১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে জিয়াউর রহমান ছিলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একজন মেজর। সে রাতে চট্টগ্রাম বন্দরে অস্ত্র খালাসরত পাকিস্তানি এক জেনারেলের কাছে তাঁকে পাঠানো হচ্ছিল। পরিকল্পনা ছিল তাঁকে ‘গ্রেপ্তার বা হত্যা’ করার (গোলাম মুরশিদ, মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর: একটি নির্দলীয় ইতিহাস)। পথিমধ্যে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের সংবাদ শোনামাত্র বিদ্রোহের সিদ্ধান্ত নেন। চট্টগ্রাম সেনানিবাসে ফিরে এসে তাঁর কমান্ডিং অফিসারসহ অন্যান্য পাকিস্তানি অফিসার ও সৈন্যকে বন্দী করেন। পরদিন তিনি প্রাণভয়ে পলায়নপর মানুষকে থামিয়ে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার উদ্দীপনাময় ভাষণ দিতে শুরু করেন (বেলাল মোহাম্মদ, স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র)। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তিনি বেতারে নিজ কণ্ঠে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
জিয়ার এই রূপান্তর বা উত্থান বিস্ময়কর হতে পারে, কিন্তু তা আকস্মিক ছিল না। বরং বাংলাদেশের মানুষের বঞ্চনা, স্বাধীনতার স্বপ্ন, সর্বোপরি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ একজন সৈনিককেও কীভাবে উদ্দীপিত করেছিল, এটি ছিল তারই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত (জিয়াউর রহমান, ‘একটি জাতির জন্ম’)।
জিয়া ছিলেন স্বাধীনতাযুদ্ধের একজন অগ্রগণ্য সেনানায়ক। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ১১ জন সেক্টর কমান্ডারের একজন ছিলেন। ৪৯ জন যুদ্ধফেরত মুক্তিযোদ্ধাকে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু সরকার সর্বোচ্চ বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করে। তিনি তাঁদের একজন ছিলেন। কিন্তু তিনি সেক্টর কমান্ডার ও বীর উত্তম খেতাবধারীদের মধ্যেও অনন্য ছিলেন স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে। ২৭ মার্চ এই ঘোষণা ‘মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের’ পক্ষে তিনি প্রদান করেন কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে।
এরপর জিয়া চট্টগ্রাম যুদ্ধাঞ্চল, ১১ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক এবং পরে জেড ফোর্সের প্রধান হিসেবে বহু আলোচিত যুদ্ধের নেতৃত্ব প্রদান করেন। যুদ্ধের শেষ ভাগে সিলেট অঞ্চলে তাঁর বাহিনীর কাছেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। তিনি সেক্টর কমান্ডার আবু তাহের, এম এ জলিল বা খালেদ মোশাররফের মতো সম্মুখসমরের অসীম সাহসী যোদ্ধা ছিলেন না। সমশের মবিন চৌধুরী ও হাফিজ উদ্দিনের মতো তাঁর নিজস্ব বাহিনীর অফিসারদের মতো তিনি যুদ্ধ করতে গিয়ে আহতও হননি। কিন্তু ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী যুদ্ধে তাঁর বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও কার্যক্রম শক্তিশালী প্রভাবকের ভূমিকা রেখেছে, কিছু ক্ষেত্রে তাঁকে অনন্য উচ্চতায় আসীন করেছে।
জিয়াউর রহমানের সবচেয়ে আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল স্বাধীনতার ঘোষণা। তাঁর আগে মাওলানা ভাসানী স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, ছাত্রনেতারা স্বাধীন বাংলাদেশের স্লোগান দিয়েছিলেন এবং বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। একাত্তরের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতাসংগ্রামের ডাক দিয়েছিলেন, এ জন্য সবাইকে প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এমনকি ২৫ মার্চ কালরাতের পর জিয়ার আগেই চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতা এম এ হান্নান বেতারে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু তারপরও বিভিন্ন কারণে জিয়াউর রহমানের ঘোষণার তাৎপর্য ছিল অন্য রকম।
প্রথমত, শক্তিশালী সম্প্রচারকেন্দ্রে বারবার সম্প্রচারিত হওয়ার ফলে জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণাটিই কেবল দেশের সব অঞ্চল থেকে বহু মানুষ শুনতে পেয়েছিল। পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বর আক্রমণের মুখে দিশেহারা ও পলায়নপর অবস্থায় এটি মানুষের কাছে পরম ভরসার বাণী হয়ে ওঠে। দ্বিতীয়ত, জিয়ার ঘোষণাটি ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একজন বিদ্রোহী বাঙালি অফিসারের এবং বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে। এটি মানুষকে প্রতিরোধের সম্ভাবনা সম্পর্কে প্রবলভাবে আশান্বিতও করেছিল।
মুক্তিবাহিনীর উপপ্রধান এ কে খন্দকার ২০০২ সালে এক স্মৃতিচারণায় বলেন, ‘যুদ্ধের সময় সামরিক বাহিনীর একজন বাঙালি মেজরের কথা শোনা সম্পূর্ণ অন্য ব্যাপার। আমি নিজে জানি, যুদ্ধের সময় জানি, যুদ্ধের পরবর্তী সময়েও জানি যে মেজর জিয়ার এই ঘোষণাটি পড়ার ফলে সারা দেশের ভেতরে এবং সীমান্তে যত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তাঁদের মধ্যে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সাংঘাতিক একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করল যে হ্যাঁ, এইবার বাংলাদেশ একটা যুদ্ধে নামল।’ (এ কে খন্দকার, মঈদুল হাসান ও এস আর মীর্জা, মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর: কথোপকথন)। জিয়ার ঘোষণায় উৎসাহিত বা উদ্দীপিত হয়েছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ এবং ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম (মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি), এইচ টি ইমাম (বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১), অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের (আমার একাত্তর) মতো আরও বহু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিও। তাঁর ঘোষণার গুরুত্বের উল্লেখ আছে মুক্তিযুদ্ধকালে ভারতের সক্রিয় কূটনীতিক জে এন দীক্ষিতসহ ট্রেভর ফিসলক, ডেভিড লুডেনের মতো বহু আন্তর্জাতিক ব্যক্তির ভাষ্যে (মাহফুজ উল্লাহ, প্রেসিডেন্ট জিয়া অব বাংলাদেশ)।
তবে মনে রাখতে হবে, জিয়ার ঘোষণাটির অতুলনীয় প্রভাব পড়ে বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে এটি দেওয়া হয়েছিল বলে। মুক্তিযুদ্ধের গবেষক মঈদুল হাসান লিখেছেন, ‘মেজর জিয়া তাঁর প্রথম বেতার বক্তৃতায় (২৭ মার্চ সন্ধ্যা) নিজেকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ঘোষণা করলেও পরদিন স্থানীয় নেতাদের পরামর্শক্রমে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার কথা প্রকাশ করেন। এই সব ঘোষণা লোকের মুখে মুখে বিদ্যুতের মতো ছড়িয়ে পড়ে, শেখ মুজিবের নির্দেশে সশস্ত্র বাহিনীর বাঙালিরা স্বাধীনতার পক্ষে লড়াই শুরু করেছে।’ (মূলধারা ’৭১)
১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরু করার জন্য পাকিস্তানি বাহিনীর বাঙালি অফিসারদের কাছে কোনো সুস্পষ্ট বা সরাসরি নির্দেশ ছিল না। কিন্তু ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী নেতা বঙ্গবন্ধুর কাছে পাকিস্তানের শাসনভার প্রদানে অনীহার ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁরা সচেতন ছিলেন। পাকিস্তানি বাহিনীতে তাঁদের প্রতি বৈষম্য ও বঞ্চনা নিয়েও প্রচণ্ড ক্ষোভ ছিল (রফিকুল ইসলাম, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে)। এ কারণে তাঁদের অনেকেই ২৫ মার্চে পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরোচিত গণহত্যার সংবাদ শোনামাত্র বিদ্রোহ করেন। বাঙালি সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের মধ্যে জিয়া বিদ্রোহ করেন সবার আগে (মুরশিদ, পূর্বোক্ত)। ২৮ মার্চের মধ্যে বিদ্রোহ করেন সেক্টর কমান্ডারদের প্রায় সবাই। কিন্তু তাঁদের বিক্ষিপ্ত বিদ্রোহকে সমন্বিত, সুশৃঙ্খল ও কার্যকর করার প্রয়োজনীয়তা এবং এটিকে পরিপূর্ণ একটি স্বাধীনতাযুদ্ধে পরিণত করার ব্যাপারে জিয়াসহ প্রত্যেকে সচেতন ছিলেন। যুদ্ধের সময়ে বিভিন্ন ঘটনায় তাঁদের এই অসাধারণ প্রজ্ঞা, দায়িত্ববোধ ও রণকৌশলের পরিচয় পাওয়া। এবং এখানেও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে আমরা জিয়াকে অনন্য বা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে দেখি।
প্রথমত, ৩ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে দেখা করার ঠিক পরদিন জিয়াউর রহমান, খালেদ মোশাররফ, কে এম সফি উল্লাহসহ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের বিদ্রোহী ইউনিটগুলোর কমান্ডাররা তেলিয়াপাড়া চা-বাগানে বৈঠক করেন। সেখানে তাঁরা ভারতের সামরিক সাহায্য এবং দেশের রাজনীতিবিদদের নিয়ে স্বাধীন সরকার গঠনের আবশ্যকতা প্রশ্নে একমত হন, বিদ্রোহী ইউনিটগুলো নিয়ে সম্মিলিত মুক্তিফৌজ গঠন করেন এবং এম এ জি ওসমানীকে মুক্তিবাহিনীর প্রধান হিসেবে স্থির করেন। ৪ এপ্রিলের এই বৈঠকই ছিল বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর প্রথম সাংগঠনিক ভিত্তি।
দ্বিতীয়ত, যুদ্ধ সরঞ্জামের অভাব, কেন্দ্রীয় কমান্ডের নিষ্ক্রিয়তা এবং কূটনৈতিক স্বীকৃতি দানে ভারতের বিলম্বের কারণে একাত্তরের মে থেকে জুলাই মাসের প্রথম ভাগ পর্যন্ত হতোদ্যম পরিস্থিতিতে যুদ্ধাঞ্চলের অধিনায়কদের এক সম্মেলনে জিয়াই নতুন চিন্তা নিয়ে আসেন। ১০ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত মুক্তিবাহিনী সদর দপ্তরে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে এটি অনুষ্ঠিত হয়। এর সূচনায় মুক্তিযুদ্ধের অধোগতি রোধ ও যৌথ কমান্ড-ব্যবস্থায় যুদ্ধ পরিচালনার জন্য যুদ্ধ কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব দেন জিয়া। তাঁর এই প্রস্তাবে একজন বাদে বাকি সব সেক্টর কমান্ডারের সম্মতি ছিল। মন্ত্রিসভার সমর্থন থাকলে এটি যুক্তিসংগত বলে মেনে নিতে পারতেন তাজউদ্দীন। তাতে যুদ্ধ আরও গতিশীল হতে পারত (এ কে খন্দকার, মঈদুল হাসান ও এস আর মীর্জা, মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর: কথোপকথন)। তবে সেই সম্মেলনে গেরিলাযুদ্ধের পাশাপাশি সম্মুখসমর, মুক্তাঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং ভবিষ্যৎ সেনাবাহিনী গঠনের প্রস্তুতি হিসেবে ব্রিগেড গঠনের যে সিদ্ধান্ত হয়, তা রূপায়ণের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকেই।
তৃতীয়ত, জুলাই মাসের এই সম্মেলনে জিয়ার নেতৃত্বাধীন ব্রিগেড গঠনের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে নেওয়া হলেও পরে কর্নেল ওসমানীর একক সিদ্ধান্তে আরও দুটি ফোর্স গঠিত হয় (এ কে খন্দকার, পূর্বোক্ত)। জেড ফোর্স নামে পরিচিত জিয়ার ব্রিগেড একাত্তরে দ্রুত কাজ শুরু করে। ঢাকামুখী অভিযানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পাকিস্তানি বাহিনীর কামালপুর ঘাঁটিতে তারা ৩১ জুলাই থেকে ১০ আগস্ট কয়েক দফা হামলা চালায়। ১ আগস্ট জেড ফোর্স বাহাদুরবাদ এবং ৩ আগস্ট শেরপুরে নকশি বিওপিতে আক্রমণ করে। এসব দুঃসাহসিক সম্মুখসমরে অনেক পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। কামালপুর যুদ্ধে অনেক মুক্তিযোদ্ধাও শহীদ হন। জিয়াকে এ জন্য কিছু সমালোচনাও মেনে নিতে হয়। কিন্তু এসব যুদ্ধ মুক্তিবাহিনীর সামর্থ্য ও সাহসিকতা সম্পর্কে নতুন উপলব্ধির জন্ম দেয়।
চতুর্থত, মুক্তিযুদ্ধের শেষ ভাগে জিয়াকে আমরা দেখতে পাই সুনির্দিষ্ট অঞ্চলে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর আক্রমণাত্মক যুদ্ধের অধিনায়ক হিসেবে। একাত্তরের অক্টোবরে যৌথ সামরিক নেতৃত্ব গঠনের পর যুদ্ধের নীতিনির্ধারণের দায়িত্ব চলে যায় ভারতের জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাদের কাছে। নভেম্বরে ভারতীয় বাহিনী নিজ দেশের সীমান্তে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় বাংলাদেশের সেক্টর ও ফোর্সগুলো আরও মুহুর্মুহু আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
ওসমানীর নিদের্শ অক্টোবর মাসে পুরো জেড ফোর্স নিয়ে মেজর জিয়া চলে আসেন সিলেটে। এর তিনটি ব্যাটালিয়ন শ্রীমঙ্গল, ছাতক ও কুলাউড়ায় অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনা ও ক্যাম্পে সরাসরি হামলা চালায়। ১০ ডিসেম্বর এই ফোর্স সিলেট আক্রমণ শুরু করে। ১৪ তারিখ তারা সিলেটে প্রবেশ করে। যে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে তিনি একদিন বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন, সিলেটে ১২৫ জন অফিসার, ৭০০ সৈন্যসহ সেই বাহিনীর একটি অংশ তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের অবদান ছিল অপরিসীম। স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করা ছাড়াও যুদ্ধ পরিচালনা ও যুদ্ধ প্রশাসনের নীতিনির্ধারণে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন মুক্তিযুদ্ধের সময়। জিয়া ছিলেন এই যুদ্ধে মহানায়কের মতো। আরও ছিলেন খালেদ মোশাররফ, আবু তাহের, আবু ওসমান, এম এ জলিল, রফিকুল ইসলামসহ অন্যান্য সেক্টর কমান্ডার। মুক্তিযুদ্ধ সর্বোপরি ছিল একটি জনযুদ্ধ, বহু সাধারণ মানুষের অসাধারণ আত্মত্যাগ আর শৌর্য–বীর্যের এক অনুপম গৌরবগাথা।
বাংলাদেশের এই বীর সন্তানেরা ছিলেন অত্যুজ্জ্বল এক নক্ষত্রমণ্ডলীর মতো। সে নক্ষত্রমণ্ডলীর সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন বঙ্গবন্ধুই। কিন্তু তাই বলে অন্য কোনো নক্ষত্রের আলোও ম্লান হতে পারে না, অন্য কোনো নক্ষত্রও মুছে যেতে পারে না।
জিয়া আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের এমনই এক অবিনশ্বর নক্ষত্র। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে শুধু জিয়া নন, আরও অনেকের কিছু কর্মকাণ্ড নিয়ে পক্ষে–বিপক্ষে নানা আলোচনা রয়েছে। কিন্তু সেটি তাঁদের একাত্তরের ভূমিকাকে ম্লান করতে পারে না।
আসিফ নজরুল*: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়