The Daily Star

সর্বশেষ আপডেট: রোববার মার্চ ২৩, ২০২৫ ০৭:৪৯ অপরাহ্ন

বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নতুন আমানত সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি করেছে, যার মাধ্যমে কোনো ব্যাংক অবসায়নের মাধ্যমে গেলে প্রতি আমানতকারীকে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা করে পরিশোধ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই সীমা প্রতি তিন বছর পর পর পর্যালোচনা করা হবে।
জনমত গ্রহণের জন্য উন্মুক্ত এই খসড়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অধীনে একটি আমানত সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রিমিয়ামের মাধ্যমে পরিচালিত একটি পৃথক তহবিল তদারকি করবে।
এছাড়া, সুরক্ষা সীমা অতিক্রম করা আমানতকারীদের অতিরিক্ত অর্থের দাবি লিকুইডেটরের মাধ্যমে করতে হবে।
অধ্যাদেশে নিরাপদ আমানতের জন্য সাত দিনের মধ্যে পরিশোধের সময়সীমা এবং তহবিলের আয়কর ছাড়ের বিষয়টিও স্পষ্ট করা হয়েছে। প্রিমিয়াম সময়মতো পরিশোধ না করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে।
এর আগে, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর আমানতকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অধ্যাদেশ আনার বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
অধ্যাদেশটি ব্যাংক আমানত বীমা আইন-২০০০-এর স্থলাভিষিক্ত হবে, যেখানে সর্বোচ্চ পরিশোধের সীমা ছিল ১ লাখ টাকা।
নতুন খসড়া অধ্যাদেশ অনুসারে, সরকার এটি বাস্তবায়নের জন্য একটি আমানত সুরক্ষা ব্যবস্থা গঠন করবে, যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক আমানত সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, ‘কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মিত দায়িত্ব যেমন রেগুলেটরি, সুপারভাইজরি ও রেজুলেশন সম্পর্কিত কার্যক্রম থেকে আলাদা ও স্বাধীন হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার ক্ষমতা ও দায়িত্ব কার্যকরভাবে পরিচালনার জন্য সংগঠনের কাঠামোর মধ্যে একটি আলাদা বিভাগ গঠন করবে, যা ‘ডিপোজিট প্রোটেকশন ডিভিশন’ নামে পরিচিত হবে।
আমানত সুরক্ষা ব্যবস্থার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সাত সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ, যার চেয়ারম্যান হবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।
পর্ষদ প্রতি তিন বছর অন্তর কমপক্ষে একবার সুরক্ষিত আমানতের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করবে এবং বিধিবিধান, বিনিয়োগ নীতি এবং ঝুঁকি নির্ভর প্রিমিয়াম হারের তদারকি করবে।
এটি ব্যাংক সংকট মোকাবিলায় সহায়তার জন্যও তহবিল বরাদ্দ করবে।
আমানত সুরক্ষা তহবিল
অধ্যাদেশের আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি আমানত সুরক্ষা তহবিল প্রতিষ্ঠা করবে, যা একটি পৃথক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পরিচালিত হবে।
তহবিলটি গঠিত হবে ব্যাংকগুলোর থেকে প্রাপ্ত প্রাথমিক, বার্ষিক ঝুঁকিভিত্তিক এবং বিশেষ প্রিমিয়াম, সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সংগৃহীত জরিমানা, বিনিয়োগ থেকে অর্জিত মুনাফা, অবসায়িত ব্যাংক থেকে সমন্বিত তহবিল এবং অন্য যেকোনো শর্তহীন তহবিল থেকে।
প্রাথমিকভাবে, তহবিলটি ব্যাংকটির বিলুপ্তির ক্ষেত্রে সুরক্ষিত আমানত পরিশোধ করতে ব্যবহৃত হবে, তবে এটি ব্যাংক সংকট সমাধানে আর্থিক সহায়তাও প্রদান করতে পারে।
তহবিলের ঘাটতির ক্ষেত্রে, বাংলাদেশ ব্যাংক সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বিশেষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ, সরকার বা অন্যান্য উৎস থেকে নিঃশর্ত আর্থিক সহায়তা চাওয়া, অথবা সরকারি ঋণ নিশ্চিত করার ক্ষমতা পাবে।
এছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংক, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানতকারীদের জন্য একটি পৃথক তহবিল গঠন করবে।
খসড়া অধ্যাদেশে আরও বলা হয়েছে আয়কর আইন, ২০২৩, ব্যবসায়িক মুনাফা আইন, ১৯৪৭, বা অন্য কোনো বিদ্যমান কর আইন নির্বিশেষে, আমানত সুরক্ষা তহবিলের আয়, মুনাফা বা প্রাপ্তির ওপর কোনো আয়কর, অতিরিক্ত কর বা ব্যবসায়িক মুনাফা কর প্রযোজ্য হবে না।
এছাড়া যদি কোনো সদস্য প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে নির্ধারিত প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিষ্ঠানের চলতি অ্যাকাউন্ট থেকে সংশ্লিষ্ট পরিমাণ অর্থ কেটে আমানত সুরক্ষা তহবিলের সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টে জমা করবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিলম্বিত প্রিমিয়ামের ওপর জরিমানা আরোপ করতে পারে, যা বাংলাদেশের সরকারি ট্রেজারি বন্ড বা ট্রেজারি বিলের মধ্যে যে হার সর্বোচ্চ, সেই হার অনুযায়ী সুদ প্রযোজ্য হবে।