ঢাকা
ডিসেম্বর মাসে ব্যাংকে আমানত যতটা বেড়েছে, ঋণ বেড়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি। এতে তারল্যঘাটতিতে পড়ে অনেক ব্যাংক চড়া সুদে টাকা ধার করছে।
উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও কম সুদহারের কারণে মানুষ ব্যাংকে টাকা জমা রাখা কমিয়ে দিয়েছেন। অন্যদিকে ডলারের দাম ও বিভিন্ন খাতে খরচ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া বেড়ে গেছে। এ কারণে গত ডিসেম্বরে ব্যাংক খাতে আমানতের তুলনায় ঋণে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ শতাংশের বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, ডিসেম্বরে ব্যাংকব্যবস্থায় আমানত বেড়েছে মাত্র ২ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। একই মাসে ব্যাংকঋণ বেড়েছে ২২ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত বছরের শেষ মাসে ব্যাংক খাতে আমানতের তুলনায় ঋণে প্রবৃদ্ধি বেশি হওয়ায় অনেক ব্যাংক তারল্যসংকটে পড়েছে। এ কারণে বেশ কয়েকটি ব্যাংককে উচ্চ সুদে টাকা ধার করতে হয়।
ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংকের আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ আমানতের সুদহার এখন মূল্যস্ফীতির হারের চেয়ে কম। অন্যদিকে ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহারও বাড়াতে পারছে না। কারণ, বেশির ভাগ ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ নির্দিষ্ট করে রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে আমানত বাড়াতে না পেরে তহবিল–সংকটে পড়ে কোনো কোনো ব্যাংক ৯ শতাংশের বেশি সুদেও অন্য ব্যাংক থেকে টাকা ধার করছে।
জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক এমডি মোহাম্মদ শামস উল ইসলাম বলেন, জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেকে সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন, নতুন সঞ্চয়ও কমে গেছে। এ কারণে আমানতের চেয়ে ঋণ বাড়ছে। তবে ডিসেম্বরে ঋণ বেশি বেড়ে গেছে, কারণ ওই মাসে সুদ যুক্ত হয়। এদিকে ব্যাংক খাতে চলমান তারল্যসংকট সমাধানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তা ব্যাংকগুলোর সংকট মেটাতে বড় ভূমিকা রাখবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ শামস উল ইসলাম বলেন, ‘ঋণের সুদহার একেবারে তুলে না দিয়ে ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে। সুদহার একসঙ্গে তুলে দিলে কোনো কোনো ব্যাংক আমানতে সুদ কম দিয়ে বেশি মুনাফা করবে, আবার কেউ বেশি সুদে আমানত টানবে। এতে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।’
ব্যাংক থেকে ঋণ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্যবৃদ্ধিকেও দায়ী করছেন কেউ কেউ। আগে প্রতি ডলারের বিপরীতে ব্যবসায়ীদের খরচ হতো ৮৫ টাকা, এখন খরচ হচ্ছে ১০৫ টাকা। ফলে ব্যবসায়ীদের পণ্য আমদানি করতে আগের তুলনায় বেশি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে, অর্থাৎ ঋণ বেড়ে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত নভেম্বরে ব্যাংক আমানত ছিল ১৪ লাখ ৮৬ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে তা বেড়ে হয়েছে ১৪ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা। ফলে ডিসেম্বরে ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছে ২ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। নভেম্বরে আমানত কমে গিয়েছিল ৩ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। গত অক্টোবরে ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ ৯০ হাজার ৪৩ কোটি টাকা।
এদিকে গত ডিসেম্বরে আমানত ২ হাজার ২৮১ কোটি টাকা বাড়লেও ব্যাংকগুলোর দেওয়া ঋণ বেড়েছে ২২ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। গত নভেম্বরে ব্যাংকঋণের পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ ১৮ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা, ডিসেম্বরে তা বেড়ে হয় ১৪ লাখ ৪১ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা। আর অক্টোবরে ব্যাংকঋণ ছিল ১৪ লাখ ৩৪৫ কোটি টাকা। ফলে নভেম্বরে ঋণ বেড়েছিল ১৭ হাজার ৯২১ কোটি টাকা।