিষেধ বিবেচনা করতে হবে। আপাতত প্রশাসকদের লক্ষ্য থাকবে এনসিএর নির্দেশ মেনে ঋণদাতাদের জন্য সর্বোচ্চ পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করা। আর অভিযুক্ত দুর্নীতি ও তহবিলের উৎস সম্পর্কিত অভিযোগগুলোর নিষ্পত্তি হবে চলমান তদন্ত ও সম্ভাব্য আদালতের রায়ের মাধ্যমে।

সূত্র : বিসনাউ ও নোয়াহ নিউজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here